ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৪/০২/২০২৪ ১০:৩১ এএম , আপডেট: ২৪/০২/২০২৪ ১০:৫২ এএম

জান্তা বাহিনীর হাত থেকে পুরো রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে আরাকান আর্মির (এএ) এক সপ্তাহের কম সময় লাগতে পারে। এক বিবৃতিতে বিদ্রোহীদের জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স এমনটাই দাবি করেছে।

গত মঙ্গলবার দেওয়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জান্তা বাহিনীর অধিকাংশ ক্যাম্পই এখন আরাকান আর্মির দখলে। যে কয়টি ক্যাম্প বাকি আছে, সেখানে জান্তা বাহিনীর সেনা ১০০-এরও কম। সেগুলো পুরো দখল করতে এএ যোদ্ধাদের এক সপ্তাহের কম সময় লাগবে।

থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স আরও বলেছে, জান্তা সেনাদের পিছু হটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। যদিও কয়েকটি ঘাঁটি তারা মরিয়া হয়ে দখলের চেষ্টা করছে। আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে সেসব ঘাঁটির কমান্ডারদের সেনাসহ আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিদ্রোহীদের দলে যোগদানকারী জান্তার দলছুট সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন লিন হটেট অং নারিনজারা নিউজকে বলেছেন, ‘জান্তা সেনাদের মনোবল কমে যাচ্ছে। তারা আর সম্মুখ লড়াইয়ে ইচ্ছুক নয়।’

রাখাইনের আরেক শহর থেকে পিছু হটেছে জান্তা সেনা

রাখাইন রাজ্যের তাংআপ জেলার মা-ইতে শহর থেকে জান্তা সেনারা সরে গেছে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, জান্তা বাহিনী বেশ কিছু ল্যান্ডমাইন পুঁতে গেছে। ফলে সেখানে বেসামরিক হতাহতের ঝুঁকি রয়েছে। তবে আরাকান আর্মি ল্যান্ডমাইন অপসারণ অভিযান শুরু করেছে।

এ ছাড়া আরাকান আর্মির অগ্রগতি ঠেকাতে মা-ইর একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু জান্তা বাহিনী ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। এ ছাড়া পিছু হটার সময় জান্তা বাহিনীর এলোপাতাড়ি গোলাবর্ষণে বেশ কয়েকটি বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মা-ই শহরের একটি উচ্চবিদ্যালয়ও ধ্বংস হয়ে গেছে।

নতুন অঞ্চল দখলের দাবি কেএনইউর

এদিকে জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে মন ও কারেন রাজ্যের এবং বাগো অঞ্চলের নতুন এলাকা দখলের দাবি করেছে জাতিগত তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর জোট কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ)। গত ডিসেম্বর থেকেই কারেন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ এশিয়ান হাইওয়ের নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহীদের দখলেই রয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের চায় জান্তা কর্তৃপক্ষ

লড়াইয়ের ময়দানে যখন প্রায় সব স্থান থেকেই পিছু হটছে জান্তা সেনারা, তখন ঘুরে দাঁড়াতে অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের ফেরাতে চাইছে জান্তা কর্তৃপক্ষ। তাদের রিজার্ভ ফোর্সেস আইনের অধীনে বাহিনীতে যোগদানের নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়ে কাজ চলছে। নির্দেশনা জারির পরে যদি কেউ বাহিনীতে যোগ দিতে ব্যর্থ হন, তবে তার ৩ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

শান রাজ্যে পাঁচ জান্তা সেনা নিহত 

মায়ানমারের শান রাজ্যে বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে পাঁচ সেনা হারিয়েছে জান্তা বাহিনী। গত বৃহস্পতিবার মায়ানমার নাউ সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যের রাজধানী তাউঙ্গির কাছের এলাকার দখল নিয়ে পা-ও ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (পিএনএলএ) যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় জান্তা সেনারা।

পিএনএলএ জানিয়েছে, তাউঙ্গি থেকে ১৫ মাইল দূরে হপং শহরতলিতে পিএনএলএ যোদ্ধাদের অবস্থানে বুধবার ভোরবেলা হামলা শুরু করে জান্তা সেনারা। পরে কয়েক ঘণ্টা ধরে লড়াই চলে। শেষে বিদ্রোহী বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে টিকতে না পেরে পিছু হটে জান্তা বাহিনী। সংঘর্ষে ৫ সেনা নিহত হয়।

সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়াতে মুসলিমদের অপহরণের অভিযোগ 

সামরিক বাহিনীতে যোগদানে বাধ্য করার জন্য রাখাইন রাজ্যের বুথিডং শহরতলির বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে শতাধিক মুসলমানকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে। যাদের অধিকাংশই তরুণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মায়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নারিনজারা জানিয়েছে, গত ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি গ্রামগুলো থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যরা জোর করে মুসলমানদের ধরে নিয়ে যায়। এর মধ্যে পা জুন চাউং গ্রাম থেকে ১৩ জন, তাত মা চাউং থেকে ৫৫, এনগা কিয়াইং তাউক গ্রাম থেকে ৩৩ ও কিউক ফিউ তাউং গ্রাম থেকে ১০ জনকে তারা নিয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দা নারিনজারাকে বলেছেন, ‘অপহরণের শিকার অধিকাংশই বয়সে তরুণ। তাদের জান্তা সেনাবাহিনীর ৫৩৫তম ও ৩৫৩তম ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরও অনেককেও ধরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে।’

এমন অবস্থায় তরুণ বাসিন্দারা গ্রামগুলো থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে অনেকে জান্তা বাহিনীতে যোগদানের থেকে আরাকান আর্মিতে যোগদানে ইচ্ছুক বলে জানিয়েছেন সেই বাসিন্দা।

তরুণদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপহরণ করে সামরিক চাকরিতে বাধ্য করা মানবাধিকার লঙ্ঘন ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে এই ইস্যুতে জান্তা কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য জানা যায়নি। এর আগে মায়ানমারের জান্তা-সমর্থিত গণমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছিল, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মুসলিমদের পাশে চায় জান্তা কর্তৃপক্ষ। সুত্র: খবরের কাগজ

পাঠকের মতামত