প্রকাশিত: ১৯/০৯/২০১৭ ১০:৫৫ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:১৮ পিএম

উখিয়া নিউজ ডটকম::
কক্সবাজার–টেকনাফ সড়কের উখিয়া সদর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে প্রতিদিন শত শত রোহিঙ্গা পরিবার এসে জমা হচ্ছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে এখানে আশ্রয় নেয়া অভুক্ত অনেক রোহিঙ্গা পরিবার এখনো কোনো ত্রাণ সামগ্রী পায়নি। অভিযোগ আছে, এই এলাকায় আগে থেকে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সাথে রোহিঙ্গা ছদ্মবেশী স্থানীয় এক শ্রেণির মানুষ পথে পথে গাড়ি আটকিয়ে ত্রাণের পণ্য কেড়ে নিতে তৎপর রয়েছে। তাদের কারণে অভুক্ত রোহিঙ্গাদের অবস্থানে ত্রাণ সামগ্রী যাচ্ছে না। এলাকা পরিদর্শনকালে বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের ব্যানারে প্রতিদিন আসছে কমবেশি ত্রাণ। নিয়ে আসা ত্রাণ পথেই লুটে নিচ্ছে রোহিঙ্গা ছদ্মবেশী কিছু লোকজন।

স্থানীয়দের মতে, এখানে আগে থেকেই বসতি স্থাপনকারী রোহিঙ্গা ও স্থানীয় কিছু লোকজন এসব ত্রাণ সামগ্রী লুটপাটে জড়িত। এদের কারণে অধিকাংশ অভুক্ত রোহিঙ্গা ত্রাণের গাড়ির কাছে ভিড়তে পারেন না।

দুর্গত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেয়া কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সড়কের অদূরের পাহাড় টিলায় পলিথিনের ছোট ছোট তাঁবু খাটিয়ে মাথায় গুজার ঠাঁই করে নিয়েছে হাজার হাজার পরিবার। যারা নতুন আসছে তাদের প্রখর রোদে বিভিন্ন বয়সী শিশুদের নিয়ে ক্লান্ত শরীরে তাঁবু ও খাবার না পেয়ে এখানে–সেখানে বসে থাকতে হচ্ছে।

নতুন আশ্রয় নেয়া কয়েকটি পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই মুহূর্তে তাদের দরকার মাথার উপর চাউনি (তাঁবু), পানি, শুকনো খাবার আর ওষুধ। এলাকার লোকজনের মতে, তাদের জন্য এখন জরুরি হয়ে পড়েছে স্যানিটেশনের সুব্যবস্থাও।

কক্সবাজর–টেকনাফ সড়ক পথের উখিয়ার থাইখালী, লেংটা খালী, বালুখালী ও কুতুপালংসহ প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক পথ জুড়ে দেখা গেছে সড়ক দুপাশে হাজার হাজার নারী পুরুষ আর বিভিন্ন বয়সী শিশুর ভিড়। ত্রাণবাহী গাড়ি দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে তারা গাড়ির ওপর। দূর দূরান্ত থেকে ত্রাণ নিয়ে আসা মানুষ এই অবস্থা দেখে যার যেখানে ইচ্ছে সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ত্রাণ দিচ্ছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে সড়ক পথে তীব্র যানজট। যদিও এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় উখিয়া উপজেলা প্রশাসন তৎপরতা চালাচ্ছে। এলাকার লোকজন বলছেন, ত্রাণদাতারা অজ্ঞতাবশত যেখানে মানুষের জটলা দেখছেন সেখানেই ত্রাণ দিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অথচ যাদের জন্য এই ত্রাণ সহায়তা তাদের অবস্থান পর্যন্ত ত্রাণের গাড়ি পৌঁছতে পারছে না।

রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়া এলাকাসমূহ পরিদর্শনকালে দেখা যায়, রাস্তার দু’ধারে হাজার হাজার অসহায় রোহিঙ্গা নারী–শিশু খোলা আকাশের নিচে ক্লান্ত শরীরে বসে আছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ছেড়া কাপড়, নিজের সাথে নিয়ে আসা ছাতা অথবা চাটাই মাথার উপর দিয়ে প্রখর রোদ থেকে নিজের শিশুকে রক্ষার চেষ্টা করছেন।

