প্রকাশিত: ১৫/১১/২০১৬ ৭:৫৪ এএম

সুনীল বড়ুয়া, রামু ::

কক্সবাজারের রামু, উখিয়া ও টেকনাফে বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে সাম্প্রদায়িক হামলার চার বছর পেরিয়ে গেলেও এসব ঘটনায় ১৮টি মামলার একটিরও বিচার কাজ শেষ হয়নি। তাই শাস্তিও পায়নি কেউ। নাটের গুরুরা রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বরং উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে উল্টো মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ঘটনার পর বিভিন্ন মামলায় পুলিশ ৫২৬ জনকে আটক করলেও এখন সবাই জামিনে মুক্ত। এ ঘটনার হোতাদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনিটরিং সেল গঠন করলেও তেমন অগ্রগতি নেই। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দিলেও চার বছরেও মূল মামলার চূড়ান্ত শুনানির কোনো অগ্রগতি নেই। তাই এ সব মামলার আইনি কার্যক্রম নিয়ে সংশয়ে আছে ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়। উল্লেখ্য, উত্তম বড়ুয়া নামের এক বৌদ্ধ যুবকের ফেসবুকে পবিত্র কোরান শরীফ অবমাননার অভিযোগ এনে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহার, ২৬টি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় আরো ছয়টি বৌদ্ধ বিহার এবং শতাধিক বসতঘরে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়। পরদিন (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উখিয়া ও টেকনাফে আরো চারটি বৌদ্ধ বিহারে হামলা চালানো হয়। এতে পুড়ে যায় এসব বিহারে থাকা হাজার বছরের পুরাতাত্ত্বিক সব নিদর্শন।

এ ঘটনার পর দায়ের করা হয় ১৯টি মামলা। এসব মামলায় ৯৪৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে রামুর আটটি মামলায় ৪৫৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে রামু থানায় জনৈক সুধাংশু বড়ুয়ার করা মামলাটি দু’পক্ষের আপস মীমাংসার ভিত্তিতে খারিজ করে দেন আদালত। বাকি ১৮টি মামলার মধ্যে ৪টি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে দেওয়া হয়েছে। ১৪টি মামলা কক্সবাজার আদালতে বিচারাধীন। সাক্ষী না পাওয়ায় এসব মামলার গতিও থমকে আছে। নাম-ঠিকানা ধরে পাওয়া যাচ্ছে না মামলার বেশিরভাগ সাক্ষীকে। অনেক সাক্ষী আবার আসামির পক্ষে কথা বলায় চিহ্নিত হচ্ছেন ‘বৈরী সাক্ষী’ হিসেবে। এসব কারণে ১৮টি মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজার এর পরিদর্শক জাবেদুল ইসলাম ও কৈশানু মার্মা জানান, রামুর তিনটি (কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা জেতবন বৌদ্ধ বিহার ও লট উখিয়ারঘোনা জাদীপাড়া আর্য্যবংশ বৌদ্ধ বিহার, ফতেখাঁরকুলের লালচিং,সাদাচিং ও মৈত্রী বিহার এবং চাকমারকুল ইউনিয়নেরর অজান্তা বৌদ্ধ বিহার) এবং উখিয়ার ঘটনার ১টি মামলা আদালত থেকে অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই-এর কাছে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে তদন্তকাজ শেষ করে রামুর জেতবন বৌদ্ধ বিহার, লট উখিয়ারঘোনা জাদীপাড়া আর্য্যবংশ বৌদ্ধ বিহারের মামলাটি অভিযোগ পত্রও পুনরায় আদালাতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ মামলায় প্রথমে পুলিশ ৭০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দিলেও অধিকতর তদন্ত শেষে এ মামলায় অভিযুক্তের তালিকায় নতুন আরো ২৬ জনসহ ১০৬ জনকে অভিযুক্ত করে সম্প্রতি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। উখিয়ার মামলাটি ছাড়া বাকি তিন মামলার অভিযোগ পত্রও চূড়ান্ত। শীঘ্রই এগুলোও আদালতে দাখিল করা হবে। তাদের দাবি, স্বাক্ষী পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেককে সনাক্ত করে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । আদালত চাইলে এদের শাস্তি দিতে পারে।

কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন বলেন, মূলত স্বাক্ষীর অভাবে মামলাগুলোর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এসব মামলায় স্বাক্ষী বেশিরভাগই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের। তারা ভয়ে কেউ স্বাক্ষ্য দিতে রাজি হচ্ছেন না। আর যে কয়জন স্বাক্ষ্য দিয়েছেন, এরা বলেছেন উল্টো। তাই একটি মামলায় ১১জনের মধ্যে ১০জন স্বাক্ষীকে বৈরী ঘোষনা করেছেন আদালত। তিনি বলেন, ঘটনার প্রত্যক্ষ্যদর্শী এবং ভুক্তভোগী যারা তারা যদি স্বাক্ষ্য না দেন, তাহলে অপরাধীরা পার পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। সব দিক বিবেচনা করেই চারটি মামলা পুনঃ এবং অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই-এর কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী এসব মামলার বিষয়ে খুব আন্তরিক হলেও তদন্তকারী দল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তাই মামলাগুলো পুনঃ তদন্তে দেওয়া হলেও ফলাফল থাকছে শূণ্য।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বলেন, ‘রামু, উখিয়া ও টেকনাফের বৌদ্ধ মন্দিরে একযোগে হামলার ঘটনায় নামে-বেনামে ১৫ হাজার আসামি থাকলেও আমরা ৫২৬ জনকে আটক করেছিলাম। বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় আটক আসামিদের অনেকে হাইকোর্টে রিট করে জামিনে বেরিয়ে গেছেন। বিচার কার্যক্রম প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা দায়রা জজ আদালতের পিপি মমতাজ আহমেদ বলেন, বেশিরভাগ সাক্ষী অনুপস্থিত থাকায় বিলম্বিত হচ্ছে এসব মামলার বিচার।

বিচার বিভাগীয় তদন্তের শুনানিতেও অগ্রগতি নেই

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর পর আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রামের দায়রা জজ আবদুল কুদ্দুস মিয়ার নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে ২০৫ জন অভিযুক্ত করে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এ কমিটি জড়িতদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে সুপারিশ করে। কিন্তু ঘটনার পরিকল্পনাকারী গডফাদারদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো অনেক নিরাপরাধ ব্যক্তিকে আটক করে এসব মামলা দুর্বল করে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে বিচার বিভাগীয় তদন্তেও ২৯৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় প্রায় চার বছর আগে। কিন্তু চার বছর আেেগ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হলেও মূল মামলার চুড়ান্ত শুনানির কোনো অগ্রগতি নেই।

পাঠকের মতামত

খেলাভিত্তিক শিক্ষায় ব্র্যাকের তথ্য বিনিময় অনুষ্ঠান

শিশুদের খেলাভিত্তিক শেখা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও মনোসামাজিক বিকাশ নিশ্চিতে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ...

১২ ফেব্রুয়ারি ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া ওয়াজ মাহফিল নিষিদ্ধ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ধর্মীয় প্রচার কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ...

জামিন বাতিল, মহেশখালীর তোফায়েল হত্যা মামলায় ৭ জন কারাগারে

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামের বাসিন্দা জুলাই অভ্যুথানে নিহত শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর ...

ফেসবুক পোস্ট দিয়ে ছাত্রশক্তি নেত্রীর পদত্যাগ‘জুলাইয়ে থানার বাইক চোরের কাছে অনেক সময় হেরে যাই’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রশক্তি কক্সবাজার জেলা শাখার সদ্য ঘোষিত নতুন কমিটি’র ...