ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি যেকোনো মুহুর্তে বাতিল হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনটাই চান বলে জানিয়েছে গণভবন ও দলের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এম সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের বিরুদ্ধে নিজ সংগঠনের নেতাদের অভিযোগের পাহাড় উঠায় এবং বুধবার সংগঠনের সাধারণ সভায় তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেসব শুনে মহাবিরক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তিনি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে ছাত্রলীগের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করতে পারেন।
গণভবনের একটি নির্ভরযোগ্য পূর্বপশ্চিমকে জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এসময় ওবায়দুল কাদেরও বর্তমান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিত্ত-বৈভব ও জীবনাচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। হেলিকপ্টারে করে ছাত্রলীগের সভাপতি বিলাস, গাড়ি, ফ্ল্যাট এবং নগদ অর্থ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিস্তারিত জানান। সাধারণ সম্পাদকের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘কয়েকদিন পর পর জাকির এর চিকিৎসার, ওর চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করে গণমাধ্যমের খবর হচ্ছে। একজন এমপি যেখানে পারেন না; সেখানে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে সে কিভাবে টাকা দিয়ে মানুষের উপকার করতে পারে। তার টাকার উৎস আসলে কোথায়?
সূত্র আরো জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ শুনে ছাত্রলীগকে পুর্নগঠন করা বা নতুন করে কমিটি দেয়ার জন্য ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, বুধবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভায় ব্যাপক হট্টগোল হয়েছে। সভায় সংগঠনের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসfইন অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়েছেন, হয়েছেন নাস্তানাবুদও।
সভায় উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা পূর্বপশ্চিমকে জানান, কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক কেন্দ্রীয় দুই নেতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, ‘আগামী ২৬ জুলাই বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন করে কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণের বিষয়ে কি হলো?’ এমন প্রশ্নের জবাবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর দায়ভার চাপিয়ে দেন। পরে সেই ছাত্রনেতা সম্পূরক প্রশ্নে আরো বলেন, ‘আমরা কি তবে অনিশ্চিয়তার মধ্যে থাকবো? বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তো একটি গঠনতন্ত্র মেনে চলে। যদি নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্সিল না হয়, তবে নেত্রীর নির্দেশে তা সংশোধন করা উচিত।’ এ প্রশ্নের উত্তরে সোহাগ-জাকির কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এরপর একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রশ্ন তুলেন, ‘ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কিভাবে এত বিত্তশালী হয়েছেন। তারা কিভাবে এত দামি গাড়িতে চড়েন?’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একটি ভবনের কাজের টাকা ভাগাভাগি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ওই সাংগঠনিক সম্পাদক। এসব প্রশ্নের জবাবে সাইফুর রহমান সোহাগ এবং জাকির হোসেন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ওই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন এস এম জাকির হোসেন।
এছাড়া অন্যান্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, ‘আপনারা দুজন মিলে ছাত্রলীগের সব কাজ করছেন। আমাদেরকে কেন কাজে লাগানো হচ্ছে না? বিভিন্ন ইউনিটের কাউন্সিল হলেও কেন সেখানে কমিটি দেয়া হচ্ছে না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি জেলার ক্ষেত্রে এমনটা কেন হচ্ছে?’ এসব প্রশ্নেরও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতা।
এদিকে, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেশ কয়েকবার সর্তক করার পরও তারা নিজেদের শুধরাতে পারেননি।
পাঠকের মতামত