প্রকাশিত: ১৮/০৯/২০১৬ ৮:৪৪ পিএম
উখিয়ায় বিধ্বস্ত হেলিকপ্টার

asa-max-width-640-max-height-480‘করিমের জায়গায় রহিম গেলে কোনও বিষয় নয়, কিন্তু করিমের জায়গায় যদি সাকিব আল হাসান যান, তাহলে অবশ্যই সেটা সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে জানানো উচিত ছিল। যদি জানাতো তাহলে আমরা মনিটর করতে পারতাম, আমাদের নজরদারিতে থাকতো সেটি। সাকিব দেশের সম্পদ, তাকে নিয়ে উড্ডয়ন করার বিষয়টি আমাদের জানানো উচিত ছিল তাদের’, শুক্রবার কক্সবাজারে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এ মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন্স) উইং কমান্ডার চৌধুরী মোহাম্মদ জিয়া-উল-কবির।

উইং কমান্ডার জিয়া-উল-কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে কোনও ফ্লাইটের নির্ধারিত যাত্রী তালিকা সিভিল অ্যাভিয়েশনকে জানাতে হয়। যাত্রী তালিকা যদি শেষ মুহূর্তেও পরিবর্তন হয় তাহলেও সেটি ফ্লাইট পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ আমাদের জানাতে বাধ্য।’

‘আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টি জানানোর নিয়ম হলেও দেশবরেণ্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মেঘনা অ্যাভিয়েশন আমাদেরকে দুর্ঘটনার পরে সাকিবের বিষয়টি জানিয়েছে, কিন্তু তাদের উচিত ছিল বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানানো,’ মন্তব্য করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ইনানি নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে কক্সবাজারের উখিয়ার রেজু খালের মোহনায় আমেরিকান রবিনসন কোম্পানির আর সিক্স সিক্স টারবাইন মডেলের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়।দরজা খুলে সেলফি তুলতে ও ভিডিও করতে গিয়েই হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে বলে পাইলটের বরাত দিয়ে জানিয়েছিলেন কক্সবাজারের উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের। দুর্ঘটনায় বিজ্ঞাপনী সংস্থা ওগিলভি অ্যান্ড ম্যাথার এর কর্মকর্তা শাহ আলম নিহত হন।এ ঘটনায় আহত হন হেলিকপ্টারের পাইলটসহ আরও ৪ জন।

জানা গেছে, ৫ সিটের হেলিক্প্টারটি ইনানী বিচ থেকে উড্ডয়ন করে উত্তর দিকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উড়ে আসার পর নামতে নামতে পানির পাশে বালুতে আছড়ে পড়ে। সিভিল অ্যাভিয়েশন থেকে ঘটনাস্থলে যাওয়া কর্মকর্তাদের এ তথ্য জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এদিকে, সিভিল অ্যাভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, চিফ পাইলট শফিকুল রহমান এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে সিভিল অ্যাভিয়েশনকে লিখিত জবাব দেননি। তিনি জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটি জবাব চাওয়ার পর তিনি সেটা দেবেন। তবে, তদন্ত কমিটিকে পাইলট জানিয়েছেন, যে কোনোভাবেই হোক হেলিকপ্টারটির দরজা খুলে গিয়েছিল, তিনি কন্ট্রোল করতে পারেননি।

এদিকে, বিজ্ঞাপনী সংস্থা অগিলভি অ্যান্ড ম্যাথার এর যারা ওই হেলিক্প্টারে ছিল তাদেরকে এখনও তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে ডাকা হয়নি।একটি সূত্র জানিয়েছে, তাদেরকেও ডাকবে তদন্ত কমিটি। তবে তারা এই মুহূর্তে ঢাকাতে নেই, সাতক্ষীরাতে রয়েছেন । দুর্ঘটনার কারণে তারা মানসিকভাবে একটু অসুস্থ হওয়াতে তাদেরকে বিশ্রামে রাখা হয়েছে চিকিৎসকের নির্দেশে। তবে হেলিকপ্টারটির বিধ্বস্ত হওয়ার ধরন নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সূত্রটি জানিয়েছে, কপ্টারটি সোজাভাবে পড়লে এমন চুরমার হয়ে যাওয়ার কথা নয়।

