উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭/১২/২০২২ ১১:২১ এএম

বিজয়ের একান্ন বছর পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ। একান্ন বছরে সাফল্যের অন্যতম শীর্ষ স্থানে আছে দেশের বিদ্যুৎ খাত। এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৫১ গুণ বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। চলতি বছরে শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাধ্যদিয়ে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দেয় এই খাত। আলোকিত হয়েছে সারাদেশ।

শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং মুজিববর্ষে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সফলভাবে সম্পন্ন করায় বিদ্যুৎ বিভাগকে চলতি বছরে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করা হয়েছে।

বাংলাদেশে বিদ্যুতের ইতিহাস

বাংলাদেশে প্রথম বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল বিংশ শতকের প্রথম বছর। আর এর আর্থিক সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন ঢাকার নবাব আহসানউল্লাহ। ১৯০১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথম ঢাকার রাস্তায় বিদ্যুতের বাতি জ্বলে উঠে। এর পূর্বে ১৯০১ সালের জুলাই মাসে ঢাকা পৌরসভা কর্তৃক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে যে সকল রাস্তায় ও এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে তার নাম জানানো হয়। পৌরসভার অধীনে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ‘দি ঢাকা ইলেকট্রিক ট্রাস্টিস’ নামে পরিষদ গঠন করা হয় এসময়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকরা চলে যাবার সময় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাটি ছিল একেবারে বিচ্ছিন্ন ধরনের, এ সময় কোনো দূরবর্তী ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা ছিল না। কিছু সুনির্দিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হত সে সকল এলাকায় ব্যবহারের জন্য। বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। এছাড়া কিছু শিল্প (চা, চিনি এবং টেক্সটাইল) এবং রেলওয়ে ওয়ার্কশপে নিজস্ব উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হত। অধিকাংশ জেলাগুলিতে শুধুমাত্র রাতের বেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ঢাকা শহর যেখানে দুটি ১৫০০ কিলোওয়াটের জেনারেটর দ্বারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ ছিল ৬৬০০ ভোল্টের। পাওয়ার ইউটিলিটি কোম্পানি কর্তৃক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৭ (সাত) মেগাওয়াট এবং দেশের সর্বমোট উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২১ মেগাওয়াট।

১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৪৭৫ মেগাওয়াট। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে দেশে স্থাপিত বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৫০০ মেগাওয়াট। এসময় বিদ্যুৎ খাতের সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে গতি প্রদান করতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড স্থাপন করা হয়। পল্লী অঞ্চলের বিদ্যুতায়নকে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে স্থাপন করা হয় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে সারাদেশে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারণের কাজ চলতে থাকে। বিভিন্ন শহর ও নগরীর মধ্যে বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের অন্তঃসংযোগ করা হয় ২৩০ কিলোভোল্টের ও ১৩২ কিলোভোল্টের ট্রান্সমিশন লাইন দ্বারা। ১৯৮২ সালের ডিসেম্বর মাসে সর্বপ্রথম দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে থাকা বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনকে একসাথে সংযুক্ত করা হয়। একটি ডাবল সার্কিট ২৩০ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইন দ্বারা যমুনা নদীর উপর দিয়ে এই সংযোগ দেওয়া হয় যা যুক্ত করে টঙ্গী ও ঈশ্বরদীতে থাকা ১৩২ কেভির ট্রান্সমিশন লাইনকে। ১৯৭২ সালের পর থেকে ১৯৯১-৯২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা গিয়ে দাঁড়ায় ২৩৫০ মেগাওয়াট। ১৯৯৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সারাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে দাঁড় করায় ২৮১৮ মেগাওয়াটে। ১৯৮৬ সালের পর থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সামগ্রিক কর্মক্ষমতা ব্যাপক হারে হ্রাস পায়, এ সময় গড় সিস্টেম লস ছিল প্রায় ৪২ শতাংশ, এবং গড়ে বকেয়া বিলের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৬ মাসের। এর ফলশ্রুতিতে জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত পুনর্গঠন’ রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয় ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।

