প্রকাশিত: ২০/১০/২০১৭ ৯:১৮ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১১:৫৮ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার অভিযোগপত্র শিগগিরই আদালতে দাখিল করা হবে। প্রায় ১৭ মাস ধরে তদন্ত শেষে আলোচিত এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় অংশ নেয়া আসামি, সন্দেহভাজন ব্যক্তি, বাদী, সাক্ষী ও স্বজনদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলে এবং ঘটনাস্থল ও সংগৃহীত আলামত পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যাচাই-বাছাইসহ উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ-সংরক্ষণে দীর্ঘ ১৭ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। এরপরও এ হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা ও কালু পলাতক থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। এ অবস্থায় মামলার স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় আলামতসহ অভিযোগপত্র পুরোদমে প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগরিই এ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে বলে জানান অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুজ্জামান।
তবে এই অভিযোগপত্র নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মাহমুদা খানম মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা এ মামলার অভিযোগপত্র প্রস্তুত করেছেন শুনেছি। কিন্তু এ অভিযোগপত্রে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতারকে আসামি করা হয়েছে কি না এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। বাবুল আকতারকে যদি আসামি করা না হয়, তাহলে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবো আমরা। তিনি বলেন, বাবুল আকতার মিতুর মূল খুনি। অন্য নারীর সঙ্গে পরকীয়ার কারণে বাবুল আকতার তার বিশ্বস্ত সোর্স মুছাকে দিয়ে মিতুকে খুন করিয়েছে। তাকে যদি আসামি করা না হয় তাহলে আমরা আদালতে নারাজি দেব। তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বাবুল আকতারের সহকর্মী। এ হত্যা মামলায় বাবুলকে বাঁচানোর অপচেষ্টা তিনি করতেই পারেন। যদি তাই হয় তাহলে প্রয়োজনে তদন্ত কর্মকর্তা বদলের জন্যও আমরা আদালতে আবেদন করব। সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, এ মামলার আসামিরা গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এবং আদালতে বাবুল আকতারের বিশ্বস্ত সোর্স মুছার নির্দেশে মিতুকে হত্যা করার স্বীকারোক্তি দেন। কিন্তু পুলিশ মুছাকে গ্রেপ্তার করছে না। মুছার স্ত্রী পান্না আকতার ঘটনার পর সাদা পোশাকধারী পুলিশ মুছাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে বলে বার বার বলছেন। এরমধ্যে তিনি একজন ওসিকেও চিনেন। কিন্তু পুলিশ বলছেন মুছা পলাতক। যা সত্যিই রহস্যজনক। মিতু হত্যাকাণ্ডের শুরুতে বাবুল আকতারের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ কেন তোলা হয়নি। তাকে রাজধানীতে নিজ বাড়িতেও রেখেছিলেন। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন, আসলে ঘটনার পরপরই অনেকে বাবুলের জড়িত থাকার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি ওই সময় বিশ্বাস করতে চাননি। নাতি-নাতনির দিকে তাকিয়েও এমন ভাবনা মাথায় আনেননি। মিতুর মা শাহেদা মোশাররফ বলেন, আগে যা হওয়ার হয়েছে। এখন মেয়ের খুনির বিচারের জন্য যা যা করার আমরা করব। এ হত্যাকাণ্ড বাবুল আকতার করিয়েছেন এটাই এখন আমাদের দৃঢ বিশ্বাস। তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে বাবুল আকতার জড়িত না থাকলে তাকে চাকুরিচ্যুত কেন করা হলো? চাকরি ফিরে পাওয়ার আবেদন করলেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলেই তাকে নেয়া হয়নি। আর এটুকুতেই বাবুলের শাস্তি শেষ হতে পারে না। কিন্তু বাবুল আকতার তো এ মামলার বাদী, তাকে আসামি করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিতুর মা শাহেদা বলেন, আমরা তো তখন বিশ্বাস করতেই পারিনি যে, বাবুলই খুনি। তাহলে তো বাবুল বাদী হতে পারত না। আমরা বাদী হয়ে মামলা করতাম। এখন বাদী হয়েছে তো কি হয়েছে। তদন্তে প্রমাণ হলে বাদীও আসামি হয়। এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, বাদীও আসামি হয়। এটা কোনো সমস্যা নয়। বাবুল আকতারের সহকর্মী প্রশ্নে কামরুজ্জামান বলেন, মামলা তদন্তে কোনো সহকর্মী নেই। অপরাধীর কোনো স্বজন থাকতে নেই। মাহমুদাকে কেন হত্যা করা হলো, দীর্ঘ তদন্তে কী পাওয়া গেছে এসব বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, পলাতক মুছা ও কালুকে খোঁজা হচ্ছে। তাদের ধরতে পারলে হয়তো বিষয়টি সপষ্ট হতো।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ই জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলের বাসে তুলে দিতে গিয়ে সড়কেই মিতুকে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বাবুল আকতার বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় তিনজনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহ পর মো. ওয়াসিম ও মো. আনোয়ার নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দিনই তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা স্বীকার করেন, মুছার নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডে তারা সাত-আটজন অংশ নেন। গত বছরের অক্টোবর মাসে মুছার সন্ধান চেয়ে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ। মুছার স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি, মিতু হত্যার ১৭ দিন পর চট্টগ্রাম নগরের বন্দর এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে সাদাপোশাকধারী পুলিশ মুছাকে তুলে নিয়ে যায়। তবে শুরু থেকেই এ দাবি অস্বীকার করে আসছেন পুলিশ। পান্না আক্তার বলেন, বাবুলকে বাঁচাতে হয়তো মুছাকে মেরে ফেলা হয়েছে। মুছা যদি বেঁচে থাকেন, তাহলে পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করছেন না কেন? পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মিতু হত্যায় অংশ নেন ওয়াসিম, আনোয়ার, মো. রাশেদ, নবী, মো. শাহজাহান মিয়া, মুছা ও মো. কালু। তাদের মধ্যে নবী ও রাশেদ গত বছরের ৪ঠা জুলাই চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মুছা ও কালু এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে, অন্যরা কারাগারে। শ্বশুর-শাশুড়ির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার বলেন, তারা এখন অনেক কথাই বলবেন। কেন বলবেন সেটাও আপনারা জানেন। কে কি বলছে সেটা বড় নয়, স্ত্রী হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই আমি।
সুত্র: মানবজমিন

পাঠকের মতামত

শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে পোস্ট, এসিল্যান্ড প্রত্যাহার

শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিরাজুম মুনিরা ...

আলোচিত স্কুলছাত্রী টেকনাফের তাসফিয়া হত্যা: এবার তদন্ত করবে পুলিশ

চট্টগ্রামের আলোচিত স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের ...