জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং অঞ্চলের মানুষ। বিশেষ করে, মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি ক্ষেত্রে বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষকদের।
এই সংকটে মোকাবিলায় আজ রোববার দুপুরে উপজেলার সাবরাং হারিয়াখালী উপকূলীয় অঞ্চলে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় ও ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল একশন (ইপসা)র আয়োজনে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে “কৃষি প্রযুক্তি প্রদশর্নী ও সচেতনতামূলক” মাঠ দিবস উদযাপন করা হয়েছে।
এ সভায় বক্তব্য রাখেন-উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলাম এবং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও সাবরাং ইউপির প্রশাসক মো দেলোয়ার হোসেন। উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মহসিন খান, ইপসার প্রকল্প সমন্বয়কারী মোহাম্মদ রাশেদুল করিম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর জীবিকা উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ বদরুজ্জামান রানা, টেকনিক্যাল কর্মকর্তা- সয়্যি সেলিম উল্লাহসহ অনেকে।এসময় উপস্থিত ৫০জন কৃষক-কৃষানিকে একসেট সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ এবং ইয়েলো র্কাড বিতরণ করা হয়।
ইপসার প্রকল্প সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাশেদুল করিম বলেন,প্রকল্পের আওতায় সাবরাং ইউনিয়নের ৫৬০জন প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা করা হয়েছে এবং বর্তমানে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং, হ্নীলা ও হোয়াইক্যাং ইউনিয়নে স্থানীয় কৃষকদের মাধ্যমে ৫০টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে। এসকল জলবায়ু সহনশীল চাষাবাদের মাধ্যমে উচ্চ ফলন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব তা বুঝানোই এই “মাঠ দিবস” পালনের মূল উদ্দেশ্য।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু প্রভাবে উপকূলীয় এই অঞ্চলের কৃষকদের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তাই কিভাবে প্রযুতিসহ মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে চাষাবাদ বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়ে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
ওসমান গণি নামে একজন কৃষক লবণাক্ততা এলাকায় একটি জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে ঝিংগা চাষের বাগান করেছে। এতে সেই লাভবানও হয়েছে। ফলে অনেক কৃষক এ মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করতে আগ্রহ হয়েছে।’
তিনি বলেন,‘মালচিং ব্যবহারে মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা সহজ হয়। এ পদ্ধতির ফলে জনবল-খরচ অনেকটা কমানো যায়।যা কৃষকরাও লাভবান হয়।পাশাপাশি এই প্রযুক্তি প্রয়োগ ও ব্যবহার করে অল্প পরিশ্রমে, কম খরচে ও বিষমুক্ত দ্বিগুণ পরিমাণ ফসল উৎপাদন করতে পারবেন।এতে করে, কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন তেমনি ভাবে দেশের কৃষিখাত আরো শক্তিশালী হবে।
চাষি ওসমান গনি বলেন, মালচিং দেওয়া ১৪টি বেডে ৩০বার সেচ দেয়া হয়েছে। মালচিং ছাড়া ৬টি বেডে ৮০ বার সেচ দেয়া হয়েছে। এ মালচিং পদ্ধতিতে ঝিংগা চাষ করেছি। এতে আমার জনবল-ব্যয় কম হয়েছে। যার ফলে লাভবানও হয়েছি। আমার ঝিংগা চাষ করতে ৮-১০হাজার খরচ হয়েছে।ইতিমধ্য ১৯হাজার টাকা ঝিংগা বিক্রি করেছি।জমিতে আরও অনেক ঝিংগা রয়েছে।সেগুলো বিক্রয় করলে আরও ৩০হাজার টাকা পাওয়ার আশা করছি।’
উপকারভোগী রেজুয়া বেগম বলেন,মালচিং ব্যবহারের ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও পানি ও শ্রমিকের ব্যবহার আগের চেয়ে কম লাগে এবং সামনে আর ও অনেকে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করবে আশা করেন।
জীবিকা বিশেষজ্ঞ বদরুজ্জামান বলেন, এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন উল্লেখ যোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ফলাফল কৃষকদের মধ্যে মালচিং ব্যবহারের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং পরিবেশবান্ধব টেকসই কৃষি চর্চাকে আরও শক্তিশালী করবে।
জানতে জাইলে টেকনাফ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও সাবরাং ইউপির প্রশাসক মো দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই উপকূল এলাকায় ৬৩হাজার বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে ৫০জন কৃষক-কৃষক নিয়ে মালচিংপদ্ধতিতে চাষাবাদ করার জন্য ইপসা ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল-কে ধন্যবাদ জানান। আগামীতে কৃষকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আহবান জানান।
পাঠকের মতামত