এদিকে, হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হবার ঘটনায় গঠিত হয়েছে একটি তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রধান সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সদস্য (অপারেশন অ্যান্ড প্লানিং) এম মোস্তাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার নানা কারণ থাকতে পারে। তবে সেলফি তোলার বিষয়টি এখন পর্যন্ত আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। কিন্তু যে কোনও ধরনের অ্যাকসিডেন্ট কিংবা ইনসিডেন্টে অনেক ধরনের বিষয় জড়িয়ে থাকে। আবহাওয়া, হঠাৎ বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যাওয়া, বাতাসের গতির অনুকূলতা কিংবা প্রতিকূলতা, বিমানের ইঞ্জিনের কোনও সমস্যা, চাকা খুলে যাওয়া, পাইলটের কোনও ভুল ছিল কিনা, পারিপার্শ্বিক অবস্থাসহ অনেক ফ্যাক্টর এখানে জড়িত। আমরা ক্লু ধরে ধরে এগিয়ে সব ধরনের ফ্যাক্টর খতিয়ে দেখবো। ওখানে যারা প্রত্যক্ষদর্শী ছিল তাদের সঙ্গে কথা বলবো, যারা হেলিক্প্টারে ছিলেন তাদের সঙ্গে কথা বলবো। তদন্ত চলছে তাই এ বিষয়ে এখনই কোনও উপসংহারে আমরা যেতে পারি না। আর পৃথিবীতে বিমান বা হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কারণ একদিনের মধ্যে সামারাইজ করা সম্ভব হয়নি এখনও।

তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য সিভিল অ্যাভিয়েশন কনসালটেন্ট গ্রুপ ক্যাপ্টেন এম আবু জাফর।  হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হবার পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ ১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার মেঘনা অ্যাভিয়েশনে গিয়ে হেলিকপ্টারটির চিফ পাইলট উইং কমান্ডার শফিকুল রহমান এবং মেঘনা অ্যাভিয়েশনের ফ্লাইট অপারেশন অফিসার সাইফুল ইসলামের সঙ্গে পৃথকভাবে দেখা করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তিনি। এম আবু জাফর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা হেলিকপ্টারটির বিষয়ে তার মাদার কোম্পানি রবিনসন কোম্পানিকে মেইল করেছি।ওরা যদি আসতে চায় তাহলে আসবে আর তদন্ত কমিটি তদন্ত করছেই।’

উইং কমান্ডার চৌধুরী মোহাম্মদ জিয়া-উল-কবির বলেন, নানাকথা এখন শুনতে পাচ্ছি আমরা। কিন্তু সেদিকে আমরা কান দেব না, তাতে অনেক সময় তদন্ত অন্যদিকে চলে যায়। অনেকেই এখন অনেক কথা বলতে পারেন কিন্তু আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে তদন্ত প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত। অ্যাভিয়েশনের বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি তদন্ত করছেন, এয়ারক্রাফট ইনভেস্টিগেশন কী করে করতে হয় সেটা নিয়ে তাদের ট্রেনিং রয়েছে, সুতরাং আমাদেরকে তাদের প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এদিকে, সিভিল অ্যাভিয়েশনকে যাত্রী তালিকা না জানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে মেঘনা অ্যাভিয়েশনের কর্মকর্তা (অ্যাকাউন্ট কাস্টমার সার্ভিস) মনজুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের আগে আমরা তাদেরকে সব বিষয়ে জানিয়েছিলাম।এখন আর এসব নিয়ে কথা বলতে চাইনা। তদন্ত চলছে, সব সেখানে বেরিয়ে আসবে।’বাংলা ট্রিবিউন

পাঠকের মতামত

খেলাভিত্তিক শিক্ষায় ব্র্যাকের তথ্য বিনিময় অনুষ্ঠান

শিশুদের খেলাভিত্তিক শেখা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও মনোসামাজিক বিকাশ নিশ্চিতে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ...

১২ ফেব্রুয়ারি ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া ওয়াজ মাহফিল নিষিদ্ধ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ধর্মীয় প্রচার কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ...