
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে মানবতাবিরোধী কোনো অপরাধ হয়েছে কি না, তা অনুসন্ধান করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলা করার উপায় খুঁজছেন দেশটির প্রবীণ আইনপ্রণেতাদের একটি দল।
আজ শুক্রবার রয়টার্স জানায়, গতকাল মিয়ানমারে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আরও তিন জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারসের (এএপিপি) তথ্য অনুযায়ী, গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে ২২৪ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াউ মো তুন জানান, সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে ক্ষমতাচ্যুত আইনপ্রণেতাদের একটি কমিটি অভ্যুত্থানের পর থেকে গণমানুষের ওপর সেনা সরকারের সহিংসতার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায় কি না, এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে।
নিউইয়র্কের একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে আইসিসিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমরা আইসিসির কোনো রাষ্ট্রীয় দল নই। তবে, মামলাটি আইসিসির সামনে আনার উপায় ও মাধ্যম খুঁজে বের করতে হবে।’
গত মাসে তিনি প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আহ্বান জানিয়েছিলেন।
জেনেভাতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা মিয়ানমারে জোর করে উচ্ছেদ, স্বেচ্ছাসেবীদের আটকে রাখা ও গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীদের নিহতের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন।
মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা জানান, বিদেশি সরকারের উচিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করার বিষয়টি বিবেচনা করা।
তবে, সামরিক সরকারের এক মুখপাত্র জানান, নিরাপত্তা বাহিনী যখন প্রয়োজন তখনই কেবল শক্তি প্রয়োগ করেছে।
এদিকে, সেনাবিরোধী বিক্ষোভ দমন করতে সামরিক কৌশল ব্যবহার করছেন দেশটির সেনাবাহিনী ও পুলিশ। তবুও থেমে নেই বিক্ষোভ।
রয়টার্স জানিয়েছে, আজ শুক্রবার সকাল থেকে মিয়ানমারের কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত পোস্টে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা মান্দালে, অংবান ও মিয়ানিংয়ের মায়াওয়াদির শহরে জড়ো হয়েছেন।
অংবান শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। মায়াওয়াদিতে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। তবে, শুক্রবার সকাল থেকে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ইয়াঙ্গুনের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, শুক্রবার বিক্ষোভকারীদের ব্যারিকেড সরিয়ে দিতে স্থানীয়দের ওপরে জোর-জবরদস্তি করেছে পুলিশ। স্থানীয়দেরকে ব্যারিকেড ভেঙে ফেলতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও কয়েকজন অভিযোগ করেছেন।
এক কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স জানায়, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের কয়েক শ মানুষ শহর ছেড়ে পালিয়েছে। অনেকেই থাই সীমান্তে জাতিগত সংখ্যালঘু মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে। এ ছাড়া, অনেক নাগরিক পশ্চিম সীমান্ত পেরিয়ে ভারতেও প্রবেশ করেছে।
পাঠকের মতামত