ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ৩০/০৬/২০২৫ ১২:২৬ পিএম

মিয়ানমারের অভ্যান্তরে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘাতের কারণে রাখাইন রাজ্যে থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা স্থানীয়দের বিষফোঁড়ায় পরিনত হয়েছে।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ৩৩টি শরণার্থী শিবিরে আর-আর-আরসির দেওয়া তথ্য মতে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা রেজিষ্ট্রেশনভুক্ত হলেও বাস্তবতায় ১৯ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে ক্যাম্পে। তার মধ্যে বেশিরভাগই গ্রাস করেছে উখিয়া কেন্দ্রীক। তাদের ঘনবসতি ও পরিবেশ দুষিত হওয়ায় বিভিন্ন ধরণের রোগও দেখা দিয়েছে। এমন কি অনেক ছোট বড় জটিল রোগ তাদের কাছ থেকে সৃষ্টি হয়ে পার্শ্ববর্তী স্থানীয়দের ঘাড়েও চেপে বসেছে।

রোহিঙ্গা সংকট : বাড়ছে ঝু্ঁকি ও আতঙ্ক,বিপাকে
স্থানীয়রা

তাদের কাটাঁতারের ভিতরে থাকার কথা থাকলেও উখিয়ার গ্রাম-গঞ্জের লোকালয়ে এসে অবাধে করছে চলাপেরা। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে কার্যকরী ভুমিকা দেখা যায়নি।

তারা কাটাঁতারের বাহিরে এসে চুরি,ডাকাতি,মাদক ব্যবসা,অপহরণসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রমেও জড়িয়ে নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। উখিয়ার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয়দের কাবু করে সড়কে যাত্রীবাহী গাড়ি চালানো,শ্রমবাজার,ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ বসিয়ে রোহিঙ্গারা চালাচ্ছে নানা ভাবে দাপটগিরি।সেখানে আবার অনেকেই ক্যাম্পের বাহিরে এসে বিলাশবহুল বাড়ি করেছে, আর কেউ প্লাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে রাজারহালে। রোহিঙ্গাদের এ সকল কার্যক্রম রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয়দের।

কাটাঁতার ও ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে চেকপোস্ট পার হয়ে রোহিঙ্গারা কিভাবে লোকালয়ে এমন কার্যক্রম চালাচ্ছে’ এমন তথ্য জানতে ১৪-এপিবিএন পুলিশের অধিনায়ক ( অতিরিক্ত ডিআইজি) সিরাজ আমীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রোহিঙ্গারা খুবই বিচক্ষণ। তারা নানা অজুহাতে চেকপোস্ট ফাঁকি দেয়। এমন কি কাটাতার কেটে কৌশলে যাতায়াত পথ ব্যবহার করে। এপিবিএন পুলিশ নানা ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এসব বন্ধ করতে।

★ মাদক কারবারে রোহিঙ্গা
উখিয়া-টেকনাফে শতকরা ৮০% মাদক কারবারে জড়িত রয়েছে রোহিঙ্গারা। তারা নিজেরা মিয়ানমার থেকে বহন করে এনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করে আসছে। প্রশাসনের অভিযান ও গোপন সংবাদে আটক ও হয় অধিকাংশ রোহিঙ্গা কারবারিরা।

গোয়েন্দা সংস্থার এক লোক জানিয়েছেন, রোহিঙ্গারা ১৪ রখম অপরাধের হোতা। এর মধ্যে মাদক হলো অন্যতম। তাদের হাত ধরেই স্থানীয় মাদক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। রোহিঙ্গারা যোগান দিতে না পারলে স্থানীয়রা মাদকের সাথে জড়ানোর সুযোগ পেতো না।যতদিন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে থাকবে ততদিন দেশে মাদক কারবার বন্ধ হবে না।

