ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৭/০৯/২০২২ ৭:৪৫ এএম

দেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত জেলা কক্সবাজার। বিশ্বের দীর্ঘতম ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত ছাড়া নয়নাভিরাম দৃশ্য ও প্রাকৃতিক প্রাচুর্যে ভরপুর এই কক্সবাজার। পান, সুপারি, লবন, মাছ ও নারিকেলের জন্যও এই কক্সবাজার বিখ্যাত। পতিত জমি ও কৃষি জমির পাশে নারিকেল গাছ লাগিয়ে বেশ লাভবান হচ্ছে কক্সবাজারের নারিকেল চাষিরা। আর দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নারিকেলের চাষ। জেলায় গত এক বছরে ১২ হাজার ৯’শ ২০ মেট্রিক টন নারিকেল উৎপাদন হয়েছে। পিচ করে হিসেব করলে ১ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার। প্রতি পিচ ৮০ টাকা করে হিসাব করলে যার বর্তমান বাজার মূল্য দাঁড়ায় ১’শ ৩ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা। যা ২০২১ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত গত এক বছরে এই উৎপাদন রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়াও অন্তত ৫ থেকে ৮ কোটি টাকার নারিকেলের ছোবড়া বিক্রি হয়েছে।
এই জেলায় প্রতিবছর প্রচুর নারিকেল উৎপাদন হয়। দেশে নারিকেলের চাহিদা বাড়ায় বাড়ির আঙ্গিনা, পুকুর পাড়, পাহাড়ি এলাকায় চাষিরা নারিকেলের চাষ করেছেন। ফলে জেলার চাহিদা মিটিয়ে নারিকেল চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ কবির হোসেন দৈনিক কক্সবাজার’কে জানান, নারিকেল উৎপাদনের জন্য কক্সবাজারের আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী। মাটি লবনাক্ত হলে আরও ভালো। সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা নারিকেল চাষের জন্যে বিশেষ উপযোগী।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারে ৬৮৮ হেক্টর জমিতে নারিকেলের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৪ হেক্টর, চকোরিয়া ১০৫, পেকুয়া ৫৫, রামু ৫০, উখিয়া ১৪০, টেকনাফ ২৫৬, মহেশখালী ৫০ এবং কুতুবদিয়া ৮ হেক্টর জমিতে নারিকেল গাছ রয়েছে।
জানা যায়, এ জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসলের একটি নারিকেল। এখানকার প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই নারিকেল গাছ দেখা যায়। বাগানের সারি সারি গাছ ছাড়াও বাড়ির আঙিনায় বসতঘরের আশপাশে, পুকুরপাড়ে দেশীয় জাতের নারিকেলগাছ দেখা যায়। সারা বছর ওইসব গাছ থেকে নারিকেল সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি ভিয়েতনামীয় নারিকেল গাছও লাগিয়েছে অনেকে। পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে হাটবাজারে বিক্রি করা হয়। হরেকরকম মুখরোচক নানা পদের সুস্বাদু খাবার তৈরিতে নারিকেলের ব্যবহার হয়ে আসছে। এ ছাড়াও তেল উৎপাদন ও শিল্পের কাঁচামালের এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। যে কারণে নারিকেলের প্রচুর চাহিদা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপকূলীয় এ জেলা কৃষিনির্ভর একটি জনপদ। এখানে কোনো শিল্পকারখানা নেই। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ জমির ফসল, মৎস্য, পানের বরজ, সুপারি ও বাড়ির আশপাশে উৎপাদিত নারিকেলের ওপর নির্ভরশীল। এমন অসংখ্য পরিবার আছে, যাদের বাড়ির ১৫-২০টি নারিকেল গাছ তাদের সংসার খরচ চালাতে সহায়তা করছে। অপরদিকে, যাদের সারি সারি নারিকেল গাছ, তাদের আয় লাখ লাখ টাকা। টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপ’র নারিকেল যথেষ্ট সুনাম আছে। এখানকার ডাবের পানি দেশজুড়ে প্রশংসনীয়।
কবির হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগে নারিকেল গাছ খুবই উপযোগী। পাশ্ববর্তী শ্রীলঙ্কা প্রধান ভোজ্য
তেল হলো নারিকেল তেল। নাস্তা, রান্নাবান্না সবকিছুতে তারা নারিকেল তেল ব্যবহার করে। প্রতিবছর দেশে ৩০ হাজার কোটি টাকার তেল আমদানি করতে হয়। আমরা যদি নারিকেল তেল খাওয়া অভ্যাস করতে পারি তাহলে তেলের উপর যে বৈদেশিক নির্ভরতা সেটা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
এখানকার ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়েও নারিকেল কিনেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী ছাড়াও জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা এসে কক্সবাজার থেকে নারিকেল কিনছেন। ওইসব নারিকেল সড়ক ও নদীপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন কক্সবাজারের বিভিন্ন হাটবাজারে লাখ লাখ টাকার নারিকেল বিক্রি হয়ে থাকে। তবে, স্থানীয়ভাবে নারিকেলভিত্তিক কলকারখানা গড়ে না ওঠায় এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে নায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী আনোয়ার হোসেন দৈনিক কক্সবাজার’কে বলেন, প্রতি বর্ষা মৌসুমে গাছের মাথা পরিষ্কার করতে হয়। প্রতিটি গাছ ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। প্রতি গাছে বছরে ডাবের বিপরীত ২০০ থেকে ৫০০টি পর্যন্ত নারিকেল পাওয়া যায়। বাদাম, সয়াবিন ও সুপারির পাশাপাশি নারিকেল উৎপাদনে আগ্রহ এখানকার চাষিদের। সুপারি বছরে একবার পাওয়া গেলেও নারিকেল বছরের সবকটি দিনে পাওয়া যায়। তাইতো চাষীরা নারিকেল চাষে ঝুকছে।
স্থানীয়রা জানান, দেশব্যাপী নারিকেলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাড়ির আশেপাশে খালি জায়গায় নারিকেল গাছ লাগিয়ে তাদের সংসার চলে। ব্যাপক চাহিদা থাকায় নারিকেল ব্যবসা লাভজনক। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

২২ টি মোবাইল টীমের মাধ্যমে উখিয়ায় স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে প্রান্তিক

তাপমাত্রা প্রায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যে তাপমাত্রায় মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পায়। সেখানে ...

টেকনাফে ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতিগ্রস্থ হতদরিদ্র পরিবার “আয়েশা” পেলেন মাথা গোছার নতুন ঠাঁই !

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন এ ঘূর্ণিঝড় ‘মোখায়’ ক্ষতিগ্রস্ত হতদরিদ্র পরিবারের কাছে তুলে দিয়েছেন সেমিপাকা ...