প্রকাশিত: ২৪/০১/২০২২ ৯:৫১ এএম , আপডেট: ২৪/০১/২০২২ ১০:৫৪ এএম

‘কই ছিলি কোত্থেকে এলি/আয় খেলি দেশ-দেশ খেলি/সীমান্ত কাকে বলে কাঁটাতার বুঝি/আই খুঁজি দুনিয়াটা খুঁজি’-ভারতের এনআরসির বিরুদ্ধে সরব কবীর সুমনের এ গানের কথাগুলো সীমান্ত আর কাঁটাতারের বেড়াকে ধিক্কার দেয়। ব্রিটিশ আমলে দেশভাগের সময় এমনই এক সীমান্ত নেমে আসে উপমহাদেশে। পাশের বাড়ির প্রতিবেশী হয়ে যায় অন্য দেশের মানুষ। ঘর এক দেশে আর রান্নাঘর চলে যায় অন্য দেশে।

আজকের গল্পটা সীমান্ত নিয়ে হলেও তা কোনো মানুষের ঘটনা নয়। ‘সীমান্ত’ নামক বাধার কারণে এক নেকড়ের নিজ ঘরে ফিরতে না পারার আকুতি নিয়ে এই গল্প। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গল্পের শুরু গত বছরের শেষ দিকে।

গল্পটা বলার আগে নেকড়ে নিয়ে কিছু জেনে নেওয়া যাক। নেকড়েরা দলবদ্ধ সামাজিক প্রাণী। দলবেঁধে ঘোরাফেরা করলেও নিজেদের এলাকা ভাগ করা আছে এদের। তেমনি একদল বিচরণ করছিল যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের একটি জঙ্গলে। ঘরে ফেরার টান অনুভব করে একটি বিরল মেক্সিকান ধূসর নেকড়ে। অনুভব করে একজন সঙ্গীর অভাব। পাশাপাশি নিজের এলাকা বানানোর সময় চলে আসে ‘মিস্টার গুডবার’ নামের এই নেকড়ে। সেই তাগিদ থেকেই চিহুয়াহুয়ান মরুভূমির দক্ষিণ-পূর্ব দিকে যেতে থাকে গুডবার। তৃণভূমি, গুল্মভূমি, উপত্যকা এবং পর্বত পেরিয়ে যেতে থাকে নিজের ঘরের পথে। গত ২২ নভেম্বর পূর্ব পোট্রিলো পাহাড়ে পৌঁছায় এটি। সেখানেই সম্প্রতি শুরু হয়েছে আগ্নেয়গিরির উদ্‌গিরণ। তবে পথ তার অনেকটা চেনা।

চলার পথে সহসাই থমকে যেতে হয় গুডবারকে। সামনে পড়েছে ৩০ ফুট লম্বা এক দেয়াল। কয়েক বছর আগেও এখানে কাঁটাতারের বেড়া দেখেছে সে। সেটি দিয়ে গাড়ি আটকানো গেলেও প্রাণীদের চলাফেরায় কোনো বাধা ছিল না। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক সিদ্ধান্তে বাড়ি ফেরা আটকে যায় নেকড়েটির। ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে এ দেয়াল বানানো হয়।

কিন্তু গুডবার দমে যাওয়ার পাত্র নয়। টানা পাঁচ দিন দেয়াল ঘেঁষে এদিক-ওদিক যেতে থাকে সে। ২৩ মাইল ঘুরে দেখার পরও কোনো কূলকিনারা করতে না পেরে অবশেষে ঘরে ফেরার আশা ছেড়ে দেয় নেকড়েটি। ফিরে আসে উত্তরের দিকে। এদিকে জিপিএসের সুবিধা ব্যবহার করে গুডবারের পুরো যাত্রাপথ পর্যবেক্ষণ করে মার্কিন মাছ ও বন্য প্রাণী সেবা প্রতিষ্ঠান।

প্রাণিবিদ মাইকেল রবিনসন বলেন, ‘এ ঘটনা দেখে আমি অবাক হইনি। আগেই জানতাম এমন হবে। তবে নেকড়ের জন্য কিছুটা খারাপ লেগেছে। শুধু নেকড়ে নয়, সীমান্ত দেয়ালের কারণে অন্যান্য প্রাণীর বাস্তুসংস্থানও হুমকির মুখে পড়েছে। নেকড়ের ঘটনাটি আমরা জানতে পারলেও প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটছে।’

মেক্সিকান ধূসর নেকড়ে একটি বিরল প্রজাতি। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন একে ‘বিপন্ন প্রাণীর’ তালিকাভুক্ত করেছে। মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রে এদের আনাগোনা ছিল। কয়েক বছর আগেও দুই দেশে ছিল এ জীববৈচিত্র্য। কিন্তু দেয়াল নির্মাণের কারণে এ প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র কমে গেছে।

মিস্টার গুডবার এখন গিলা জাতীয় উদ্যানে বিচরণ করে। ঘরে ফিরতে আবার চেষ্টা করেছিল কি না, তা জানা যায়নি।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আসিয়ান

রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। পাশাপাশি ...

ফিলিস্তিনপন্থি গ্রুপকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন টিউলিপ

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রো-প্যালেস্টাইন কর্মসূচির সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবে ...