সরকার ও এনজিও প্রতিনিধি পরিদর্শন করলেও দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যে কৃষকদের সর্বনাশ!

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া নিউজ ডটকম
প্রকাশিত: ১৭/০৪/২০২৫ ৪:০৮ পিএম

কক্সবাজারের উখিয়ায় লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতেই আবারও ফসলি জমি ও দোকানপাটে ঢুকে পড়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্য। ড্রেনেজ ব্যবস্থার চরম অব্যবস্থাপনায় ক্যাম্প থেকে ভেসে আসা এসব বর্জ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকালে ও গতরাত (১৭ এপ্রিল) বুধবার দিবাগত রাত বারোটার পরে টানা বৃষ্টিতে ৪ নম্বর রাজাপালং ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চাষাবাদযোগ্য জমি সয়লাব হয়ে যায় ক্যাম্পের আবর্জনায়। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় বহু কৃষক, যাদের ফসলী জমিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, “বৃষ্টির পানিতে ক্যাম্প থেকে যেভাবে পলিথিন, প্লাস্টিক, টয়লেটের ময়লা আর বর্জ্য আসে, তাতে জমিতে কিছুই করা যায় না। ধান তো গেলই, জমির উর্বরতা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাঁচ কানি ধানি জমির মধ্যে দেড় কানির মতো আধাপাকা ধান নষ্ট হয়ে গেছে। দোকান মালিক জুলফিকার আলী ভূট্রো জানান, ক্যাম্প সংলগ্ন দোকানগুলোতে পানি ঢুকে লাখ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। গত বছরও লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম সিআইসি বরাবরে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ৪ নম্বর রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মীর সাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর বর্ষা এলেই স্থানীয়রা ক্ষতির মুখে পড়ে। এবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে উপজেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে এলাকাও পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার হেলাল উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ড্রেনেজ সিস্টেম সঠিকভাবে পরিচালিত না হওয়ায় প্রতি বছর কৃষকের জমি ডুবে যায়। এনজিওগুলো ময়লা পরিস্কার করে না, এতে ভোগান্তি বাড়ছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, এই বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। যেহেতু ক্যাম্প কেন্দ্রীক তাই আরআরসির সাথে বসে টেকসই উন্নয়ন এবং কৃষকের ক্ষতি না হয় এমন একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এলাকায় পরিদর্শন করেছি। এনজিওগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উখিয়া অঞ্চলে প্রায় ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে অন্তত ২৫ শতাংশ জমি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যে আক্রান্ত হয়েছে।স্থানীয় উন্নয়ন পর্যবেক্ষক ও পরিবেশকর্মী মাসুম বিল্লাহ বলেন, এই সমস্যা কেবল কৃষিকাজ নয়, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় জড়িত সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া স্থানীয়দের দুর্ভোগ লাঘব সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা সংকট শুধু মানবিক নয়, এটি এখন এক গভীর পরিবেশ ও অর্থনৈতিক সংকটের রূপ নিচ্ছে। স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর ধরে যে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন, তা মোকাবিলায় সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় স্থানীয় জনগণের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে, যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দিতে পারে।

পাঠকের মতামত

বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে চড়ে গিয়েছিলেন কক্সবাজারে, ফেরার পথে ট্রাকচাপায় মৃ,ত্যু

বন্ধুদের সঙ্গে জয়পুরহাট থেকে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন মো. মাছুম (৪৫)। ভ্রমণ শেষে চার বন্ধু মিলে দুটি ...