
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের মানসিক ক্ষত দূর করতে তাদের ড্রামা থেরাপি প্রদান করা হয়েছে। দুই পর্বে চারদিনে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে বিভিন্ন ক্যাম্পে মোট দশ হাজার রোহিঙ্গা শিশু-কিশোর এই থেরাপিতে অংশ নেয়।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ পিপলস থিয়েটার এসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে শুক্রবার এবং আজ শনিবার দ্বিতীয় দফায় এই ঘেরাপি প্রদশর্নী অনুষ্টিত হয়। দুদিনে বিভিন্ন ক্যাম্পে মোট চার হাজার শিশু-কিশোর এই ড্রামা থেরাপির প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। এর আগে প্রথম পর্যায়ে গত ৭ ও ৯ অক্টোবর টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় নেয়া ছয় হাজার রোহিঙ্গা শিশু-কিশোর এই ঘেরাপিতে অংশ নিয়েছিল। চারদিনে মোট দশ হাজার রোহিঙ্গা শিশু এই ড্রামা ফেরাপিতে অংশ নিয়েছে।
শিশুবান্ধব সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর পরিকল্পনায় শিল্পকলা একাডেমি, পিপলস থিয়েটার এসোসিয়েশন এবং কক্সবাজার শিল্পকলা একাডেমির মোট পনের জন শিল্পী এই ড্রামা থেরাপি প্রদশর্নীতে অংশ নিচ্ছেন। দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন শিল্পকলা একাডেমির লেকচারার সুজন মাহবুব।
সুজন মাহবুব আজ কক্সবাজার থেকে ফোনে জানান, ভীত সন্ত্রস্থ শিশুদের সামনে ড্রামা থেরাপি প্রদর্শনের সময় তাদের ভীত-সন্ত্রস্থ মুখায়বের ভীতির কালো মেঘ সরে গিয়ে হাস্যজ্জ্বল আনন্দের চিত্রপট ফুটে ওঠে। থেরাপির সময় শিশুরা নানা ধরনের আনন্দ প্রকাশ করে। তাদের অসংখ্য অভিভাবকদের মধ্যেও আনন্দের ভাব লক্ষ্য করা যায়।
তিনি জানান, দুই দফায় চারদিনে বিভিন্ন ক্যাম্পে মোট দশ হাজার রোহিঙ্গা শিশু-কিশোর এই থেরাপিতে অংশ নেয়। শরনার্থী শিশুদের মানবিক সহমর্মিতার মাধ্যমে মানসিক শক্তি জোগাতে এবং বিনোদনের মধ্য দিয়ে শিশু তাদের বিনোদন দেয়ার জন্য একাডেমি এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
ড্রামা থেরাপি প্রদর্শনীতে শিল্পীরা মুখোশ নির্মাণ, থিয়েটার গেম, সার্কাস প্রদর্শন, পারফরমেন্স আর্টস প্রদর্শন করছেন। শিশুদের সামনে বসিয়ে কাগজ কেটে, রঙ মাখিয়ে সুতা পরিয়ে বিভিন্ন অবয়বের মুখোশ বানিয়ে শিশুদের পরিয়ে দিলে তারা আনন্দ-উল্লাস করে। ফুল, পাখী, গাছ তথা প্রকৃতির সৌন্দর্য্যরে বিভিন্ন অবয়বে মুকুট বানিয়ে তাদের সামনে ধরলে কে কার আগে পড়বে এ ভাবনায় শিশুরা হৈহুল্লোড় করে মেতে উঠে। কুতুপালং বালুখালী, ঘুমধুম, পালং খালী, থ্যাংখালী, টেকনাফের উনছিপ্রাং’সহ বিভিন্ন এলাকায় এই প্রদর্শনীগুলো অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া শিল্পীরা চার্লি চ্যাপলিন ভঙ্গিমায় হাঁটলে, নাট্যকর্মীরা ক্লাউন সাজলে শিশুরাও সেই মুহুর্তে একই হাঁটার ভঙ্গিমা নকল করে হাঁটতে থাকে। অনেকগুলো বল বাতাসে ছুঁড়ে ধরা ছোঁয়ার মধ্যে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ তথা হ্যান্ড স্কিলিং, কিংবা ভারসাম্য বজায় রেখে বডি থর্মিং’এর মতো অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শন দেখে শিশুদের চোখে মুখে বিস্ময় ও নির্মল আনন্দ ফুটে ওঠে।
শিশুদের সঙ্গে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের অভিবাবকরাও এই প্রদর্শনী উপভোগ করেন। ড্রামা থেরাপিতে অংশ নেন ঢাকা থেকে শিল্পী সুজন মাহাবুর, বিপ্লব, হাবিব, বিপুল, হিমু, শিশিরসহ শিল্পকলা একাডেমি ও পিপলস থিয়েটারের পনেরজন শিল্পী ও সংস্কৃত কর্মী। তাদের সঙ্গে কক্সবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আয়াজ মাবুদসহ স্থানীয় শিল্পকলা একাডেমির অন্যান্য শিল্পীরাও ছিলেন। বাসস
পাঠকের মতামত