২০১৯ সাল জুড়ে আলোচনায় ছিল কক্সবাজার

মুহিববুল্লাহ মুহিব::
২০১৯ সালের সকল দুঃখ-বেদনা ভুলে মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে নতুন আশা নিয়ে বরণ করছে ২০২০ সালকে। রাত ১২ টার পর ইংরেজি নববর্ষ ২০২০ সালকে স্বাগত জানাবে পুরো দেশ। আর বিদায়ী বছর ২০১৯ এ নানান ইস্যুতে আলোচিত ছিল দেশের সাগরতীরবর্তী ও পর্যটন শহর কক্সবাজার।

এ বছর সবচেয়ে আলোচনায় ছিল রোহিঙ্গা ও ইয়াবা নির্মূল ইস্যু। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৭ লাখের বেশী রোহিঙ্গা। নতুন-পুরাতন মিলিয়ে কক্সাবজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখের অধিক। এসব রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক চাপে ফেলে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে গঠন করা হয় যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি।

যে কমিটি রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে কাজ করবে। কিন্তু ২০১৮ পার করে ২০১৯ এ এসে দফায় দফায় চেষ্টা করার পরও রোহিঙ্গাদের অনীহারমুখে সেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চালু করতে পারেনি সরকার। যা ছিল দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত।

২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা সংকটের দুই বছর উপলক্ষে মহাসমাবেশের ডাক দেন রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ। ঘোষণা অনুযায়ী প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার সমাগম ঘটে ওই মহাসমাবেশে। যা নাড়িয়ে পুরো দেশকে।

এছাড়াও এ বছরের (২০১৯) ৪ ফেব্রুয়ারী রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে আসেন হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। এরআগে ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে রোহিঙ্গা নারীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার বর্ণনা শুনে ঢাকায় আসার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন এ হলিউড অভিনেত্রী। সে সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, জোলি যৌন নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের দেখতে বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা করছেন। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ‘ইউএনএইচসিআর’-এর বিশেষ দূত হিসেবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসেছেন। তার এ সফরও খবরটিও ছিল বেশ আলোচিত। এছাড়াও আলোচনায় ছিল মার্কিন, চীন প্রতিনিধি ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর।

চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারী হয়েছে দেশের ইয়াবা রাজ্যখ্যাত টেকনাফের ইয়াবার গডফাদারদের আত্মসমর্পণ। যা পুরো দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এসময় প্রায় ১০২ ইয়াবা গডফাদার আত্মসমর্পণ করে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রায় তিন শতাধিক ইয়াবা কারবারি, ডাকাত ও সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে এ বছরেই। যা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরই সবচেয়ে আলোচিত বন্দুকযুদ্ধ ছিল টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা সম্রাট হাজী সাইফুল করিমের সঙ্গে পুলিশের গুলাগুলি। এরপর ২৩ নভেম্বর মহেশখালী-কুতুবদিয়ার ৯৫ জলদস্যু ও অস্ত্র কারীগরদের আত্মসমর্পণও বেশ আলোচনায় আসে।

এছাড়াও আলোচিত ছিল চকরিয়ার ছাত্রলীগ কর্মী আনাস ইব্রাহীম ও টেকনাফের হ্নীলা ইউপির জাদিমোরার যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যা ও উখিয়ার একই পরিবারের চারজনকে গলাকেটে হত্যা ছিল বেশ আলোচিত ঘটনা।

চলতি বছরের ২৫ মে চকরিয়া উপজেলার ওয়েস্টার্ন প্লাজা মার্কেটে ঈদের বাজার করতে গিয়ে বখাটেদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয় আনাস ইব্রাহীম। এসএসসি উত্তীর্ণ আনাস ছাত্রলীগ কর্মী ছিল। মামলায় নাম উল্লেখিত ৬ আসামির মধ্যে ৩ জনকে গ্রেফতার ও একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। তবে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল হোতা মোহাম্মদ সোহেল ও মোহাম্মদ বাবু। যারা স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আলমের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে তাদের গ্রেফতার করতে পারছে না পুলিশ। পুলিশের অনীহার কারণে সুষ্ঠু বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছেন আনাসের স্বজন ও প্রতিবেশীরা। নতুন বছরে বাকি আসামীদের গ্রেফতার করে সুষ্ঠু বিচারের দাবি তাদের।

২৬ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে উখিয়া উপজেলার পূর্ব রত্না এলাকার তালাবদ্ধ বাড়ি থেকে একই পরিবারের চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন, ওই এলাকার মৃত প্রবীণ বড়ুয়ার স্ত্রী সখি বড়ুয়া ও তার ছেলের বউ এবং নাতনী।

২২ আগস্ট টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জাদিমোরা এলাকার মোনাফ কোম্পানীর ছেলে ওমর ফারুককে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

রোববার ১ সেপ্টেম্বর ভোরে কক্সবাজারের টেকনাফে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামি রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। এ সময় পুলিশ বেশ কিছু অস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার করে। এদিকে তার কাছে বাংলাদেশের পরিচয় পত্র (এনআইডি) পাওয়া গেছে। যা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল আলোচনা-সমালোচনার।

এছাড়াও ২২ বছর পর সেন্টমার্টিনে বিজিবির বিওপি স্থাপন করেছে বিজিবি। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল সেন্টমার্টিনজুড়ে বিজিবি মোতায়েন করে সরকার। মূলত সেন্টমার্টিনকে মিয়ানমার তাদের দাবি করার পর পরই বিজিবি মোতায়েন করে। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) তুলে নেয়া হয়। প্রায় ২২ বছর পর আবারো সেন্টমার্টিনে বিজিবি মোতায়েন করাকে অনেকে আলোচনায় নিয়ে আসে। সুত্র: কক্সবাজার ভয়েস