প্রকাশিত: ০৩/১০/২০১৯ ১১:০৪ এএম

ডেস্ক নিউজ:
রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মানবপাচার প্রতিরোধের লক্ষ্যে এনজিওগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে কঠোর হচ্ছে সরকার। একইসঙ্গে ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া প্রতিরোধেও কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিওদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে গত সপ্তাহে একটি কর্মপরিধিও তৈরি করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় যেন কোনোভাবেই সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে এনজিও কর্মকাণ্ডের আড়ালে কেউ যেন অপতৎপরতা চালাতে না পারে সে বিষয়েও কঠোর নজরদারি করা হবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোর জন্য ১৬টি নির্দেশনা দিয়ে একটি কর্মপরিধি (ফ্রেমওয়ার্ক ফর এনজিও) তৈরি করা হয়েছে এনজিও ব্যুরো থেকে। সেখানে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ-কার্যক্রম বাস্তবায়নে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে। তাদের কাজের জন্য এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে ২০১৮ সালের ৬ মার্চ এনজিওদের জন্য একটি কর্মপরিধি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু জরুরি ত্রাণ কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে তাদের কর্মপরিধি হালনাগাদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

এনজিওগুলোর জন্য তৈরি করা কর্মপরিধিতে বলা হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী সব সামগ্রী নিয়ে সংশ্লিষ্ট এনজিওকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে রিপোর্ট করতে হবে। প্রতি পাতায় এনজিওবিষয়ক ব্যুরো কর্মকর্তার অনুস্বাক্ষরিত কপি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পভুক্ত কর্মীদের তালিকা দাখিল করতে হবে। এর অতিরিক্ত কোনও কর্মীকে কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা যাবে না। কার্যক্রমে সংযুক্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের এনজিওকর্মী কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা পরিচয়পত্র দৃশ্যমানভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

এতে বলা হয়, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করা এফডি-৭ এর প্রাপ্তি স্বীকারপত্র ১৫ দিনের মধ্যে ব্যুরোতে দাখিল করতে হবে। কর্মসূচি বাস্তবায়নের ১৫ দিনের মধ্যে সমাপনী প্রতিবেদন, স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যয়নপত্র এবং ৩০ দিনের মধ্যে অডিট রিপোর্ট ব্যুরোতে দাখিল করতে হবে। চিকিৎসা ও জরুরি সেবাদাতা সংস্থাগুলো ছাড়া কোনও এনজিও সন্ধ্যার পর আশ্রয় শিবিরে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। এনজিওদের কার্যক্রম মানবিক সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। সংস্থা ও প্রকল্পের কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রকল্প বাস্তবায়নকালে রাষ্ট্র, সরকার ও প্রত্যাবাসনবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত হতে পারবেন না। প্রকল্প ব্যয়ের ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী, বিধি মোতাবেক ভ্যাট ও ট্যাক্স কেটে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার প্রমাণ দাখিল করতে হবে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পকক্সবাজারের জেলা প্রশাসন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের তৈরি চাহিদাপত্রের আলোকে জরুরি ত্রাণ প্রকল্পের পণ্য-সেবাসামগ্রী উল্লেখ করে তালিকা অনুযায়ী প্রকল্প প্রস্তাব দাখিল করতে হবে। জরুরি ত্রাণ প্রকল্পে কর্মী বা শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব বাংলাদেশি নাগরিকদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোনও অবস্থায়ই রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিয়োগ এবং নগদ অর্থ বিতরণের কোনও প্রকল্প নেওয়া যাবে না। নগদ অর্থ দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংস্থার ব্যাংকের মাদার অ্যাকাউন্টে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর অনুমোদিত অর্থ ছাড়া অন্য কোনও সংস্থার অর্থ কোনোভাবেই জমা রাখা যাবে না। প্রকল্প তৈরির ক্ষেত্রে হোস্ট কমিউনিটির বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যেমন, বৃক্ষ নিধন, পুকুর, খাল ভরাটের মতো কোনও কাজ করা যাবে না। জরুরি ত্রাণ কর্মসূচিতে যেকোনো মেরামত ও সংস্কার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রকল্প প্রস্তাব দাখিলের আগে জেলা প্রশাসন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রত্যয়ন নিতে হবে।

এনজিওদের জন্য কর্মপরিধি প্রণয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আব্দুস সালাম বলেন, ‘একটি সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্যই এই কর্মপরিধি তৈরি করা হয়েছে। মানবিক সহায়তার বাইরে যেন তারা কোনও কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার ও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মাহবুব আলম তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ বিষয়ে তার কাছে কোনও তথ্য নেই।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজরদারির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্প এলাকার চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ জরুরি। এছাড়া তাদের পর্যবেক্ষণে ওয়াচ টাওয়ার ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে সেখানে। এ ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। কারণ আমরা জানি না, রোহিঙ্গারা কতদিন এখানে থাকবে। তবে আমরা মনে করি, যেকোনো সময় তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়টির সমাধান হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইদানীং আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা দেখছি। তারা পুলিশও হত্যা করেছে। যুবলীগের একজন নেতাকে খুন করেছে। আমরা প্রায়ই ক্যাম্পে হইচই, মারামারি, বিশৃঙ্খলা দেখছি। আর রাতে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় ছাড়া আর কোথাও টহল দিচ্ছেনা। সেজন্য আমরা ওয়াচ টাওয়ারসহ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করবো। সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা লাগাবো যাতে তাদের অবস্থান সবসময় মনিটরিং করতে পারি। আমরা এটাও জানিয়েছি, এসব রোহিঙ্গারা তাদের মূল ভূখণ্ডে এখনও যাতায়াত করে। তারা এখনও ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে আসে। তাই তাদের এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য কাঁটাতারের বেড়া দিতে চাই। এছাড়া তারা নৌকায় করে বিভিন্ন দেশের উদ্দেশে রওনা দেয়। পাচার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমরা শুধু তাদের নজরদারিতে রাখতে চাই।’ এছাড়া গত ২৬ সেপ্টেম্বর ইউরোপিয়ান কয়েকটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, যুক্তরাষ্টের রাষ্ট্রদূত ও কানাডার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সচিবালয়ে নিজ দফতরে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

পাঠকের মতামত

হ্নীলায় শিশু আফসি হত্যা: হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে টেকনাফে মানববন্ধন

টেকনাফের হ্নীলায় শিশু হুজাইফা নুসরাত আফসির হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার কার্যকর ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে এক ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রাত মানেই সন্ত্রাস—‘ইয়ংস্টার’ গ্রুপের অঘোষিত রাজত্ব

কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে স্বশস্ত্র ইয়াবা সন্ত্রাসীদের হামলায় স্কুল শিক্ষক ও তার আত্মীয় ...

কর্ণফুলীতে ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা যুবক গ্রেফতার

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ইয়াবাসহ এক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে ...