প্রকাশিত: ১৩/০৭/২০১৮ ১১:২৩ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৪৮ এএম

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥

রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে আরাকান বিদ্রোহী নেতাদের অবাধ যাতায়াত ও কতিপয় ইসলামিক এনজিওর কর্মকা- নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের দোহাই দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে রোহিঙ্গা জঙ্গীরা গোপনে প্রত্যাবাসনবিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছে। আশ্রিতরা মিয়ানমারে ফিরে যাক, এটা চাইছে না তারা।

জানা গেছে, রোহিঙ্গা জঙ্গীর অনেকে বিভিন্ন সংস্থার সোর্স হিসেবেও কাজ করে চলেছে বলে দাবি একাধিক রোহিঙ্গা নেতার। গোপনে প্রত্যাবাসন বিরোধী কর্মকা- চালানোর পেছনে এটাই তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেছেন ওয়াকিবহাল মহল।

স্থানীয়দের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের যাতে সংঘাত সৃষ্টি না হয়, এ জন্য জেলা প্রশাসনের নজরদারিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাগণ সর্বদা সজাগ রয়েছে। এ বিষয়ে ক্যাম্প কমিটির নেতাদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল।

রোহিঙ্গা ফেরত নেয়ার ব্যাপারে একদিকে মিয়ানমারের ছলচাতুরি, অন্যদিকে আরাকান বিদ্রোহী নেতা ও ইসলামিক এনজিও কর্মীদের শিখিয়ে দেয়া রোহিঙ্গাদের একের পর এক দাবির মাঝখানে পড়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে কোন রকম আশার আলো দেখছে না স্থানীয়রা। প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সহজ করতে হলে দেশের জাতীয় পরিচয়পত্র বহনকারী চিহ্নিত রোহিঙ্গা জঙ্গীদের প্রথমে গ্রেফতার ও পরে ক্যাম্পে ধান্ধাবাজ ওসব এনজিওর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে বলে দাবি করেছে সচেতন মহল। এআরইউর ক্যাডাররা নিবন্ধিত একাধিক এনজিওর ছদ্মাবরণে রোহিঙ্গা সেবার নামে প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছে বলে তথ্য মিলেছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতা ও পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের বিভিন্ন টালবাহনা এবং রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন বিষয়টিকে প্রলম্বিত করে তুলছে। স্বদেশে ফিরে যাবার আগে তাদের ওসব দাবি মিয়ানমার গুরুত্ব দেবে বলে মনে হয় না। দেশটির সমাজকল্যাণমন্ত্রী সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে আশ্রয় ক্যাম্পে পরিদর্শনে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

ওই সময় তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, মিয়ানমারে ফিরে যাবার ছয়মাসের মাথায় কেউ আবেদন করলে তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হবে। তবে রোহিঙ্গারা বলছে, ফিরে যাবার আগেই তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, উখিয়া টেকনাফে আশ্রয় শিবিরে অবস্থানকারীদের আন্দোলন-দাবি ইত্যাদি শিখিয়ে দেয়া মানে সাধারণ রোহিঙ্গাদের উচ্ছৃঙ্খল করে তোলা। প্রত্যাবাসন বিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যাটি জিইয়ে রেখে পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের স্বার্থ হাসিল করা। ওই জঙ্গীরা রোহিঙ্গাদের নামে বিদেশী অর্থ এনে বিত্তবৈভবের মালিক হওয়া। আরাকান বিদ্রোহী জঙ্গীদের কারণে মিয়ানমার এবং রোহিঙ্গাদের বিপরীত মেরুতে অবস্থানকে দু’পক্ষের গোপন আঁতাত হিসেবেই দেখছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতারা।

ক্যাম্পে ঠিকাদার রোহিঙ্গা জঙ্গীরা ॥

রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গার ঢল অনুপ্রবেশের আগে মৌলবি শফিক নামে এক রোহিঙ্গা জঙ্গীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থার তৎপরতা ছিল প্রশংসনীয়। শেষ পর্যন্ত ধরাও পড়েছিল ওই জঙ্গী শফিক। এর আগে মিয়ানমারের আরাকান বিদ্রোহী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ আল ইয়াকিন তথা আরসার কাছে পৌঁছে দিতে বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামসহ গ্রেফতার করা হয়েছিল রমিজসহ মৌলবি শফিকের দুই সহযোগীকে। পরবর্তীতে পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের (জঙ্গী) ব্যাপক তদ্বির ও পুলিশের দুর্বল রিপোর্টে বেশিদিন জেলে থাকতে হয়নি তাদের। জামিনে মুক্ত ও পরে পলাতক হয়ে পড়ে তারা। বর্তমানে মৌলবি শফিক, হাফেজ মোঃ হাসিম, মৌলবি আবু নফর, ওসমান, আয়াছ, আবদুল হামিদ, রুহুল আমিন, নুর হোসেন, আবদুর রহিম ও জুবাইরসহ বহু রোহিঙ্গা জঙ্গী আশ্রয় শিবিরে ছদ্মনামে যাতায়াত এবং বিভিন্ন এনজিওর হয়ে অবৈধভাবে ঠিকাদারি করে চলেছে। ওই জঙ্গী সকলের জন্ম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে। দীর্ঘদিন আগে অনুপ্রবেশকারী পুরনো রোহিঙ্গা তারা। ইতোপূর্বে বিএনপি-জামায়াতের কতিপয় নেতার হাত ধরে কৌশলে বাংলাদেশী জাতীয় সনদ হাতিয়ে নিয়েছে।

অবৈধ ৪৭১ জাতীয় সনদধারী রোহিঙ্গা এবং রোহিঙ্গা বান্ধব ৫১ ব্যক্তি-জনপ্রতিনিধির বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা সংবলিত পত্র জেলা প্রশাসন সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পাঠানো হলেও তা এ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। ফাইলবন্দী হয়ে পড়েছে সরকারের ইস্যুকৃত ওই পত্র।

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...