র‍্যাব,বিজিবি,পুলিশ তাদের মাদক বিরোধী অভিযানের প্রেস বিজ্ঞপ্তি গুলো পর্যালোচনা করলেও দেখা যায় বেশিরভাগ আটক ও উদ্ধার দেখানো হয় রোহিঙ্গা কারবারিদের।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্নেল এস এম খায়রুল আলম (পিএসসি) জানিয়েছেন,সীমান্তে বিজিবি কঠোর নজরদারিতে থাকলেও রোহিঙ্গা পাচারকারিরা নানা কৌশলে মাদক পারাপার করে। প্রায় সময় আটক ও হয়,তারপরও রোহিঙ্গাদের কারণে এসব বন্ধ করতে বিজিবি হিমসিম খাচ্ছে। এসব দমনে বিজিবি অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

★ রোহিঙ্গা ড্রাইভারের বিচরণ
উখিয়ার মরিচ্যা পালং থেকে পালংখালী পর্যন্ত হাইওয়ে সড়কে ঘুরে দেখা গেছে রোহিঙ্গা ড্রাইভারের অবাধ বিচরণ, ফিটনেস বিহীন অদক্ষ গাড়ি নিয়ে সড়কে অত্রযত্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। টমটম,সিএনজি,অটো রিকশাসহ নানা প্রকার নছিমন সড়ক জুড়ে একাকার। কুতুপালং হাইওয়ে সড়ক কেন্দ্রীক সবই রোহিঙ্গা ড্রাইভারদের নিয়ন্ত্রণে। হাইওয়ে সড়কে তাদের এমন বিচরণে ঘটছে নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনা। গেল দু-এক মাসের ব্যবধানে উখিয়ার হাইওয়ে সড়কে দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত ও ৬/৭ সাত জনের অধিক আহতের ঘটনা ঘটনা ঘটেছে।

কলিম নামে এক রোহিঙ্গা টমটম ড্রাইভারের সাথে কথা বলে জানা জানা গেছে, তারা গাড়ি ভাড়ায় চালায়। স্থানীয়রা ৫০০/ টাকা ভাড়া দিলে রোহিঙ্গারা ৬০০ টাকা ভাড়া দেন স্থানীয় গাড়ির মালিককে। তাই স্থানীয়দের থেকে রোহিঙ্গা ড্রাইভার বেশি। ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না জানতে চাইলে বলে আইডি কার্ড নেই সেখানে ড্রাইভারি লাইসেন্স কোথাই পাব। তাহলে পুলিশে আটক করে না তোমাদের এমন প্রশ্নের উত্তরে বলে, পুলিশ দেখলে পালিয়ে যায়।

সড়কে এভাবে রোহিঙ্গা ড্রাইভারের দাপটের ক্ষমতার উৎস কি জানতে উখিয়া শাহপুরী হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,রোহিঙ্গা ড্রাইভারের কারণে সড়কে নিয়মিত যানযট লেগেই থাকে। হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাই, গাড়িও আটক করি, কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের সুপারিশ আর তাদের শেল্টার দেওয়াতে আইনি ব্যবস্থা নিতে অনেকটা কষ্ট সাধ্য হয়। তারপরও অভিযান অব্যাহত রেখেছি। সড়কে রোহিঙ্গা ড্রাইভারদের বিতাড়িত করেই ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। স্থানীয় সচেতন ব্যক্তি ও সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।

★ রোহিঙ্গা শ্রমিক-কর্মচারী
সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ থেকে শুরু করে চায়ের দোকানের কর্মচারী পর্যন্ত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে রোহিঙ্গা শ্রমিকের দাপট চলছে। তাদের কারণে শ্রমবাজারে তীব্র সংকটে পড়েছে স্থানীয়রা। উখিয়া এবং কুতুপালং বাজারে ঘুরে দেখা গেছে,অধিকাংশ দোকানে রোহিঙ্গা কর্মচারী।

স্থানীয় কর্মচারীর চেয়ে রোহিঙ্গা কর্মচারীর মাসিক বেতন কম হওয়াতে তাদের বেশি মূল্যায়ন করা হয় বলে জানিয়েছেন এক রেষ্টুরেন্ট মালিক।

