
এ.এম হোবাইব সজীব::
মহেশখালী মাতারবাড়ীর উত্তর পাশে দ্বিতীয় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দক্ষিণের সিমানা ঘেষে নতুন ঘোনা প্রকাশ মাইজ্জা মিয়া ঘোনা ও র্ফামঘোনা তথা ১৮ জইন্য ঘোনা স্লু-ইচ গেইট ও পলবোট বন্ধ করে দেয়ায় প্রায় ৫ শত কানি লবণ জমিনে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নজরদারি না থাকার সুযোগে স্থানিয় একটি প্রভাবশালী চক্র বিনা বাধাঁয় উপজেলার মাতারবাড়ী খন্দরা বিল গ্রামের উত্তর প্রান্তে ২য় কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পয়েন্টে নদীতে মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। বেশির ভাগ বালু বেঁড়িবাধ নিমার্ণে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে স্থানিয় লোকজন জানিয়েছেন। সরকারি কাজের দোহাই দিয়ে গত কয়েকদিন ধরে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার লবণ চাষের জমির জন্য পানি চলাচলের রাস্তা সুইচ গেইট ও পলবোট বন্ধ করতে নদীতে মেশিন বসিয়ে একটি অসাধু চক্র নদী থেকে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন চালাচ্ছে। এতে করে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনের কারনে পাশ্ববর্তী গ্রাম ও ভাঙ্গনের সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি এলাকায় মারাত্বক ভাবে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদী সংগঠন। শুধু তাই নয়, প্রায় ৩ শতাধিক লবণ চাষিদের কপালে হাত, তাদের ঘরে ঘরে চলছে দূর্ভিক্ষ। কে শুনে কার কথা! মাতারবাড়ী দ্বিতীয় কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানীর লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ১২০০ শত একর জমি অধিগ্রহণ করে।
গতকাল শনিবার সকালে সরজমিন দেখা গেছে, এখন ঐ এলাকায় কর্তৃপক্ষ উক্ত জমির চতুর্দিকে বাঁধ নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে, পাশা পাশি স্লু-ইচস গেইটের মুখও বন্ধ করে দিচ্ছে। ঐ প্রকল্পের দক্ষিণ পাশে লাগোয়া মাইজ্জা মিয়ার ঘোনা, র্ফামঘোনা ১৮ জইন্য ঘোনা নামে পরিচিত ঘোনায় পানি ঢুকানোর জন্য যে পলবোট ছিল ঐ পলবোট দিয়ে পানি ঢুকিয়ে এ ঘোনার প্রায় তিন শতাধিক লবণ চাষিরা প্রায় ৫ শত কানি জমিনে লবণ উৎপাদন শুরু করেছিল। কিন্তু মাঠ থেকে লবণ উৎপাদন শুরু হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পানি চলাচলের পলবোট বন্ধ করে দেয়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লবণ চাষে জড়িতরা। তারা লবণ উৎপাদন করতে না পারলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতিসাধিত হবে বলে জানিয়েছেন।
স্থানিয় লবণ চাষি সোনালী (৪৫) বলেন, আমরা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে নয়। তবে অন্তত লবণ উৎপাদন করতে পানি ঢুকানোর জন্য ব্যবস্থা না করলে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে থাকব। আর প্রকল্প কাজে যখন জমি দরকার হবে তখন আমরা ছেড়ে দেব। জানাগেছে, কিন্তু কতিপয় লোকজন পানি ঢুকার ব্যবস্থা করার জন্য ঐসব ঘোনার পরিচালক মাওলানা মোক্তার আহমদ, মকছুদ, বাবর চৌধুরী কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তারা চাঁদা না দিয়ে নিজেদের অর্থায়নে লবণ চাষিদের সুবিদার্থে টাকা খরচ করে দীর্ঘ একটি ক্যানেল নির্মাণ করে দেয় । এতে স্বস্থি ফিরে আসে লবণ চাষিদের । তবে চাঁদাবাজরা ক্ষোব্ধ হয়ে কৌশলে পুলিশ নিয়ে মাইজ্জা মিয়া, ফার্ম ঘোনা ও ১৮ জইন্য ঘোনা নামে পরিচিত সংলগ্ন পলবোটটি মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়ায় লবণ চাষিদের মাঝে হতাশা আর ক্ষোভের ধাঁনা বেধেছে ।
তবে কতিপয় ব্যক্তিরা সুবিদা আদায়ের জন্য পুলিশ পাঠিয়ে পলবোট বন্ধ করে দেয়ায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লবণ চাষ থেকে বঞ্চিত হওয়া জমির মালিক, চাষা, শ্রমিক, ব্যবসায়ী সকলে বেকার ও কর্মহীন জীবনযাপন করছে। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ লবণ চাষী মিয়াজন (৫৫) বলেন, লবন চাষ না হওয়ায় শুধু জমির মালিক ক্ষতি হয়নি আমরা যার প্রতি কানি ৪০/৪৫ হাজার টাকায় বর্গা নিয়েছি তাদের সাথে লবণ মাঠের সাথে সংশ্লিষ্ট লবণ মাপার কয়াল, আলকদার,লবণ বোট মালিক ব্যবসায়ি,শ্রমিকদের কোটি কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পনী লি:এর পক্ষে কোন প্রকার ক্ষতি পূরণ না দেওয়ার অভিযোগ তুলেন শ্রমিকরা। মাতারবাড়ী র্ফামঘোনা তথা ১৮ জইন্য ঘোনার পরিচালক বাবর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে নয়। তিনি আরোও বলেন, তবে প্রকল্পের কাজ শুরু হলে চাষীরা দেশের উন্নয়নের স্বার্থে জমি ছেড়ে দেবে। কিন্তু লবণ মাঠের লবণ উৎপাদনের সুবিধার্থে অন্তত পানির জন্য একটি পলবোট খুলে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক ইনানিকে জানান, পুলিশ আমার কাছে এ বিষয়ে অস্বীকার করেছে। তিনি আরোও বলেন, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানি চলাচলের স্লু-ইচ গেইট ও পলবোট বন্ধ করে দেয়ায় প্রায় ৩ শত কানি লবণ জমিনের চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। মহেশখালী উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো: আবুল কালাম বলেন, এ ব্যাপারে কেউ আমাকে জানায় নি। স্থানিয় চেয়ারম্যানের সাথে এ বিষয়ে আলাপ করে জেনে নেওয়া হবে। তবে অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান।
পাঠকের মতামত