এই পথে প্রতিদিন আসছে শত শত ত্রাণবাহী গাড়ি। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ওসব ত্রাণ আনা হচ্ছে। টেংখালী এলাকার আলী হোসেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ত্রাণের বেশির ভাগ অংশ লুটে নিচ্ছে রাস্তার দু’পাশে অবস্থানকারী হাজার হাজার ছদ্মবেশী রোহিঙ্গা। তাদের কারণে অসহায় রোহিঙ্গরা ত্রাণ পাচ্ছে না। তিনি জানান, সাত/আট দিন ধরে পাহাড় জঙ্গল পার হয়ে যারা নতুন এখানে আসছেন তারা প্রথম এসে এখানে কি হচ্ছে তা সহজেই বুঝে উঠতে পারছেন না। অভুক্ত কেউ কেউ অবস্থা বুঝে ত্রাণের জন্য ছুঁটে গেলেও স্থানীয়দের দাপটে তারা পিছু হঠতে বাধ্য হচ্ছেন। উখিয়া সদর থেকে কুতুপালং পর্যন্ত সড়ক পথের দুপাশে দেখা গেছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য পুরানো কাপড়। এসব কাপড় বিভিন্নস্থান থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল রোহিঙ্গা পরিবারে দেয়ার জন্য। স্থানীয়রা বলছেন, এদেশের পোষাকের সাথে রোহিঙ্গাদের পোষাকের মিল নেই। এ কারণে তারা এগুলো নিচ্ছেন না। স্থানীয় যারা তারাই মূলত পুরনো কাপড়ের বস্তা থেকে বের করে উন্নত ও ভালোমানের কাপড় খুঁজে নিয়ে বাকি কাপড় ফেলে রাখছেন।

গত শনিবার সকালে টেংখালী এলাকায় আশ্রয় নেয়া সাত সদস্যের রোহিঙ্গা পরিবারের সাথে আসা একমাত্র পুরুষ সদস্য মোহাম্মদ নুর (৩০) বার্মা থেকে পালিয়ে আসার কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তারা পাহাড় জঙ্গল পথে সাতদিন হেঁটে সকালে এই এলাকায় এসেছেন। তিনি জানান, তাদের গ্রাম মিয়ানমারের বুথিদং এলাকায়। পালিয়ে এসেছেন সাত দিন হেঁটে টংবাজার হয়ে এই এলাকায়। মোহাম্মদ নুরের কথায় তাদের গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ কৃষিজীবী। ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ গ্রামে প্রবেশ করে বার্মার সেনাবাহিনী। সাথে ছিল কিছু মুখোশ পরা লোক। তারা গ্রামের লোকজনকে বলে এই পাড়ায় আতংবাদী (সন্ত্রাসী) লুকিয়ে আছে। পাড়ার সকল পুরষকে বাড়ির বাইরে আসতে বলে। এভাবে সকলকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে সেনাবাহিনী ও মুখোশধারীরা প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করে মূল্যবান জিনিষপত্র লুটে নেয়। এরপর নারীদের ওপর চালায় অমানুষিক নির্যাতন। যেসব নারী পুরুষ এই নির্য়াতনের প্রতিবাদ করেছেন তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে তারা। হত্যা করেছে ঘরের ছোট শিশুটিকেও। এরপর তারা পুরো পাড়া আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। একই দিন এখানে আশ্রয় নেয়া হোসেন আহামদের বাড়িও বুথিদং চৌধুরী পাড়ায়। তাদের পাড়াতেও একই কায়দায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বার্মা মিলিটারি। তিনি জানান, তার নিজ ভাতিজা ওসমান গণিসহ (৩০) পাড়ার তিনজনকে গুলি করে মেরে ফেলেছে বার্মার মিলিটারি। পরে তাদের ঘরে আগুন দিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে। আসার পথে বার্মার ভূমিদং খালে তারা দেখেছেন ৬০/৭০ নারী পুরুষসহ শিশুদের ভাসমান লাশ। প্রশাসনের সর্বশেষ হিসাব মতে, গত শনিবার পর্যন্ত এদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ নয় হাজার।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনে একটি বিভাগে কর্মরত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এই পর্যন্ত যতটুকু ত্রাণ পেয়েছে প্রায় সবটুকু এসেছে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে। এছাড়া কয়েকটি দেশ ও এনজিও সংস্থাও ত্রাণ দিয়েছে। সরকারি ভাবে ত্রাণ তৎপরতার পরিকল্পনা নেয়া হলেও আর্থিক বিবেচনায় এই বিষয়টি বার বার থমকে যাচ্ছে। জানা যায়, এই নিয়ে এখানে সর্বশেষ বৈঠকটি হয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের অফিসে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনী, জাতিসংঘ ও সরকারি বিভাগের প্রতিনিধিগণ।

পাঠকের মতামত

রামুর ফতেখাঁরকুলে উপ-নির্বাচনে প্রতীক পেয়ে প্রচারনায় ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী

রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের উপ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধি ৩ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্ধ দেয়া ...