ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৩/০৪/২০২৫ ১০:২১ এএম

সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে কক্সবাজারে গৃহনির্মাণের কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ সেই ছয়জন রাজমিস্ত্রীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। অপহৃতদের স্বজনরা টেকনাফ থানায় গতকাল মঙ্গলবার বিকালে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাত সাড়ে ৮ টার দিকে তাদের উদ্ধার করা হয়। টেকনাফের পাচারকারিদের আস্তানা হাবিরছড়া নামক পাহাড়ি এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগে, গতকাল বিকাল থেকে পুলিশী তৎপরতা শুরু হলে অপহরনকারিরা অপহৃতদের মধ্যে রশিদ আহমদ নামের একজনকে দিয়ে ০০৬২৮২১৭২৪৩৩২৫০ নম্বর থেকে মোবাইলে কল করে তাদের ইন্দোনেশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়।

অথচ ইতিপুর্বে অপহৃত এমাদ উদ্দিনের ভাই বাহার উদ্দিনকে জানিয়েছিলেন তাদের অপহরণকারিরা অপহরণের পর টেকনাফ নিয়ে রেখেছে। এমন সূত্র ধরে বাহার উদ্দিন গতকাল বিকালে অজ্ঞাতনামা অপহরণকারিদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
মঙ্গলবার নিখোঁজ রশিদ আহমদ ০০৬২৮২১৭২৪৩৩২৫০ একই নম্বর থেকে কল করে নিখোঁজ এমাদ উদ্দিনের ভাই বাহার উদ্দিনকে বলেছেন, তারা এখন ইন্দোনেশিয়ার পথে সাগরে রয়েছেন। বাহার উদ্দিন বলেছেন, রশিদ আহমদ তাকে বলেছেন টেকনাফ থেকে তাদের ট্রলারে ইন্দোনেশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার বিকালে বাহার উদ্দিন অপহৃত অপর তিনজনের স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে টেকনাফ থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগে অপহৃতদের নামপরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে যথাক্রমে মো. লুকুছ আলীর ছেলে রশিদ আহমদ (২০), ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), আব্দুল মান্নানের ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২), সুফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯) ও মৃত ছবর আলীর ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫)। তারা সকলেই সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার ঈদগাঁও বাজার এলাকার বাসিন্দা।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন অপহৃতদের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পাবার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, তাদের (অপহৃত) উদ্ধারের জন্য ইতিমধ্যে পুলিশ এবং অন্যান্য সংস্থাও কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে কাজ শুরু করেছে।

এর আগে, অপহরণের পর পরই অপহৃতদের আত্নীয়-স্বজন সিলেটের জকিগঞ্জ থানার শরনাপন্ন হয়েছিলেন। জকিগঞ্জের পুলিশ তৎক্ষণাত মোবাইল ট্র্যাকিং করে অপহৃতদের সর্বশেষ অবস্থান কক্সবাজারের টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাবিরছড়া এলাকাটি শনাক্ত করেছিলেন। টেকনাফের পুলিশও জানিয়েছেন যে, হাবিরছড়া নামের এলাকাটি অপহরণকারি ও মানবপাচারকারি চক্রের আস্তানা হিসাবে পরিচিত। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফ সদরে যাবার পথেই পাহাড় ও সাগর তীরের হাবিরছড়া নামের এলাকাটি অপহরণকারি ও মানব পাচারকারিদের একটি বড় আস্তানা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মানবপাচারকারি ও সংঘবদ্ধ অপহরণকারি চক্র দলে দলে বিভক্ত হয়ে পুরো টেকনাফ সীমান্ত ও সাগর উপকুলীয় এলাকাজুড়ে লুকিয়ে রয়েছে।

দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে রয়েছে তাদের দালাল ও সোর্স। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা কৌশলে লোকজনকে মালয়েশিয়া পাঠানোর লোভ দেখিয়ে টেকনাফ নিয়ে আসে। টেকনাফের পাহাড়ে রয়েছে এসব পাচারকারি দলের পৃথক পৃথক আস্তানা। বিশেষ করে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া, বড়ডেইল, নোয়াখালী পাড়া, হ্নীলা ইউনিয়নের পাহাড়ের লেদা, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাবিরছড়া, রাজুরছড়া, মিঠাপানিরছড়াসহ আরো অনেকগুলো পয়েন্টে রযেছে পাচারকারিদের আস্তানা।
টেকনাফের গহিন পাহাড়ে রয়েছে সংঘবদ্ধ পাচারকারিদের খামারবাড়িও। এসব খামারবাড়ি দেখতে মুরগির খামারের মতই। অনেকগুলোতে মুরগির লালন পালনও করা হয়। বাস্তবে এসব পাচারকারিদের ধরে আনা লোকজনদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। আবার এসব খামার বাড়ি মায়নামার থেকে আনা ইয়াবার চালান রাখার ডিপোসহ অন্যান্য আপরাধমূলক কর্মকান্ডের ডেরা হিসাবেও ব্যবহৃত হয়।

টেকনাফের লেদার গহীন পাহাড়ে এরকমই একটি খামার বাড়ির ছবি সংবাদকর্মীদের হস্তগত হয়েছে। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা এলাকার ইয়াবা ডন হিসাবে পরিচিত নুরুল হুদার পুত্র শাহ আজমের খামারটিতে সার্বক্ষনিক পাহারায় থাকে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা। পাহাড়ে ইয়াবা কারবারি, মানব পাচারকারি, অপহরণকারি এবং সশস্ত্র ডাকাতদলের এরকম খামারবাড়িসহ মাটির তৈরি গুদাম ঘরও রয়েছে। সুত্র,কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত