প্রকাশিত: ১৪/১০/২০১৭ ৯:১১ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:১৬ পিএম

আহ্‌রার হোসেন::
বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মধ্যে গত তিনদিন ধরে কলেরার ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক খাওয়ানোর একটি কর্মসূচি চলছে।
বলা হচ্ছে এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম কলেরার ভ্যাকসিন কর্মসূচি। কর্মকর্তারা বলছেন, এরই মধ্যে তারা প্রায় সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গাকে এই ভ্যাকসিন খাইয়ে ফেলেছেন।
এসব রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে যখন ছিল, তখন কোনরকম কোন ভ্যাকসিন বা টিকাদান কর্মসূচির আওতায় তারা ছিল না। রোগ হওয়ার আগেই ওষুধ কীভাবে খায় সেটাই তারা জানতেন না। কলেরার এই ভ্যাকসিন খেতে গিয়ে কি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন তারা?
বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসা মিয়ানমারের ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী গত তিনদিন ধরে যাচ্ছেন নতুন এক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে।
তারা জীবনে এই প্রথমবারের মতো কোন অসুখের টিকা বা প্রতিষেধক গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন।
অসুখ হওয়ার আগেই যে অষুধ খাওয়া যায় সেই ধারণাই এদের ছিল না।
শত শত টিকাদানকর্মী তাদের খাওয়াচ্ছেন মুখে খাওয়ার কলেরার টিকা। এরই মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গাকে এই টিকা খাওয়ানো হয়েছেবলা হচ্ছে এটি হতে যাচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম কলেরার টিকা বিতরণ কর্মসূচি।
বৃহত্তম কর্মসূচিটি পরিচালিত হয়েছিল হাইতিতে, ২০১৬ সালে।
বালুখালি শরনার্থী শিবিরের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ভোর থেকে যে লম্বা লাইনটি হয়েছে সেখানে কলেরার টিকা বিতরণ করছিল একটি ভ্রাম্যমাণ টিকাদানকারীর দল।
লাইনের অনেকেই এরই আগেই টিকা গ্রহণ করেছেন। যারা করেননি, তারা এগিয়ে আসছেন।
আবু মুসা নামে বছর পঁচিশেকের এক তরুণ এগিয়ে এলেন। একটি কাঁচের অ্যাম্পুল খুলে তার মুখে ওষুধটুকু ঢেলে দিলেন স্বাস্থ্যকর্মী।
তরুণটি মুখ বিকৃত করে গিলে ফেলল।
যদিও ওষুধ কিছুটা গন্ধ লেগেছে তার কাছে, তারপরও তিনি খুশী বলে জানালেন।
মিয়ানমারে যখন ছিলেন, তখন কি এমন কোন ভ্যাকসিন তিনি পেয়েছেন কখনো, জানতে চাইলে বললেন, ”না। এবারই প্রথম।”
কিন্তু যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির কাছে ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক গ্রহণের ধারণাটাই নতুন, তাদের এটা খাওয়ানো কতটা কঠিন?
ভ্রাম্যমাণ টিকাদান কর্মীদের দলনেতা আবদুল খালেক চৌধুরী বলছিলেন, ”কিছু লোক খাইতে ইচ্ছা করে, কিছু লোক করে না। আমরা হ্যান্ডমাইক নিয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করছি।”
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এতেও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন না অনেকে।
কুতুপালং আমগাছতলা বস্তি নামক একটি শিবিরে এরই মধ্যে শেষ করা হয়েছে টিকাদান কর্মসূচি।এখানে একটি ঝুপড়ি ঘরের দরজায় ছোট্ট শিশু কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তরুণী বধূ সলেমা খাতুন।
তিনি বললেন, ”ভাল আছি, অষুধ কি জন্য খাব? অসুখ হওয়ার আগে আবার অষুধ খায় কেমনে?”
সন্দেহ থাকলেও নিজের শিশুকে অবশ্য টিকাদান কেন্দ্রে পাঠিয়ে ওষুধ খাইয়ে এনেছেন বলে জানালেন সলেমা খাতুন।
পাশের ক্যাম্পের বৃদ্ধ রশিদ আহমেদ অবশ্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছেন কলেরার টিকার জন্য।
এখনো তার ক্যাম্পে টিকাদান কর্মীরা আসেনি।
এই ভ্যাকসিন হবে তার জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা।
”এসব ওষুধ মিয়ানমারে আমরা কখনো দেখিনি। পেটব্যাথা কিংবা হালকা পাতলা অসুখ বিসুখ হলে দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেতাম আমরা,” বলিছেলন রিশদ আহমেদ।
বিদেশী দাতা গোষ্ঠি ও জাতিসংঘের সহায়তা এই টিকাদান কর্মসূচি চালাচ্ছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম বলছেন, ”এই ধরণের কিছু লোক বাদ পড়ছে বলে আমরা বলছি আশি ভাগের বেশি সাফল্য পাওয়ার কথা। আমরা বলছি না যে শতভাগ মানুষকে টিকা কর্মসূচীর আওতায় আনতে পারছি।”
ডা. সালাম আরো বলছেন, এই কলেরার প্রতিষেধকই এই এলাকার রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রথম টিকাদান কর্মসূচি নয়।
এরই মধ্যে তারা দেড় লাখ শিশুকে হাম রুবেলা, ৭০ হাজার শিশুকে পোলিও এবং ৬৫ হাজার শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর একটি কর্মসূচি শেষ করেছেন।
ফলে এরই মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টিকা বা ভ্যাকসিন সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা হয়ে গেছে বলে বর্ণনা করছিলেন তিনি। সুত্র::বিবিসি বাংলা

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগ, পরীক্ষায় অনুপস্থিত থেকেও উত্তীর্ণ!

কক্সবাজারে স্বাস্থ্য সহকারীসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষাকে ঘিরে গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষা ...

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যশোরে ৮.৮ ডিগ্রি, টেকনাফে সর্বোচ্চ ৩১

শীতের তীব্রতা বাড়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে দেশের ...

১৩ রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি, ইউপি উদ্যোক্তার স্বামী কারাগারে

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ভুয়া সিল–স্বাক্ষর ব্যবহার করে ১৩ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্মনিবন্ধন তৈরির ...