প্রকাশিত: ২০/০১/২০১৭ ১০:১২ পিএম
Single Page Top

এম ইফতেখার জুয়েল::
টেকনাফ – সেন্টমার্টিন রোডে চলাচলকারী পর্যটকবাহী জাহাজের টিকিটের দাম লাগামহীন উঠানামার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জাহাজ মালিকদের নিজস্ব সিদ্ধান্তে এইসব জাহাজের টিকিটের দাম ইচ্ছামত উঠানামা করা হচ্ছে বলে জানা যায়। যার ফলে ট্যুর অপারেটররা চরম অস্থিরতায় ভুগছেন। প্রতিটি জাহাজ টিকিটের একটি নির্দিষ্ট দাম দেওয়া আছে। নিবন্ধিত ট্যুর অপারেটরদের ঐ দাম থেকে ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। ঐ ডিসকাউন্টের উপর নির্ভর করে ট্যুর অপারেটরেরা তাদের গেষ্টদের কাছ থেকে বুকিং নেয়। বুকিংয়ের পর তাদেরকে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে টিকিট কিনতে হয় বলে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ট্যুর অপারেটর। অনুসন্ধানে জানা যায়, জাহাজ মালিকদের অজান্তে জাহাজের টিকিট সেলম্যান’রা পিক সময়গুলোতে জাহাজের টিকিটগুলো প্রায় কালোবাজারি করে, সাথে ট্রান্সপোর্টের ব্যবসাও শুরু করেছেন। টিকিট সেলম্যান’রা গোপনে কমিশন চুক্তির মাধ্যমে রিক্সাওয়ালা, হোটেলের বয়, ম্যানেজার ইত্যাদি লোকের কাছে টিকিট সেল করেন। যা ট্যুর ব্যবসায়ীদের জন্য খুব দুঃখজনক বলে দাবি করেন বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর। যেসব ট্যুরিজম তাদেরকে ট্রান্সপোর্ট দেয় সেসব ট্যুরিজমদের টিকিট পেতে কোন জামেলায় পড়তে হয়না বলে জানা যায়। এসব সেলম্যানদের সাথে কিছু অনিবন্ধিত ট্যুর অপারেটরদের দহরম মহরম সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়। টিকিট সেলম্যান’রা ট্যুর অপারেটরদের সাথে প্রতিনিয়ত মন্দ করে বলে জানান একাধিক ট্যুর অপারেটর। টিকিটের জন্য কাউন্টারে যোগাযোগ করলে টিকিট পাওয়া যায়না কিন্তু ঐসব চাটুকারদের সাথে যোগাযোগ করলে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে টিকিট পাওয়া যায়। জাহাজের টিকিট সেলম্যানদের তৈরি করা এসব ব্যক্তিদের বায়োডাটাও কেউ ভাল করে জানেননা। অথচ এরাই ট্যুর অপারেটরের নাম ভাঙ্গিয়ে পর্যটক হয়রানী করছে বলে জানা যায়। যে টিকিট ট্যুর অপারেটর কক্সবাজার অফিস থেকে যে দামে কিনে ঐ একই টিকিট মাঝে মাঝে টেকনাফ জাহাজ ঘাঁট থেকে এর চেয়ে কম দামে গেস্টদের কাছে বিক্রির অভিযোগও পাওয়া গেছে। এতে করে প্রকৃত ট্যুর অপারেটরদের ব্যবসায় চরম আঘাত হচ্ছে বলে দাবি করেন দারুচিনি দ্বীপ ট্যুরিজমের মালিক সাংবাদিক হেলাল। আর এই বিষয়ে নির্বোধের দায়িত্ব পালন করছেন ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার -‘টুয়াক’। এই সংগঠনের কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনা। নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি করে যে যার মত দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করছেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জাহাজের টিকিট সেলম্যান’রা ইচ্ছামত টিকিট সেল করছেন এবং পালাক্রমে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন ট্যুর অপারেটররা।
বে-ক্রুজ জাহাজের টিকিটের দাম প্রায় প্রতিদিনই উঠানামা করছে বলে জানা যায়। নেই কোন নিয়মনীতি। এই জাহাজের টিকিটের দাম হঠাৎ ১০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত উঠানামা করে যার কারণে ট্যুর অপারেটরেরা খুব হতাশা প্রকাশ করেন।
