প্রকাশিত: ৩০/০৩/২০১৭ ৮:৩৭ এএম , আপডেট: ৩০/০৩/২০১৭ ৮:৩৭ এএম
Single Page Top

নিউজ ডেস্ক::
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আলাউদ্দিন খুনের ঘটনায় কথিত প্রেমিকাসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাউজান ও ভোলার লালমোহন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন-ইয়াসমিন আক্তার ওরফে রুম্পা, তার স্বামী ইকবাল হোসেন, ইকবালের সৎভাই মো. তৈয়ব ও মো. হেলাল।
এদিকে গতকাল আদালতে আলাউদ্দিন হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন রুম্পা ও তার স্বামী মো. ইকবাল। মহানগর হাকিম আবু ছালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে জবানবন্দি দেন তারা। তবে স্বামী ইকবাল হোসেন আলাউদ্দিন খুনের জন্য নিজেকেই এককভাবে দায়ী করেছেন। ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত নয় বলে তার স্ত্রী রুম্পা নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জবানবন্দিতে বলেন, ‘খুনের সময় আমি ঘটনাস’লে ছিলাম না।’
জবানবন্দি দেওয়ার পর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। এদিকে ইকবালের সৎভাই মো. তৈয়ব ও মো. হেলালকে আলাউদ্দিন খুনের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডে পেতে আবেদন করলে আদালত প্রত্যেকের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গতকাল বুধবার সকালে বায়োজিদ বোস্তামী থানা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মো. আবদুল ওয়ারিশ। তার ভাষ্য, একসময় ইয়াসমিনের সঙ্গে আলাউদ্দিনের সম্পর্ক ছিল। পরে ইকবালের সঙ্গে ইয়াসমিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ইয়াসমিনকে হয়রানি করতেন আলাউদ্দিন। এর জেরে আলাউদ্দিনকে খুন করা হয়।
এর আগে গত ২২ মার্চ বিকেলে নগরের পশ্চিম শহীদনগর এলাকায় ভাড়া নেওয়ার কথা বলে একটি বাসায় ঢোকেন এক তরুণীসহ চারজন। ওইসময় বাসা পছন্দ হওয়ার কথা জানান বাড়ির তত্ত্বাবধায়ককে। ওই দিন থেকেই সেখানে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এতে রাজি হন তত্ত্বাবধায়ক। এর তিন ঘণ্টার মধ্যে একে একে বাসা থেকে বের হয়ে যান তরুণীসহ তিনজন। চতুর্থজনের (আলাউদ্দিন) লাশ পাওয়া যায় বাসার টয়লেটে হাত-পা বাঁধা অবস’ায়।
নিহত আলাউদ্দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে পড়তেন। এ ঘটনায় আলাউদ্দিনের বাবা শাহ আলম বাদি হয়ে ২৩ মার্চ রাতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে বায়োজিদ বোস্তামী থানায় হত্যা মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের উপসি’তিতে ইয়াসমিন আক্তার জানান, নিহত আলাউদ্দিনের কাছে তিনি প্রাইভেট পড়তেন। এ সুবাদে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আরেকজনের সঙ্গে বিয়ের পর ঘটনাটি জানাজানি হলে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। গত বছরের জুলাই মাসে ইকবালের সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে আলাউদ্দিন তাকে নিপীড়ন শুরু করেন। বিষয়টি স্বামী ইকবালকে জানানো হলে পরিকল্পনা করে আলাউদ্দিনকে খুন করা হয়।
রুম্পার দাবি, প্রথম বিয়ের পর সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যাওয়ায় সংসার ভাঙে তার। সম্পর্ক ছিন্ন করতে চেয়েও পারেননি তিনি। মোবাইলে ধারণ করা কিছু ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে আলাউদ্দিন তাকে ব্ল্যাকমেইলিং শুরু করে। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় বিয়ের পরও তার পিছু ছাড়েনি আলাউদ্দিন। অব্যাহত থাকে আলাউদ্দিনের ব্ল্যাকমেইলিং। গত বছর ২৮ ডিসেম্বর দেশে আসেন রুম্পার স্বামী ইকবাল। এরপর তাকে নিয়ে আলাউদ্দিনকে খুন করার পরিকল্পনা করে।
রুম্পার গ্রামের বাড়ি হাটহাজারী থানার ১১ নম্বর ফতেপুর ইউনিয়নে। তার বাবা মো. হারুন। তিনি এখন বেঁচে নেই। পেশায় ছিলেন অটোরিকশা চালক। ২০০৭ সালে রূম্পা ছিল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। আলাউদ্দিন ছিল তার গৃহশিক্ষক। এক সময় পরস্পরের মধ্যে গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক। সম্পর্কের সূত্র ধরে মোবাইলে রুম্পার কিছু ছবি ও ভিডিও করে সংরক্ষণ করে আলাউদ্দিন। বিয়ের পর সেই ছবি ও ভিডিও দিয়ে রুম্পাকে ব্ল্যাকমেইলিং করে আলাউদ্দিন।
