
উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
দেশে ইয়াবাসেবীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। গত সাত বছরে মারাত্মক ক্ষতিকর এ মাদকের চাহিদা বেড়েছে ৩৬ গুণেরও বেশি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, আকারে ছোট ও সহজে বহনযোগ্য বলে মাদকসেবীদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইয়াবা। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে আসা এ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া অনেক শিক্ষার্থীও। ঢাকাসহ অন্যান্য বড় শহরে তো বটেই, দেশের প্রত্যন্ত এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা। অন্যদিকে মরণনেশা হেরোইন, গাঁজা ও ‘ইনজেক্টিং ড্রাগ’ বা ইনজেকশন সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারীর সংখ্যাও গত বছরে বেড়েছে। তবে ভালো খবর হলো, কয়েক বছর ধরে ক্রমেই কমে আসছে একসময় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়া ফেনসিডিলের ব্যবহার।
‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ আগামীকাল সোমবার। এ উপলক্ষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রকাশিতব্য বার্ষিক প্রতিবেদনে দেশের মাদক পরিস্থিতির এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এবার ঈদুল ফিতরের ছুটির কারণে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে দিবসটি পালন করা হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) নজরুল ইসলাম সিকদার সমকালকে বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ইয়াবার বিস্তার ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ে এক সভায় ইয়াবার মূল উপাদান ‘অ্যাম্ফিটামিন’ আমদানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২৩ মার্চ ব্যবসায়ীদের চিঠি দিয়ে বলা হয়, তাদের সংরক্ষণে থাকা সব অ্যাম্ফিটামিন ধ্বংস করতে হবে। এর ফলে দেশের ভেতরে ইয়াবা তৈরির কোনো সুযোগ থাকছে না। তিনি বলেন, ইয়াবা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মিয়ানমারকেও চাপ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের একটি বিশেষ অঞ্চল গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ ওই এলাকা হলো ইয়াবার প্রবেশপথ। অন্যান্য মাদক নিয়ন্ত্রণেও কাজ করছে অধিদপ্তর।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, দেশে সুনির্দিষ্টভাবে ইয়াবাসেবীর সংখ্যা কত বা প্রতি মাসে কত পিস ইয়াবা বিক্রি হয়- এ রকম কোনো জরিপের তথ্য নেই। তবে জব্দকৃত ইয়াবার চালান ও মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোয় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এ দুই পরিসংখ্যানেই বিপজ্জনক হারে বাড়ছে ইয়াবা। গোয়েন্দা তথ্যেও দেখা যায়, অন্যান্য মাদককে পেছনে ফেলে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে ইয়াবা। চাহিদা ও সরবরাহের বিষয়টি বোঝার আরেকটি নির্দেশক রয়েছে। তা হলো মাদকটির বিক্রয়মূল্য। চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দাম মোটামুটি স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু সরবরাহ কমে গেলে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় দাম। বিশেষ কিছু সময়ে এই সূত্র ধরে পর্যবেক্ষণ করে চাহিদা বাড়ার প্রমাণ মিলেছে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, মিয়ানমারে অন্তত ৪৮টি ইয়াবার কারখানা থাকার কথা বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থা জানতে পেরেছে। প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা আরও বেশি হবে। এসব কারখানা থেকে সীমান্তপথে ইয়াবা ঢুকছে দেশে। এতে দেশটির সরকারি কিছু কর্মকর্তার সরাসরি মদদ রয়েছে। ইয়াবা পাচার ঠেকাতে এ পর্যন্ত দু’বার দুই দেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। তবে মিয়ানমার এখনও ইয়াবা বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে সম্মত হয়নি। উৎস বন্ধ করা সম্ভব না হওয়ায় ইয়াবা ঠেকানোও মুশকিল হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিলে গত বছর মোট দুই কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ১৭৮ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এর আগে ২০১৫ সালে উদ্ধার করা হয় দুই কোটি এক লাখ ৭৭ হাজার ৫৮১ পিস। আর চলতি বছর শুধু এপ্রিল পর্যন্তই ধরা পড়েছে এক কোটি ৬৪ লাখ ২৮ হাজার ৭০৭ পিস ইয়াবা। বছরের বাকি সময়ে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার চালান ধরা পড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর ইনজেকশনের মাধ্যমে নেওয়া মাদক ধরা পড়েছে এক লাখ ৫২ হাজার ৭৪০ অ্যাম্পুল। আগের বছর তা ছিল মাত্র ৮৫ হাজার ৯৪৬ অ্যাম্পুল। গত বছরে গাঁজা জব্দের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে। ২০১৫ সালে গাঁজা জব্দ হয় ৪০ হাজার ৯১৬ কেজি। আর গত বছর জব্দ হয় ৪৭ হাজার ১০৫ কেজি। এদিকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ধরা পড়েছে ২৪ হাজার ৭৭৬ কেজি গাঁজা। অর্থাৎ এই দুই ধরনের মাদকেরই চাহিদা ও সরবরাহ বাড়ছে। তবে ইনজেক্টিং ড্রাগ নতুন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে বলে কর্মকর্তারা জানান।
পাঠকের মতামত