উখিয়ার সাইফুল নামে এক শ্রমিক নেতা বলেছেন, বিভিন্ন কাজে ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা অজ্ঞ। তারা কাজ ও জানে না। তার মধ্যে রোহিঙ্গারা চুরি চামারিও করে। এমন কি কাজের কথা বা কোন লেনদেনে কথা-কাটাকাটি হলে বড় ধরণের মারামারির করার আশংকাও করে পেলে তারা। অতীতে মালিক পক্ষকে খুন করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে।

এসব সমস্যার সামাধান চেয়ে স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি ও সচেতন ব্যক্তিরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।

★ রোহিঙ্গাদের বাণিজ্যে বিস্তার
কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালীসহ উখিয়ার বিভিন্ন অলিগলিতে রোহিঙ্গারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে। নামে-বেনামে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চালাচ্ছে এসব ব্যবসা। তাদের পুজি আর বাণিজ্যের ধরণ দেখলে বুঝা যায় তারা শরনার্থী নই। তারা ইউরোপ থেকে বাংলাদেশে ব্যবসার কাজে ছুটে এসেছে। সরেজমিন ঘুরে এমন অবাক করার মতো দৃশ্য দেখা গেছে।

ওষুধের ফার্মেসী ,মুদির দোকান,নানা ধরণের দেশি বিদেশী কাপড়ের ব্যবসা,ইলেকট্রনিক্স মালামালের দোকানসহ সব কিছুতে রোহিঙ্গারা মোটা পুজি দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কোন বাধা বিঘ্ন ছাড়া।

কুতুপালং রোহিঙ্গা সাদ্দাম নামে এক ইলেকট্রনিক মালামালের ব্যবসায়ী সাথে কথা বলে জানা গেছে, ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই তারা ব্যবসা করতেছে কেউ বাধা দেওয়ার নেই।

আরেক কাপড় ব্যবসায়ী বলেছে, এনজিওর রেশনের আশা না করে ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছে তারা। সেখানে বাধা দেওয়ার কি আছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান চৌধুরী জানান, কুতুপালং বাজারে রোহিঙ্গাদের গোদাম ও বিভিন্ন মালামাল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে গতমাসে ৪ লক্ষ্য টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এই মাসেও অভিযান হবে,এবং এসব চলমান রাখতে চেষ্টা করা হচ্ছে।

★ আধিপত্য বিস্তার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম
রোহিঙ্গা শিবিরের অভ্যন্তরেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে একাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।আধিপত্য বিস্তারে বাড়ছে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা।চলছে অস্ত্রের মহড়া,ঘটছে একের পরএক হত্যাকাণ্ড,গুম,অপহরণ।
আরসা-আরএসও সহ ক্যাম্পের ভিতর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একাধিক সক্রিয় সন্ত্রাসী গ্রুপ। টার্গেট করে তারা বিভিন্ন কার্যক্রম চালাই। এমন কি কোন স্থানীয় ব্যক্তি তাদের টার্গেটে পড়লে রেহাই পাই না।

বর্তমানে তারা আরাকান আর্মির সাথে মত বিরোধ হয়ে ক্যাম্প ও উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন স্পটে ঘাটি করার পায়তারাও চালাচ্ছে। বিষয়টি নিয়েও নানা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

পাঠকের মতামত

গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের বদলে বিষাক্ত ট্যাবলেট, প্রাণ গেল উখিয়ার মরিয়মের

উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা গ্রামে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের বদলে ভুলক্রমে ইঁদুর মারা ট্যাবলেট সেবন করে মরিয়ম ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের চালু হলো শিক্ষা কার্যক্রম!

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আবার চালু হয়েছে মিয়ানমার কারিকুলামের মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষাকেন্দ্রগুলো। শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়ার ...