প্রকাশিত: ০২/১২/২০১৬ ১:৩৬ পিএম

ukhiya-pic-2সরওয়ার আলম শাহীন,উখিয়া নিউজ ডটকম::
মিয়ানমারের মংন্ডু রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত প্রতিটি গ্রাম যেন এখন আতংকের জনপথ।মৃত্যুপুরী বললেও খুব একটা বেশী বলা হবেনা।সেখানে মাসাধিকাল ধরে চলা সেদেশের সেনাবাহিনীসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমন নিপীড়ন ও নৃশংস বর্বর নির্যাতনে দিশেহারা অসহায় মুসলিম রোহিঙ্গারা ঘরবাড়ি সহায় সম্পদ ত্যাগ করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে দলে দলে এক কাপড়ে।তাদের চোখেমুখে বোকা কান্না,কেউ কেউ এখনো শিউরে উঠেন মিয়ানমারের ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র মনে করে।বাংলাদেশ সীমান্তের ঘুমধুম  সীমান্বর্তী জনগনের ভাষায়,ওপারে চলছে মিয়ানমার আইনশৃংখলা বাহিনীর ভয়াবহ নির্যাতন এপারে চলছে মুসলিম রোহিঙ্গাদের কান্না।

সীমান্তের ওপার থেকে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য ও কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি এলাকায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ করে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা এক কথায় ভয়াবহ বিস্ময়কর।এক সপ্তাহ পূর্বে দুই শিশু সন্তান নিয়ে পালিয়ে আসা ফাতেমা বেগম(২৫) জানান,তার স্বামী বাড়ির পার্শ্বে ধান কাটছিল।এসময় সেনাবাহিনী ও রাখাইন সম্প্রদায়ের একটি দল তাকে ধরে নিয়ে যায়।কেরোসিনের আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় তার ঘর।জীবন বাঁচাতে দু’টি সন্তান কে নিয়ে পালিয়ে এসেছে,স্বামীর কি অবস্থা এখনো জানেনা সে।তার ভাষায়,মিয়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গা নিধনে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে সে দেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ,পাশাপাশি স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ও হামলা চালাচ্ছে গ্রামে গ্রামে।পুরুষ যুবকদের হত্যা করা হচ্ছে,ধরে নিয়ে গিয়ে রোহিঙ্গা যুবতীদের উপর চালাচ্ছে পাশবিক নির্যাতন।বসতবাড়ীতে আগুন দেওয়া হচ্ছে,মিয়ামমারে প্রকাশ্যে জুলুম হচ্ছে,কিন্ত কেউ প্রতিবাদ করছেনা এ কথা বলতে বলতে ফাতেমা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।মংন্ডু পোয়াখালী গ্রামের জমিলা খাতুন (৪৫) জানায়,তারা মিয়ানমার বাহিনীর আত্রুমনে দিশেহারা হয়ে সেদেশের সীমান্ত এলাকার খেয়াবনে কিছু না খেয়ে ৫ দিন লুকিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন।সেখানকার একজন দালালের মাধ্যমে গত ৬ দিন পূর্বে উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে কুতুপালং বস্তিতে এসেছেন।সে আরো জানায়,তার পাশের বাড়ীটি লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিলে তার বাড়ীটিও পুড়ে যায়।এসময় ছেলে মেয়ে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ৭/৮ দিন অবস্থান করার পর অবশেষে নাফনদী পার হয়ে এপারে চলে আসতে সক্ষম হয়েছি।মংন্ডু পোয়াখালী গ্রামের সব হারিয়ে নিঃস্ব মমতাজ বেগম (৪০) জানায়,সেনা সদস্যরা তাদের গ্রামে লুটপাট চালিয়ে মেয়েদের ইজ্জত লুন্ঠন করছে।ছেলেদের ধরে নিয়ে জবাই করে মারছে।ছোট ছোট ছেলেদের আগুনে নিক্ষেপ করছে।নৃশংস এ বর্বরতার হাত থেকে রেহায় পাওয়ার জন্য ছেলে মেয়ে নিয়ে এখানে চলে এসেছি।সে দুঃখ করে বলেন,এত সহায় সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আজ এক কাপড়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।স্বামী হারা সাজু বেগম(২৫) জানায়,পুলিশ তার স্বামী ইউনুছ কে ধরে নিয়ে গেছে।পরে শুনেছি তাকে মেরে ফেলে লাশ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।শিশু সন্তান ফায়সাল (৫), রাশেদ (৩) ও আনোয়ার (২) এই তিন সন্তানকে নিয়ে কুমিরখালী থেকে অনেক কষ্টে নাফনদীর পাড়ে এসেছি।খেয়ারীপাড়ার আব্দুল হামিদ (২৬) জানায়,ঘরে আগুন দিয়ে পুড়ে দেওয়ার সময় তার চোখের সামনে বয়োবৃদ্ধ পিতা শফিউল্লাহকে (৫৫) মারা যায়।উপান্তর না দেখে বাবার লাশ ফেলে মাকে নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছি।এখানে পৌঁছতে তাকে দেড় লাখ (কিয়াত) সেখানকার দালালকে দিতে হয়েছে বলে জানান।নাগপুরা থেকে পালিয়ে আসা আব্দুল গফুর (৪০) জানায়,গত  এক সপ্তাহ ধরে মগসেনারা সীমান্তের ঢেকিবনিয়া, কুমিরখালী,শিলখালী,বলিবাজার ও নাগপুরা সহ ১০টি গ্রামের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে।পুড়িয়ে দিয়েছে ধানের খামার।এসময় মগসেনারা বাড়ীতে ঢুকে যুবক ছেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর যুবতী মেয়েদের ধর্ষণ করছে।সে আরো জানায়,সীমান্ত এলাকার পাড়া গুলোতে ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়া আগুনের লেলিহান শিখা এপারের অনেকেই দেখেছে।এসময় বয়োবৃদ্ধ মরিয়ম খাতুন (৫৫) জানায়,তার ছেলে ইমাম শরীফ (২৮) ও তার পুত্র বধু মনোয়ারা (২২) ৩ জনের সংসার তছনছ করে দিয়েছে মগসেনারা।এখনো তার চোখেমুখে বোবা কান্না,সে কান্না ভেজা মুখে জানায়, গত সোমবার রাতে ভাত খেয়ে তারা ঘুমাচ্ছিল। এসময় হঠাৎ মগসেনারা ঘরে আগুন দিলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসি।এসময় মগসেনারা তার ছেলে ইমাম শরীফকে ধরে নিয়ে গেছে।ছেলের বউকে নিয়ে কোন রকম পাড়া প্রতিবেশীর সাথে পালিয়ে এসেছি।এভাবে নতুন করে আশ্রয় নেওয়া বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নাগরিক মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়েছেন।এদিকে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লে.কর্ণেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান,যে সমস্ত এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সে সমস্ত ফাঁকা স্থান গুলোতে বিজিবি’র নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।তিনি বলেন,তথাপিও ফাঁকফোকর দিয়ে আসা অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও মানবিক সেবা দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু, দৈনিক উৎপাদন ৩০ মেগাওয়াট

কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছেছবি: প্রথম আলো কক্সবাজার সদর উপজেলার ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টার্গেট কিলিং!

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে ‘টার্গেট কিলিং’। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ...

জান্নাতুলকে খুনের কথা আদালতে স্বীকার করলেন কক্সবাজারের রেজা

রাজধানীর পান্থপথে আবাসিক হোটেলে চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ...

খাদ্য সংকটে সেন্টমার্টিন

হেলাল উদ্দিন সাগর :: বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ...