প্রকাশিত: ০৮/০৭/২০২২ ১০:৩৪ এএম

সাহেদ মিজান, কক্সবাজার::
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। বিশ্বের দৈর্ঘতম সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের কাছে বেড়ানোর জন্য পছন্দের র্শীষে। কেননা কোলাহলমুক্ত সৈকতে ঢেউয়ের গর্জন ও বালিয়াড়ির বুকে ডালপালা ছড়ানো সাগরলতাও যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। একই সঙ্গে পাহাড়, সমুদ্র, নদী, ছড়া, ঝিরি-ঝরনার মেলবন্ধনে প্রকৃতির অপরূপ সব সৌন্দর্য দেখার সুযোগ শুধু কক্সবাজারেই রয়েছে। তাই বিশেষ দিন ও সরকারি ছুটিতে মানুষ বেড়ানোর জন্যে ছুটে যান। বিশেষ করে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার বন্ধে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন লাখ লাখ পর্যটক।
বিশেষ বন্ধের বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই হোটেল-মোটেলে অগ্রিম বুকিংয়ের হিড়িক পড়ে। অনেক সময় অগ্রিম বুকিংয়েও মিলে না হোটেল কক্ষ ; থাকতে হয় রাস্তায়। এইতো গত ঈদেও সেরকম পরিস্থিতি হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাসের ব্যবধানে এখন বলা চলে পর্যটক শূণ্য কক্সবাজার। এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে সেই চিত্র একেবারে উল্টো। এবার অগ্রিম হোটেলে-মোটেল বুকিংয়ের মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ঈদুল আজহার মাত্র দুই দিন বাকী। কিন্তু এখনো সব মিলিয়ে ২০ শতাংশ হোটেল-মোটেল কক্ষ বুকিং হয়নি বলে জানিয়েছে হোটেল-মোটেল সংশ্লিষ্টরা।

ঈদুল আজহার ছুটিতে হোটেল-মোটেল বুকিংয়ের এমন নিম্নগামিতা হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। এমন বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে জরুরী বৈঠকও করেছে হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতি।
বৃহস্পতিবার সকালে এই জরুরী বেঠক করেন সমিতির নেতারা। বৈঠকে সম্প্রতি সংঘটিত বন্যা এবং পদ্মা সেতু খুলে দেয়ায় পর্যটকদের কুয়াকাটা যাওয়ার ইচ্ছাকে কক্সবাজারে হোটেল বুকিং হ্রাসের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে এই দুই কারণে এতটা বিপর্যয় হতে পারে না বলে মনে করা হচ্ছে। আরো গভীরতর কারণ অনুসন্ধানে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসবেন নেতারা।

হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছেন, বিগত বছরগুলোতে ঈদুল আজহার এক সপ্তাহ আগে কক্সাবাজারের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসের প্রায় শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে যায়। এমনকি কটেজগুলোতেও বুকিংয়ের হিড়িক পড়ে। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো।

তিনি জানান, ঈদের আর মাত্র দুদিন বাকী। কিন্তু বহু হোটেলে কোনো কক্ষ বুকিং হয়নি। যেগুলোতে হয়েছে সেখানে ৩০ শতাংশের নিচে। সর্বসাকুল্যে ২০ শতাংশও হবে না। স্মরণকালে এমন বিপর্যয়ের চিত্র দেখেনি কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

কলাতলীর প্রধান সড়ক লাগোয়া ‘স্বপ্নালয় স্টুডিও এ্যাপার্টমেন্টে’র ইনচার্জ কুতুব উদ্দীন জানান, তাদের হোটেলে ৬০ টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৫টি অগ্রিম বুকিং হয়েছে। এরকম সুপরিচিত হোটেলগুলোতে ১০ থেকে ২০ পর্যন্ত কক্ষ বুকিং হয়েছে। কিন্তু অনেক হোটেল শূন্য বুকিংয়ে রয়েছে।

হোটেল ‘আইল্যান্ডিয়া’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর নূরুল কবির পাশা জানিয়েছেন, তাদের হোটেলে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বুকিং শূন্য। একই কথা জানিয়েছেন ‘গ্র্যান্ড সেন্ডি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুর রহমানও।

অগ্রিম হোটেল বুকিংয়ের বিপর্যয়ের বিষয়টি এখন কক্সবাজারের পর্যটন অঙ্গনে বেশ আলোচনায়। শুধু হোটেল মালিক নয়; এই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সকলেই।

অগ্রিম হোটেল বুকিংয়ে এমন বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে পর্যটন সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলেছে এই প্রতিবেদক। অগ্রিম হোটেল বুকিং কম হওয়ার কয়েকটি কারণ তারা চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাকে প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া সিলেট বিভাগসহ দেশের বহু স্থানে সম্প্রতি সংঘটিত বন্যাও অন্যতম কারণ। এছাড়া পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আগ্রহী পর্যটকেরা কুয়াকাটায় দিকে ধাবিত হবে।

পর্যটন জাহাজ মালিকদের সংগঠন স্কোয়াব’র সভাপতি তোফায়ের আহমদ বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে নীরব অর্থনৈতিক সংকট চলছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। অর্থনৈতিক সংকট ছাড়াও বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ নিত্যদিনের আরো কিছুর সংকটে মানুষের মানসিক অবস্থা খারাপ যাচ্ছে। একারণে এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে মানুষ তেমন বেড়াতে বের হবে না। এটাই কক্সবাজারের হোটেল বুকিং অত্যদিক কম হওয়ার প্রধান কারণ। এছাড়া পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় যারা বেড়াতে ইচ্ছুক তারা কম দূরত্বের কুয়ারকাটার দিকে যেতে পারে।’

পর্যটক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অগ্রিম হোটেল বুকিং না হওয়া মানে ধরে নেয়া এবারে ঈদুল আজহার ছুটিতে কক্সবাজারের স্মরণকালের রেকর্ড কম পর্যটক আসতে পারে। আবার আবহাওয়াসহ সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকলে হোটেল বুকিং ছাড়াই আকস্মিক ছুটে আসতে পারে পর্যটকেরা— এমন প্রত্যাশাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে পর্যটক আসুক বা কম আসুক; তারপরও ঈদুল আজহার ছুটিতে পর্যটক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, ‘বড় বড় ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য যেভাবে প্রস্তুতি দরকার এবারও সেভাবে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পর্যটক কম আসলেও আমাদের নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার থাকবে।’ সিভয়েস

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...