পুলিশ জানায়, এসএসসি পরীক্ষার আগে রাঙ্গুনিয়ার রাণীরহাটের ওমর সাদেক চৌধুরীর সাথে বিয়ে হয় রুম্পার। আরেক স্ত্রী থাকায় ওমরকে মেনে নিতে পারেনি রুম্পা। ওমর রুম্পাকে মোবাইল ব্যবহার করতে দিতো না। বাবার বাড়িতে এলে মোবাইল ব্যবহার করত রুম্পা। ফের আলাউদ্দিনের যোগাযোগ হয় রুম্পার।
বিষয়টি জেনে যায় ওমর। এরপর আলাউদ্দিনের সাথে সম্পর্ক না রাখার শর্তে রুম্পার কাছ থেকে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে অঙ্গীকার নেন ওমর। ২০১৩ সালের ১০ মে এক কন্যা সন্তানের জম্ম দেন রুম্পা। কিন’ আলাউদ্দিনের বিষয় নিয়ে তাদের সংসারে চলতে থাকে অশান্তি। ২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাবার বাড়িতে চলে আসেন রুম্পা। ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই ওমান প্রবাসী ইকবাল হোসেনের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে হয় তার। এর আগেই প্রথম স্বামী ওমরের সাথে তালাক হয় রুম্পার।
দ্বিতীয় বিয়ের পর আলাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় রুম্পার। বিয়ের ৬৬ দিন পর ওমানে চলে যান ইকবাল। তবু সম্পর্ক অটুট রাখতে রুম্পাকে চাপ দেয় আলাউদ্দিন। রুম্পা-আলাউদ্দিনের সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যান ইকবাল। রুম্পাকে উত্ত্যক্ত না করতে ওমান থেকে কয়েক দফা ফোনে অনুরোধ করেন ইকবাল। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর মারা যান রুম্পার বাবা। এসময় তাদের বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগ করে আলাউদ্দিন।
এরপর শ্বশুরবাড়ি গিয়েও আলাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে রুম্পা। গত বছর ২৮ ডিসেম্বর ওমান থেকে দেশে ফিরে আসেন ইকবাল। ইকবালের দেশে ফেরার বিষয়টি জানতেন না আলাউদ্দিন। দেশে ফিরে জিজ্ঞেস করলে রুম্পা-আলাউদ্দিন সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করে রুম্পার পরিবার। এরপর আলাউদ্দিনকে বিষ খাইয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে ইকবাল। তবে এতে রাজি হননি রুম্পা। স্বামীর ক্রমাগত চাপে এক পর্যায়ে ‘হত্যায়’ সায় দেয় রুম্পা।
পরিকল্পনা মতে, আলাউদ্দিনকে খুন করতে নগরের অক্সিজেন শহীদনগর বাড়ির ফ্ল্যাটটি বাসা ভাড়া নেয় ইকবাল। গত ২২ মার্চ বিকাল ৫টার দিকে আলাউদ্দিনকে ভাড়া বাসায় আসতে বলেন রুম্পা। এর আগে সঙ্গে যান ইকবাল ও তার তিন সৎভাই হেলাল, মাসুদ ও তৈয়ব। সঙ্গে একটি বস্তায় নেন রশি, ছুরি, কাঁথা-বালিশ ও পাটি। হেলাল বাড়ির কেয়ারটেকারের কাছ থেকে ঝাড়- ও বালতি নিয়ে কক্ষ পরিস্কার করেন।
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ওই বাসায় আসেন আলাউদ্দিন। রুম্পা দরজা খুলে দেন। এসময় ইকবালসহ ও তার তিন সৎভাই ছিল আরেকটি কক্ষে। রুম্পা পুলিশকে জানান, বাসায় ঢোকামাত্র তাকে নিয়ে ভেতরের কক্ষে যাওয়ার চেষ্টা করে আলাউদ্দিন। এসময় ইকবালসহ অন্যরা এসে আলাউদ্দিনকে নিয়ে যায় টয়লেটে। এর আগে ইকবাল চলে যেতে বললে, সেখান থেকে বেরিয়ে যান রুম্পা।
বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, টয়লেটে নিয়ে গলায় নাইলন রশি প্যাঁচিয়ে আলাউদ্দিনকে খুন করেছে বলে গ্রেফতার হওয়া রুম্পার স্বামী ইকবাল তার সৎভাই হেলাল, তৈয়ব ও মাসুদ স্বীকার করেছে। মাসুদকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান ওসি।

পাঠকের মতামত

Single Page Bottom

বিসিআরসি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড- ২০২৫ এ ভূষিত হলেন পুলিশ সুপার মো: নাইমুল হক পিপিএম

পর্যটন খাতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য পুলিশ সুপার জনাব মোঃ নাইমুল হক পিপিএম ময়মনসিংহ ...

সাজেদা বেগমকে গর্জনিয়া ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অর্পন

শামীম ইকবাল চৌধুরী,নাইক্ষ্যংছড়ি:: গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ...

সাংবাদিক জসিম আজাদের বসতভিটা দখলের ঘটনায় বাবু সহ ৩ জন কারাগারে

কক্সবাজারের উখিয়ায় সাংবাদিকের বসতভিটা দখলের অভিযোগে স্থানীয়ভাবে পরিচিত মাহফুজ উদ্দিন বাবু ও তাঁর দুই সহযোগীকে ...
Single Page Footer