উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪/০৪/২০২৫ ৮:০০ এএম

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার। গত সপ্তাহে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। তবে কিছু সংস্থা ও মহল এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার খবরে যেন খুশি নন। উল্টো নতুন করে রোহিঙ্গাদের দেশে অনুপ্রবেশ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। আর এসব দালালদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

 

জানা গেছে, গত কয়েক মাসে কৌশলে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ফের বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। তারা টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। ইউএনএইচসিআরের খাতায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে। তারা ত্রাণ সামগ্রীও পাচ্ছে। কিন্তু সরকারের রেজিস্ট্রারে তাদের উদ্বাস্তু হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি। ওই রোহিঙ্গাদের দেড়শ’ পরিবারের জন্য ‘সাওয়াব’ নামে এনজিওটি প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শেড তৈরি করে চলেছে। আর এই ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় লোকজন।

 

সরজমিনে দেখা যায়, ১৪ নম্বর আশ্রয়শিবিরের কাটাতারের সাথে লাগোয়া ১২২টির অধিক শেড নির্মাণ করা হয়েছে নতুন করে। যা ২০০৮ সালের সৃজিত বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের জায়গা জলধার ছিল। উক্ত জলাধার ভরাট করে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কাজ করছে ‘সাওয়াব নামের একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)’। নতুন করে তৈরি রোহিঙ্গা পল্লীটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আমেনা ভিলেজ’।

 

নতুন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দেওয়ার দাবি স্থানীয়দের

 

স্থানীয় সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের অন্য একজন রশিদ আহমদ সওদাগর দাবি করেন, অনেক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ায় খালি হওয়া শেডগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এখনো। সেখানে স্থান না দিয়ে নতুন রোহিঙ্গাদের জন্য শেড তৈরির কী খুব দরকার ছিল?

 

সামাজিক বনায়নের অংশীদার আবছার উদ্দিন বলেন, গত ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় নতুন করে আবারও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দিতে সচেতন মহল সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

এনজিওটির বিরুদ্ধে সামাজিক বনায়নের হাজার হাজার গাছ কর্তন ও জলধারা ভরাট করে নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য ঘর তৈরির অভিযোগ উঠেছে। সংস্থাটির বিরুদ্ধে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় বনকর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট বিভাগে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত উপকারভোগীরা লিখিত অভিযোগ করেছেন।

 

অভিযোগকারীরা জানান, ২০০৮ সাল থেকে বনবিভাগের সাথে চুক্তির মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন করে আসছে। বনায়নের উপকারভোগীরা কোন ধরণের ক্ষতিপূরণ পাননি। অথচ নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের সরিয়ে আনতে শেড নির্মাণ করা উদ্বেগজনক।

 

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

 

উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহিনুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি নিয়ে বনবিভাগ অবগত রয়েছে। জায়গাটি বনবিভাগ ও সামাজিক বনায়নের হলেও এখন যেতেতু কাটাতারের ভেতরের অংশ হয়ে গেছে তা নিয়ে বনবিভাগের তেমন কিছু করার নেই। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ভালো বলতে পারবে।

 

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বেশ কিছু শেড নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণের কাজ পেয়েছে ‘সাওয়াব’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। তারা সকল ধরণের নিয়ম মেনে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। যেহেতু কাটাতারের ভেতরে রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত জমি তাই স্থানীয়দের সমস্যা হওয়ার কথা না।

 

তিনি আরও বলেন, যদি বনায়নের গাছকর্তন ও জলধার ভরাট করা হয়ে তাকে তদন্তপূর্বক সংস্থাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থানগ্রহণ করা হবে। স্থানীয় বাংলাদেশিদের লিখত অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত রয়েছি।

 

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চেয়ারম্যান বলেন, আমরা তো সবাই মিলে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। রোহিঙ্গারা যখন এপারে পালিয়ে এসেছিল, তখন আমরা ঘর থেকে খাবার এনে তাদের পাশে দাড়িয়েছি। কিন্তু এটা কি তার বদলা? একটি চক্রের সদস্যরা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকারকে বঞ্চিত করে ক্যাম্প ১৪ হাকিমপাড়া সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছে। যা উদ্বেগজনক ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য এক ধরনের বাধাগ্রস্ত বলে মনে করেন তিনি।

 

তিনি বলেন, স্থানীয় বাংলাদেশিদের জায়গায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবির তৈরির কারণে বসতভিটা, চাষের জমি, মাছের পুকুর, ক্ষেতের ফসল, স্বপ্নের বাগান, সমস্ত আয়ের উৎস থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের সহয়তা দেওয়ার কথা থাকলে তা কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক, দেশি ও স্থানীয় এনজিও সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা আগমনের শুরু থেকেই নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে। নতুন করে শেড ও ঘরবাড়ি নির্মাণ করাও একটি ষড়যন্ত্রের অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী করেন সীমান্তের এ জনপ্রতিনিধি। সুত্র,পাহাড় সমুদ্র

পাঠকের মতামত

পাহাড়ে ঝর্ণা দেখতে গিয়ে পানির স্রোতে ভেসে গেল উখিয়ার মেহরাব

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত ফাত্রাঝিড়ি ঝর্ণা দেখতে গিয়ে পানির প্রবল স্রোতে ...