১৯৯০ সাল নাগাদ সারাদেশের মোট বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহারের ৫০ শতাংশ ব্যবহৃত হত রাজধানী ঢাকায় ও এর আশপাশের এলাকায়। সুষ্ঠুভাবে বৃহত্তর ঢাকার বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণের জন্য ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে অতিরিক্ত বোঝা কমাতে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সরকার ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) তৈরি করা হয়। বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থাকে আরও গতি প্রদান করতে ২১ নভেম্বর, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থাকে পৃথক করে একটি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অব বাংলাদেশ তৈরি করে। ১৯৯৬ সালে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অব বাংলাদেশ দায়িত্ব গ্রহণ করার সময় ২৩০ কিলোভোল্টের ট্রান্সমিশন লাইনের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ৮৩৮ সার্কিট কিলোমিটার এবং ১৩২ কিলোভোল্টের ট্রান্সমিশন লাইনের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ৪৭৫৫ সার্কিট কিলোমিটার। ২০০১ নাগাদ এটি হয়ে ওঠে ২৩০ কিলোভোল্টের ট্রান্সমিশন লাইনের ক্ষেত্রে ১১৪৪ সার্কিট কিলোমিটার এবং ১৩২ কিলোভোল্টের ট্রান্সমিশন লাইনের ক্ষেত্রে হয়ে ওঠে ৪৯৬২ সার্কিট কিলোমিটার।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি পৃথক বিভাগ হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগ যাত্রা শুরু করে ১৯৯৮ সালের ২৫ মার্চ। এ বিভাগের ওপর অর্পিত মূল দায়িত্ব হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন এবং এ সম্পর্কিত কার্যক্রম। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৬ নং অনুচ্ছেদে বিদ্যুৎ-কে অন্তর্ভুক্ত করে বলা হয়, ‘নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করিবার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতীকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তরসাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’

বিদ্যুৎ খাতের ব্যবস্থাপনা কাঠামো

বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন মোট ১৮টি দফতর, সংস্থা ও কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে দফতর/সংস্থার সংখ্যা ৫টি, সেল ১টি, কোম্পানির সংখ্যা ১১টি এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ১টি। বিদ্যমান সংস্থা/কোম্পানিসমূহের মধ্যে ৭টি সরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিয়োজিত রয়েছে। এসব সংস্থা/ কোম্পানি হলো বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লি., আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লি., ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লি., রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লি., বি- আর পাওয়ারজেন লি. ও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লি.। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লি. এককভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। অপরদিকে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লি. ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি., ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. ও নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লি.। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় ও বিতরণ তথা ত্রিবিধ কাজে সম্পৃক্ত। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে বেসরকারি খাতও। নবায়নযোগ্য জ্বালানি কার্যক্রমের পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, সম্প্রসারণ ও তদারকি করার জন্য ‘টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে নব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ এনার্জি এন্ড পাওয়ার রিসার্চ কাউন্সিল’ কাজ করছে। আর বিদ্যুৎ খাতে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট’ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় ‘প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের দফতর সকল উচ্চ ও মধ্যম চাপের নতুন বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র ও স্থাপনা পরিদর্শন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে বিদ্যুৎ সংযোগের অনুমোদন প্রদানের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক কাজে পেশা জ্ঞানসম্পন্ন উপযুক্ত ঠিকাদার, প্রকৌশলী ও ইলেকট্রিশিয়ান জনকে চিহ্নিত পূর্বক তাদের অনুকূলে বৈদ্যুতিক ঠিকাদারী লাইসেন্স, সুপারভাইজার সার্টিফিকেট ও কারিগরি পারমিট ইস্যুকরণ ও জ্বালানি নিরীক্ষণ বিষয়সমূহ তদারকি করে থাকে। এছাড়া পাওয়ার সেল বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ, এ খাতের পারফরমেন্স পরিবীক্ষণ, ট্যারিফ, সংস্কার কার্যক্রম ও বিদ্যুৎ খাতের অন্যান্য কারিগরি বিষয়ে ও নীতি প্রণয়নে বিদ্যুৎ বিভাগকে সহযোগিতা প্রদান করে থাকে।

