রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারে সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের কর্তৃত্ব স্থাপনের মধ্যেই সমাধান দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা। মার্কিন কংগ্রেসে গত ২ নভেম্বর ‘বার্মা অ্যাক্ট ২০১৭’ শীর্ষক একটি বিল উত্থাপিত হয়, যার পুরো নাম ‘২০১৭ সালের কঠোর সামরিক জবাবদিহিতা আইনের মাধ্যমে একীভূত বার্মা’।
বর্তমানে কংগ্রেসের বিবেচনাধীন এই বিলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ রয়েছে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে কংগ্রেসে উত্থাপিত আরেকটি প্রস্তাবে মিয়ানমারের সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের হোতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানো হয়েছে।মঙ্গলবার রাতে কংগ্রেসে উত্থাপিত প্রস্তাবের শিরোনাম ‘বার্মার (মিয়ানমারের) রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞের নিন্দা এবং হামলা বন্ধ ও অবিলম্বে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান’। প্রস্তাবের শুরুতেই রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ উল্লেখ করে বলা হয়, এই নিপীড়ন বন্ধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি গৃহীত হলে মিয়ানমার নতুন করে কিছু নিষেধাজ্ঞার শিকার হবে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সহায়তাসহ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতাও কাটছাঁট হবে।
২ নভেম্বর উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, মিয়ানমার গণতন্ত্রের দিকে অর্থবহভাবে অগ্রসর হলেও বেশ কিছু বাধা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২০০৮ সালের সংবিধান এবং আইনি ও সরকারি কাঠামো অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস মনে করে, মিয়ানমারের পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসনে নিয়োগের ব্যাপারে দেশটির সামরিক বাহিনীর সরাসরি ও অগণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ বন্ধ হতে হবে।
স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং সীমান্তবিষয়কসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে সামরিক নিয়ন্ত্রণ থাকা চলবে না।বিলে মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ত সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই ব্যক্তিদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করবেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করার ব্যবস্থা নেবেন। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্মূল অভিযান চালানোর জন্য মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মিন অং হ্লাইয়াং, মেজর জেনারেল মং মং সো, মেজর জেনারেল খিন মং সোসহ সংশ্লিষ্ট সব জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ও তাঁদের সহযোগীদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে রোহিঙ্গাবিষয়ক প্রস্তাবের খসড়ায় সুনির্দিষ্ট আটটি বিষয় রয়েছে। প্রথম দফায় বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে বেসামরিক জনগণের ওপর সব ধরনের হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের জোরালো প্রশংসা রয়েছে দ্বিতীয় দফায়। তৃতীয় দফায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার নিন্দা জানানো হয়। চতুর্থ দফায় রয়েছে আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগিদ। পঞ্চম দফায় রাখাইনে অবস্থানরত বাস্তুচ্যুতদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো এবং ষষ্ঠ দফায় জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানী মিশনকে প্রবেশের সুযোগ দিতে বলা হয়। সপ্তম দফায় রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে অন্যায্য বাধাগুলো দূর এবং অষ্টম দফায় মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের হোতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
আগামী ১৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের পররাষ্ট্রবিষয়ক একটি প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে আসছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের আগামী বুধবার সংক্ষিপ্ত সফরে মিয়ানমার যাওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে ফিলিপাইনে গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোটের (আসিয়ান) শীর্ষ সম্মেলনে এ অঞ্চলের মানবাধিকার ইস্যুকে গুরুত্ব দিতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের চারজন বিশেষ দূত। ওই দূতদের অন্যতম মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার ইয়াংহি লি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বেশ সরব আছেন।
পাঠকের মতামত