উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ
উখিয়ায় অনিয়ম নিয়ে কথা বলায় চাকরি হারালেন এনজিও কর্মী

উখিয়া-টেকনাফ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থায় স্থানীয় মাঠকর্মীদের দেদারসে ছাঁটাইয়ের মিশন চলছে সম্প্রতি উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত উন্নয়ন সংস্থা ‘ডিএসকে’ পরিচালিত ওয়াশ প্রকল্পে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলে চাকরি হারানোর অভিযোগ করেছেন ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর আল মাহমুদ সোরভ। তিনি এব্যাপারে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে৷ চাকরিচ্যুত সোরভ জানিয়েছেন, প্রকল্পে দীর্ঘদিন কাজ করার পর সত্য উদঘাটনের কারণে তাকে কোনো নোটিশ ছাড়াই বরখাস্ত করা হয়েছে।
সোরভ আরও জানান, তিনি ৭ অক্টোবর ২০২৪ থেকে ক্যাম্প-১০-এ কাজ শুরু করেন এবং পরে ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ক্যাম্প-৫-এ কর্মরত ছিলেন। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ৩০ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত। তবে, ৮ জুলাই ২০২৫ তারিখে বিকেল ৪:২৫ মিনিটে তাকে হঠাৎ একটি ইমেইলে জানিয়ে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়।
সোরভের অভিযোগ অনুযায়ী, প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাইনুল হাসান, প্রকৌশলী আব্দুল করিম এবং স্বাস্থ্যবিধি কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মে জড়িত।
তাছাড়া প্রকল্পে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই আত্মীয় ও পরিচিতদের নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। হাইজিন অফিসার নাসরিন আক্তার তার এক আত্মীয় মাসুমকে পরীক্ষার ছাড়াই সরাসরি নিয়োগ দেন। আবার প্রকৌশলী নিয়োগে মেধাবীদের বাদ দিয়ে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে প্রার্থীদের বঞ্চিত করা হয়।
স্বেচ্ছাসেবকদের হয়রানি নিয়ে সোরভ জানান, হোস্ট কমিউনিটি থেকে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ না করে, একতরফাভাবে রোহিঙ্গাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। বেতন কাটা, ছুটি না দেওয়া, পক্ষপাতমূলক আচরণও নিয়মিত হতো বলে সোরভ দাবি করেন।
প্রকল্প উপকরণ যেমন ল্যাট্রিন, ব্যাটারি, লোহা বিক্রি এবং ব্যক্তিগত বাড়িতে শ্রমিক পাঠিয়ে কাজ করানোর অভিযোগও উঠেছে। একাধিক রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবক এসব বিষয়ে মৌখিকভাবে স্বীকার করেছেন বলেও সোরভ জানান।
সোরভ আরও বলেন, “প্রকল্পে কাজ করার সময় বারবার দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবাদ করেছি। আমি বলেছি, কিভাবে নিয়োগে অনিয়ম হচ্ছে, কিভাবে উপকরণ বিক্রি হচ্ছে। আর এর ফলেই তারা আমাকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেয়।”তিনি অভিযোগ করেন, তার কোনো লিখিত ব্যাখ্যা বা তদন্ত ছাড়াই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে, যা একজন সৎ কর্মীর জন্য চরম অসম্মানজনক ও ক্ষতিকর।
সোরভ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এই বিষয়ে তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তার অভিযোগ, এখন তারা প্রমাণ মুছে ফেলতে চেষ্টা করছে, যাতে সত্য উদঘাটন না হয়। শুক্রবার শনিবারও কাজ করে প্রমাণ মুছে ফেলেছেন অনেককিছু৷
তিনি বলেন, আমি চাই, আমি যেন আমার চাকরিতে ফিরে যেতে পারি এবং যারা দুর্নীতিতে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আর পরিবার তার চাকরির উপর নির্ভরশীল ছিল। এখন চাকরি হারিয়ে পরিবার নিয়ে চরম অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছেন।
এ বিষয়ে ডিএসকের ওয়াশ প্রকল্প কর্মকর্তা মাইনুল হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সোরভ দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিলে অফিসের পরিবেশ বিঘ্নিত করতেন এবং বিভিন্ন সময়ে হুমকি-ধামকি দিতেন। প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা অনুযায়ী, এসব আচরণ অগ্রহণযোগ্য হওয়ায় তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।কথোপকথনের একপর্যায়ে মাইনুল হাসান প্রতিবেদককে অফিসে চায়ের নিমন্ত্রণ জানান। তবে প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি আর কথা না বলে ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন৷
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে অবশ্যই স্থানীয় জনগণকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুযোগ দিতে হবে।
তথ্য সূত্র : উখিয়া বার্তা
পাঠকের মতামত