প্রকাশিত: ২৫/০৩/২০১৮ ৭:৫৪ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:০২ এএম

শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি::

ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। বছরের এক এক সময়ে প্রতিটি ঋতুতে ভিন্ন এক রুপ ধারণ করে এদেশ। সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের প্রকৃতিক উপাদান নিয়ে হাজির হয় এই ঋতু। কিন্তু আজ হারাতে বসেছে গ্রাম বাংলার চিরচেনা অনেক রুপ। তার মধ্যে অন্যতম মূলি বাঁশের তৈরির নানা লোকাচার এবং সংস্কৃতি।

আর এদিকে, পার্বত্য অঞ্চলের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে প্রায়ই বিলুপ্তির পথে নানা জাতের বাঁশ, তাই হারিয়ে যাচ্ছে উপজাতীয় ও বাঙ্গালীদের ঐতিহ্যগত বাঁশের তৈরী কুটির শিল্প। আজ থেকে ১০ বছর পূর্বে পাহাড়ে বসবাসরত বাঙ্গালী ও উপজাতীয় লোকজন অনেকেই বাঁশ কেটেই জীবিকা নির্বাহ করেছেন এবং বাঁশের তৈরী বিভিন্ন সরঞ্জাম বাজারে বিক্রি করেই অনেকের সংসার সহ ছেলে-মেয়েদের পড়া লেখার ব্যয়ভারও বহন করেছেন।

এ ছাড়াও পাহাড়ে বসবাসরত উপজাতীয় লোকজন বাঁশ দিয়ে চাটাই/তলই তৈরী করে স্থানীয় এলাকায় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানী করেছেন। এখন পাহাড়ে বাঁশ না থাকায় উপজাতীয় লোকজনেরা বাঁশের তৈরী নানা ধরনের সরঞ্জাম বিক্রি করতে না পারায় দূর্দিন পার করছেন বলে উপজাতীয় নেতা কেনু ওয়ান চাক্ জানান।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পাচঁ ইউনিয়নের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এককালের গহীন বন হিসাবে খ্যাত এবং বিশাল বাঁশ বাগান হিসাবে পরিচিত এলাকায় এখন আর বাঁশ, গাছ কিছুই নেই। পাহাড় এখন ভূমি দুস্যুদের দখলে চলে যাওয়ায় ন্যাড়া ভূমিতে পরিনত করেছে।

উপজাতীয় আরেক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মংশৈ প্রু মার্মা জানান, সৃষ্টি কর্তার দেওয়া সমস্ত পাহাড়ে বিশাল বাঁশ বাগান ছিল। কিন্তু বহিরাগত এবং স্থানীয় গুটিকয়েক প্রভাবশালী ভূমি দুস্যুরা দখল প্রতিযোগীতায় নেমে গাছ, বাঁশ নিধন পূর্বক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বন ধ্বংশ করে বিরান ভূমিতে পরিনত করেছে। পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে নদী, ছরা এবং খালে সপ্তাহে ২ দিন বাঁশের হাট বসত এবং পাহাড়ে বসবাসরত জনসাধারন বাঁশ বিক্রি করে প্রচুর টাকা আয় করত। বর্তমানে উপজাতীয় অধিকাংশ পরিবার বাঁশের সামগ্রী তৈরী করতে না পারায় অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে বলে জানা যায়।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বৃক্ষ নিধন, পাহাড় দখল ও আগুন দিয়ে পুড়ানোর ফলে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁশ শিল্প আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। যার কারনে গ্রাম অঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে বাঁশের রকমারি জিনিষ পত্র। বাঁশ না থাকায় উপজাতীয় সহায় সম্বলহীন পরিবার গুলো বর্তমানে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। পার্বত্য এলাকায় এককালে বিভিন্ন জাতের মূল্যবান বাঁশ ছিল। যার মধ্যে মূলি বাঁশ খুবই উন্নত। এ ছাড়াও রয়েছে নিতা বাঁশ, পাইয়া বাঁশ, ডলু বাঁশ, উরা বাঁশ ও বাইরগা বাঁশ।

বিভিন্ন কারণে দিন দিন বিভিন্ন জাতের বাঁশ বিলুপ্তি হওয়ায় কুড়ের ঘরের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই বাঁশের অস্তিত্ব আজ সঙ্কটের সম্মুখীন। যে হারে বাঁশ কাটা হয় সে তুলানায় বাঁশ রোপণ করা হয় না। যার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ এবং এর সাথে জড়িত গ্রাম-বাংলার নানা ঐতিহ্যবাহী লোকাচার ও সংস্কৃতি।

বর্তমানে বাঁশ হারিয়ে যাওয়ায় সাধারন মানুষের বাড়ী ঘর মেরামত ঘেরা-বেড়া পর্যন্ত দেওয়া যাচ্ছেনা। আবার কিছু কিছু লোকজন বাঁশ শিল্প ধরে রাখার জন্য বাড়ী ঘরের আশপাশ এলাকা ও পুকুর পাড়ে বাঁশের বীজ সংগ্রহ করে নিজেরাই চারা লাগিয়ে বাঁশের চাষ করতে দেখা যায়। পরিবেশবাদীরা সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বাঁশ চাষাবাদ করে বাঁশ শিল্পকে পুনরায় ধরে রাখার আহবান জানান।

সংবাদ প্রেরক

শামীম ইকবাল চৌধুরী

পাঠকের মতামত

পদযাত্রায় টায়ার্ড, জাস্ট একটু কক্সবাজার ঘুরতে আসছি: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

কক্সবাজারে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকের গুঞ্জন ...

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে চকরিয়ায় জামায়াতের বর্ণাঢ্য গণমিছিল ও সমাবেশ

ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চকরিয়া উপজেলা, পৌরসভা ও মাতামুহুরি সাংগঠনিক ...

দেশে প্রথমবারের মতো কক্সবাজার রেল স্টেশনে বসলো স্ক্যানার

দেশে প্রথমবারের মতো স্ক্যানার বসানো হলো কক্সবাজার রেল স্টেশনে। সোমবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’ ব্র্যান্ডের স্ক্যানার ...

কক্সবাজারের ট্রেন দুর্ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে ফিরল শিশু আতাউল্লাহ

কক্সবাজারের রামুতে ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চারজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আতাউল্লাহ ...