প্রকাশিত: ২৪/০৫/২০২২ ৬:১৮ পিএম , আপডেট: ২৪/০৫/২০২২ ১০:৩১ পিএম


স্বপ্নের পদ্মা সেতু ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত অপেক্ষায় থাকা সাধারণ মানুষ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ছাড়িয়েছে ৯৮ শতাংশ। সেতুজুড়ে চলছে রেলিংয়ের পাশাপাশি ল্যাম্পপোস্টের সঞ্চালন লাইন, দুই পাড়ে সাব-স্টেশনে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ৷

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের সংযোগ সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে গত সোমবার (২৩ মে) বিকালে। এর আগেই মূল অংশের পিচ ঢালাই কাজের শেষ হয়। কর্মযজ্ঞের ধারাবাহিকতায় দুই পাড়ের সংযোগ সড়কের পিচ ঢালাই কাজ শেষ হয়। আগামী ২৫ জুন সেতু খুলে দেওয়ার খবরে পদ্মা তীরের মানুষ আনন্দে আত্মহারা।

সোমবার (২৩ মে) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সর্বশেষ জাজিরা অংশের সংযোগ সড়কের (সাউথ ভায়াডাক্ট) পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ করেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও নির্মাণ শ্রমিকরা। পুরো সেতুর পিচ ঢালাই শেষ হওয়ায় এখন যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সড়কপথ। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যান চলাচল উপযোগী করে তুলতে সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়েছিল গত বছরের ১০ নভেম্বর। পাঁচ মাস ১৯ দিনের মাথায় গত ২৯ এপ্রিল মূল সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার অংশে সে কাজ শেষ হয়। এরপরই সমানতালে শুরু হয় দুই পাড়ের সংযোগ সড়কের পিচ ঢালাই।

এদিকে, সেতুর অবশিষ্ট কাজের মধ্যে রোড মার্কিং ও সেতুকে আলোকিত করতে বসানো ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চলছে পুরোদমে। শুরু হয়েছে রেলিং বসানোর কাজ। সূত্র জানায়, চলতি মাসের মধ্যেই শেষ হবে রোড মার্কিংয়ের কাজ। বিদ্যুৎ সংযোগের কাজও চলছে। পরিকল্পনা মতো কাজ এগোলেই নির্ধারিত সময় ১ জুনে জ্বলে উঠবে বাতিগুলো।

বিশ্বব্যাংক টালবাহানা করে অর্থ প্রদানে সরে দাঁড়ালে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় নিজস্ব অর্থায়নে মূল নির্মাণ শুরু হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতুর।

লৌহজংয়ের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই ভালো লাগা ভাষায় বোঝাতে পারবো না। বহু প্রতীক্ষিত সেতু খুলে দেওয়ার দিন তারিখ হয়েছে, এই সংবাদটি আমাদের জন্য বিশেষ করে পদ্মা পাড়ের মানুষের জন্য গৌরবের।

মাওয়ার স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর মিয়া বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন-তারিখ ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে দেশ পদ্মা সেতুর যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।’

মেদিনীমণ্ডল গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর মধ্যদিয়ে পুরো অঞ্চলের চেহারা বদলে যেতে শুরু করেছে। অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে। আর সেতুর কাজ শুরু থেকে ২০১৫ শেষ দিকের সঙ্গে ২০২২ সাল তুলনা বিস্ময়কর। চিন্তা করা যায় না কত বেশি বদলে গেছে সেতুর দুই পাড়।’

কুমারভোগ চাঁন্দের বাড়িতে ১/২টি দোকান ছিল। সেখানে এখন বহুতল মার্কেট। বিপণী বিতান, ব্যাংক-বীমাসহ শত শত দোকান। মুন্সীগঞ্জের লৗহজং ও শ্রীনগর পাশাপাশি দুইটি উপজেলায় ও শরীয়তপুরের জাজিরা এবং মাদারীপুরের শিবচর এই চার উপজেলায় বড় রকমের পরিবর্তন স্পষ্ট। সবখানেই পদ্মা সেতুর জৌলুশ।

এর পাশাপাশি প্রায় সাড়ে ৫ বছর ধরে এই মহাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত সেতু সংশ্লিষ্ট সবাই দারুণ উজ্জীবিত। পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেতুর কাজ উদ্বোধন পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারায় প্রকল্পের সবাই খুশি। এই সেতু নতুন সক্ষমতা সৃষ্টি করেছে। যা দেশকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। এখানে কর্মরতরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছেন, এটি অনেক কিছু। এই সেতুতে কাজ করতে এসে অভিজ্ঞতায় অনেকের জীবনও পাল্টে গেছে।’

পদ্মা সেতু। ছবি-ইত্তেফাক
সেতুজুড়ে এখন চলছে শেষ পর্যায়ের কাজ। বিদেশ থেকে আসা অ্যালুমিনিয়ামের রেলিং স্থাপনের পাশাপাশি ল্যাম্পপোস্টের সঞ্চালন লাইন, দুই পাড়ে সাব-স্টেশনে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ৷ দ্রুত এগোচ্ছে নাম ফলক ও ম্যুরাল তৈরিও।

এ ছাড়াও, মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে চলছে ওজন স্টেশন ও টোল আদায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের তোড়জোড় এখন। তৈরি করা হচ্ছে অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন রাখার ওজন ইয়ার্ড। আর সেতু ঘিরে নতুন সড়ক নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সেতুর অ্যাপ্রোচ যুক্ত করা হচ্ছে পরিকল্পনা মাফিক, যা সেতুর মুখে যানজট এড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে। আর পর্যটকদের ভিড় সামাল দেওয়া নতুন পর্যটন হাব শিমুলিয়া ও মাওয়ার দিকেও দুই পাশ দিয়ে সড়কের ভিন্ন লেন তৈরি করা হচ্ছে। সড়কগুলো আলোকিত রাখতে লাইটপোস্ট এবং সুশৃঙ্খল চলাচলের সিগনাল পোস্ট বসানো হয়েছে।

সেতুর কাউনডাউনের দিনটি থেকে এই পর্যন্ত বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে পরিবর্তন হয় কাজের পরিসর। তবে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী হাজার হাজার কর্মীদের পদচারণায় মাওয়ার আশেপাশে তৈরি হয় নতুন নগরায়ন। যা ক্রমেই বিকশিত হচ্ছে।

প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আর সেতুর নিচতলার রেললাইন ঘিরে রাজধানী ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত চলমান রেল লিঙ্ক প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...