ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৬/০৬/২০২৩ ৯:২৯ এএম

জাকারিয়া আলফাজ, টেকনাফ (কক্সবাজার)
কক্সবাজারের টেকনাফে হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা এলাকার দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রকে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। গত রবিবার বিকেলে ৮ বছর বয়সী শিশুটিকে অপহরণের পর এরই মধ্যে পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে অপহরণকারী চক্র। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

এই শিশু ছাড়াও গত ৮ মাসে টেকনাফে ৭০ জনকে অপহরণ করেছে সন্ত্রাসীরা।

সন্ত্রাসীদের এমন বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে টেকনাফের সর্বত্র এখন অপহরণ আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব অপহরণের কাণ্ডের পেছনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একাধিক দুষ্কৃতিকারী দল সক্রিয় রয়েছে। তাদের সঙ্গে স্থানীয় একটি চক্রের সংযোগ রয়েছে। মুক্তিপণ পাওয়া না গেলেও অপহৃতদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না।

অপহরণের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলার হ্নীলা, হোয়াইক্যং, বাহারছড়া ও সদর ইউনিয়নের একাংশ। স্থানীয়, রোহিঙ্গা, শিশু, বৃদ্ধ, কৃষক কেউ বাদ পড়ছে না অপহরণের কবল থেকে। অপহরণ পরবর্তী অনেকে অপহরণকারীদের মুক্তিপণ দিয়ে তাদের স্বজনদের ছাড়িয়ে নিয়েছে, অনেকে মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হয়ে প্রাণ দিয়েছে, ব্যতিক্রম দুয়েকটি ঘটনায় পুলিশের ধাওয়ায় অপহৃতদের ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে। তবে প্রতিনিয়ত অপহরণের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তেমন সন্তুষ্ট নয়।

এ ক্ষেত্রে অবশ্য পুলিশের বক্তব্য ভিন্ন।
টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, বেশির ভাগ অপহরণের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো ধরনের অভিযোগ করা হয় না। যেসব ঘটনায় অভিযোগ করা হয়, আমরা তাৎক্ষণিক উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে থাকি। এ ক্ষেত্রে পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করে। কয়েকটি অপহরণের ঘটনায় পুলিশের অভিযানে অপহরণকারীরা উপায়ান্তর না দেখে অপহৃতদের রেখে পালিয়ে গেছে।

এ সব ঘটনায় আমরা অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অপহরণকারীদের মূল আস্তানা পাহাড়ে। এ সব পাহাড়ের নিয়ন্ত্রণ অনেকটা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে তাদের আস্তানা থেকে পরিচালনা করছে এ সব অপহরণ কর্মকাণ্ড। এ ক্ষেত্রে তারা নিজেদের টার্গেট করা ব্যক্তি বা অন্য যে কাউকে সুযোগ পেলে অস্ত্র ধরে পাহাড়ের গহিনে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে পরিবারের ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করে মুক্তিপণের টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিলে ছেড়ে দেয়, না দিলে অপহৃত ব্যক্তিকে চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয়, মুক্তিপণ দিতে না পেরে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তথ্যমতে, গত ৮ মাসে ৭০ জনকে অপহরণ করেছে সন্ত্রাসীরা। তবে এর বাইরেও আরো অপহরণের ঘটনা ঘটেছে যেগুলো অপহরণকারীদের সঙ্গে দেনদরবার করে গোপনে ছাড়িয়ে নিয়েছে পরিবার। গত ২ জুন দিবাগত রাতে টেকনাফের ২৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পাঁচজনকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। পরে তাদের পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণ না পেয়ে অপহৃতদের একজনের হাতের কব্জি কেটে বিচ্ছিন্ন করে ছেড়ে দেয়। পরে আলীখালী নামক এলাকার পাহাড়ের পাশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়। একজনের হাত কেটে অপহরণকারীরা অপর চারজনের পরিবারে এক ধরনের হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছে।

গত রবিবার অপহৃত শিশুর বাবা সোলতান আহমদ বলেন, আমার ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। রবিবার স্কুলে গিয়ে ছুটির পর আর বাড়ি ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারি আমার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। তারা (অপহরণকারীরা) আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে নিতে সবশেষ ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছে। আমি এ বিষয়ে থানায় জিডি করেছি। সুত্র: কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...