এই বিষয়ে বে-ক্রুজ জাহাজের মালিক অবঃ কর্ণেল আশরাফের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পিক সময়গুলো দেখে আমরা টিকিটের দাম নির্ধারণ করি। টিকিটের দাম বাড়ানোর আগে বা পরে ট্যুর অপারেটরদের জানানো হয়। টেকনাফ শীপ ঘাঁটে কম দামে গেষ্টরা টিকিট পায় এই বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু টিকিট রয়ে গেলে তা টেকনাফ ঘাঁটে বিক্রি করা হয়। গেষ্টদের উপর নির্ভর করে কমবেশি দামে বিক্রি করি। কমদামে টিকিট বিক্রি করলে ট্যুর অপারেটরদের কোন সমস্যা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে কুতুবদিয়া জাহাজের টিকিট সেলম্যান নাসিরের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন শেষ নেই। ট্যুর অপারেটরদের সাথে মন্দ ব্যবহার, নিজের ইচ্ছামত টিকিট সেল, জাহাজে চাকুরী করে ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা করা এরকম অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে কুতুবদিয়া জাহাজের টিকিট সেলম্যান নাসিরের বিরুদ্ধে। প্রায় প্রতিটি জাহাজেরই একই অবস্থা বিরাজমান। কুতুবদিয়া জাহাজের মালিক চৌধুরী গ্রুপ এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সাথে ০১৭৩৪-৫০৩১২৮ এই নাম্বারে অনেকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার- টুয়াক’য়ের সভাপতি রেজাউল করিম এই বিষয়ে বলেন, জাহাজ কর্তৃপক্ষের কামখেয়ালী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আমি আগেই থেকে অবগত। জাহাজের অভার লোডিং, পিক সময়গুলোতে টিকিটের কালোবাজারি, রিক্সাওয়ালা, বয় ও ম্যানেজারদের কাছে কমিশন ভিত্তিক টিকিট সেল করা জাহাজ কর্তৃপক্ষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, আমার সংগঠনের একজন সিনিয়র নেতা একটি জাহাজে ও হোটেলে চাকুরী করেন। সে ঐ জাহাজ ও হোটেল মালিকের মন জয় করার জন্য সংগঠনের সার্থকে বিসর্জন দিতেও কর্ণপাত করে না। এই বিষয়ে কিছু বলতে গেলে বরং নিজের উপর প্রেসার তৈরি হয়। তাই বলে আপনি সংগঠনের সার্থকে মূল্যায়ন করবেননা এমন প্রশ্নের উত্তরে রেজাউল বলেন, প্রকৃত ট্যুর ব্যবসায়ীদের নিয়ে আমরা খুব দ্রুত মিটিংয়ে বসব। যত সমস্যা আছে তা নিরসনের ব্যবস্থা করব ইনশাআল্লাহ্‌।
ট্যুর অপারেটর দারুচিনি দ্বীপ ট্যুরিজমের মালিক সাংবাদিক হেলাল বলেন, যতটুকু জানি ট্যুর ব্যবসা একটি সম্মানজনক ও লাভজনক ব্যবসা। কিন্তু কক্সবাজারের অবস্থা দেখলেই মনে হয় এই ব্যবসা সবচেয়ে অসম্মানজনক। এখানে ট্যুর অপারেটরদের কোন সম্মান নেই। যারা জাহাজের টিকিট সেলম্যানদের তোষামোদি করতে পারে তাদের জন্য আলাদা সম্মান। তিনি বলেন, যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে এই ব্যবসায় কোন উচ্চ ডিগ্রিধারীরা প্রবেশ করবেননা। বরং যারা যুক্ত হয়েছে তারাও পালাক্রমে বের হয়ে যাবেন। তিনি আরোও বলেন, আমি এই বিষয়ে টুয়াক’য়ের সভাপতি – সম্পাদকের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তারা যেন দ্রুত এই বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

পাঠকের মতামত

Single Page Bottom

বিসিআরসি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড- ২০২৫ এ ভূষিত হলেন পুলিশ সুপার মো: নাইমুল হক পিপিএম

পর্যটন খাতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য পুলিশ সুপার জনাব মোঃ নাইমুল হক পিপিএম ময়মনসিংহ ...

সাজেদা বেগমকে গর্জনিয়া ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অর্পন

শামীম ইকবাল চৌধুরী,নাইক্ষ্যংছড়ি:: গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ...

সাংবাদিক জসিম আজাদের বসতভিটা দখলের ঘটনায় বাবু সহ ৩ জন কারাগারে

কক্সবাজারের উখিয়ায় সাংবাদিকের বসতভিটা দখলের অভিযোগে স্থানীয়ভাবে পরিচিত মাহফুজ উদ্দিন বাবু ও তাঁর দুই সহযোগীকে ...
Single Page Footer