নিউজ ডেস্ক::
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে যেসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন- তাদের মিয়ানমারেই ফেরত পাঠানো হবে বলে প্রশাসন থেকে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে। কিন্তু এসব রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে কি ফেরত যেতে চান? কী বলছেন তারা? তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা কী? বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এর বাস্তব চিত্র।
শনিবার বিবিসি বাংলার অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়, কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলায় টিলা কেটে ক্ষণস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন হাসিনা। সঙ্গে তার দুই সন্তান। আরো ১৫ জনের সঙ্গে খুপরির মতো জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। ভেতরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থাকতেন হাসিনা।
সেখানকার সহিংসতা থেকে কোনোরকম প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। পেছনে ফেলে এসেছেন ভিটেমাটি আর আত্মীয়দের। বেঁচে থাকার আশায় নতুন একটা দেশে পালিয়ে এসেছেন। কিন্তু এরপর কী করবেন?
হাসিনা বলছিলেন, এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেবেন। তবে এই অবস্থার মধ্যে তিনি যে ফিরে যেতে চান না সেটা পরিষ্কার করে জানালেন।
তিনি বলছিলেন, “সেখানে যে অশান্তি চলছে তার মধ্যে কীভাবে ফিরে যাবো। আমাদের ধরে ধরে নির্যাতন করছে, মেরে ফেলছে। তবে সেখানে যদি শান্তি ফিরে আসে, তাহলে যাওয়ার কথা চিন্তা করতে পারি”।
হাসিনার মতো কয়েক লাখ মানুষ গত ২৫ অগাস্টের পর কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রবেশ করেছেন। তাদের বেশিরভাগ মানুষের পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এ অবস্থায় যখন মানুষগুলো শুধু প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী পরিকল্পনা? তারা কি এখানেই থেকে যেতে চান- নাকি ফিরে যেতে চান মিয়ানমারে?
কক্সবাজারের আরেকটি উপজেলা টেকনাফে রাস্তার পাশেই দেখা পলিথিন দিয়ে তৈরি সারি সারি রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল। সেখানে কথা হচ্ছিল হাসেম আলীর সাথে।
তিনি বলছিলেন, “মিয়ানমারের সরকার যদি তাদের রোহিঙ্গা বলে স্বীকৃতি দেয়, যদি তাদের নাগরিক অধিকার দেয় তাহলে ফিরে যাবো”।
হাসেম আলী বলছিলেন, এর আগেও কয়েকবার তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু আসেননি। কিন্তু এবারে একেবারে অপারগ হয়ে পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। তবে শেষমেশ তাদেরকে মিয়ানমারেই ফিরে যেতে হবে।
রোহিঙ্গাদের জন্য যে নিবন্ধনের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে, সেটাও তাদেরকে শনাক্ত করে দেশে ফেরত পাঠানোর একটা উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
তাহলে বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী আবাসস্থল করতে না পারলে কী করবে তারা?
এই প্রশ্ন শুনে মাজেদা প্রশ্ন করছিলেন, “যদি সেখানে শান্তিই না পায়, তাহলে কেন সেখানে ফিরে যাবো?”
মাজেদার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর তিনি রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। রাখাইনে বেশ অবস্থাপন্ন ঘর ছিল তার।
তিনি বলছিলেন, “বাংলাদেশ যদি আমাদের আশ্রয় না দেয় তাহলে যেন এখানেই তাদের মেরে ফেলা হয়”।
পাশের নাফ নদী দেখিয়ে বলছিলেন, “ফিরে যাওয়ার চেয়ে এই নদীতে ডুবে মরা ভালো”।
কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে গত চারদিনে বিবিসি প্রতিবেদকের অন্তত শ’খানেক মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। যারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন। তাদের প্রত্যেককেই এই প্রশ্নটি করা হয়েছিল। উত্তর কম-বেশি সবার এক রকম।
যদি মিয়ারমারে শান্তি ফিরে আসে তাহলে ফিরে যেতে চান, নাহলে এখানে থাকতে চান।
কারণ, মিয়ানমার যেমন তাদের জন্মভূমি আবার সেখানে রয়েছে মৃত্যুকূপে পতিত হওয়ার তীব্র আতঙ্কও।
পাঠকের মতামত