বর্তমান বিদ্যুতের অবস্থা

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ি ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা বিদ্যুৎ আমদানি, ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৫ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এই অর্থবছরেও বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ খাতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সেবা প্রদানে বিদ্যুৎ বিভাগের বলিষ্ঠ ভূমিকা উত্তরোত্তর বর্ধিত হচ্ছে। বর্তমানে ৪ কোটি ৩১ লক্ষ গ্রাহব রয়েছে বিদ্যুতের। বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী শতকরা ৯৯.৫০ ভাগ হতে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে শতভাগে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুতের বিতরণ সিস্টেম লস কমিয়ে ৭.৭৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬০৮.৭৬ কিলোওয়াট ঘণ্টায় উন্নীত হয়েছে। দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং শতভাগ বিদ্যুতায়ন সফলভাবে সম্পন্ন করায় বিদ্যুৎ বিভাগকে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২ অর্জন করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এছাড়াও বিদ্যুৎ খাতে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বোপরি গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নে এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) বাস্তবায়ন করায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কারও অর্জন করে এই খাত।

স্বাধীনতার ৫১ বছরের অগ্রযাত্রা নিয়ে কথা হয় পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইনের সাথে। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিদ্যুৎ খাতকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সারাবিশ্বে বাংলাদেশের সংবিধানই একমাত্র সংবিধান যেখানে বিদ্যুতকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে সন্নিবেসিত করা হয়েছে। সংবিধানের ১৬ নং অনুচ্ছেদে বিদ্যুৎ-কে অন্তর্ভুক্ত করে বলা হয়েছে যে, নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য দূর করতে কৃষিবিপ্লবের বিকাশে, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতীকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তরসাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তখনকার আমলে সেই ঘোরাশাল ইউনিট-১ ইউনিট-২ সিদ্ধিরগঞ্জ এগুলা বঙ্গবন্ধুর আমলেই হয়েছিল। এর পর ১৯৭৫ সালের আগস্টের পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎখাত খুব বেশি আগাতে পারেনি। তখন উৎপাদন ছিল ১৯০০ মেগাওয়াট।

তিনি বলেন, এরপর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখা হাসিনা ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎকে বেসরকারী খাতে উন্মুক্ত করে। এতে বিনিয়োগের যে বাধাটা ছিল সেটা দূর হয়। এরপর বর্তমানে যে ২২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ (নবায়নযোগ্য বাদ দিয়ে) উৎপাদন হচ্ছে এগুলো সব বঙ্গবন্ধু কন্যার অবদান। এরপর বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনা অদক্ষতা তিনি বিদ্যুৎখাত সংস্কার করেন। তখন বিডিবি ছিল একমাত্র পতিষ্ঠান যারা উৎপাদন সঞ্চালন ও বিতরণ করত। এর পর তা বেসরকারী করণের ফলে এসবের মধ্যে কম্পিটিশন বাড়ছে। একটা সময় সিস্টেম লস ছিল ৩৫ শতাংশ। এখন তা ১০ শতাংশয় নেমে এসছে। ৫১ বছরে বিদ্যুৎ খাতে যে অভাবনীয় অর্জন সেটা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে শুরু হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা তা বিস্তার করেছে। মাঝখানে খুব বেশি আগাতে পারেনি এই খাত। বঙ্গবন্ধু সবার জন্য বিদ্যুতের যে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে বঙ্গবন্ধু কন্যা তা বাস্তবায়ন করেছেন। আমরা এখন নিরবচ্ছিন্ন নিয়ে নয়, বিদ্যুতের মান নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি যে সেই যাত্রাতেও আমরা সফল হব। বিগত ১০০ বছরেও যেটা হয়নাই। বিদ্যুৎখাতে বিগত ১৪ বছরে সেই সফলতা এসেছে। সুত্র: ঢাকা মেইল

পাঠকের মতামত