প্রকাশিত: ২৫/১০/২০১৭ ৭:৩০ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১১:৪৯ এএম

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ::

টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালীপাড়ায় বন ভূমি দখল করে বসতবাড়ি নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সমুদ্র উপকূলের ঝাউগাছ কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে এসব বসতবাড়ি। বন বিভাগের স্থানীয় কতিপয় অসাধু কর্মীদের ম্যানেজ করে প্রভাবশালীরা এসব অপকর্ম অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে রাজারছড়া বন বিটের আওতাধীন বাহারছড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নোয়াখালীপাড়ায় রোহিঙ্গা ফয়েজ আহমদ উপকূলীয় ঝাউ বাগানের ঝাউ গাছ কেটে এনে বাড়ি নির্মাণ করছে। প্রতিদিন কাটা হচ্ছে ঝাউগাছ এবং নির্মাণ করা হচ্ছে বাড়ি ও ট্রলার। তিনি শুধু একা নন, প্রতিটি এলাকায় অসাধু এক শ্রেনীর বন কর্র্মী, ভিলেজার ও হেডম্যানদের ম্যানেজ করে টেকনাফে সংরক্ষিত বন ভূমি দখল করে পানের বরজ তৈরী ও বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।

একদল সংবাদকর্মী ২৩ অক্টোবর দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গা ফয়েজ আহমদ দাবি করে বলেন ‘বাড়ি তৈরীর জন্য ঝাউ গাছসহ অন্যান্য গাছগুলো রাজারছড়া বিটের হেডম্যান ইসমাইল থেকে ১০ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে এনেছি’। তাছাড়া রাজারছড়া বিটের আওতাধীন এলাকার লোকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের মাঝে বনবিভাগের রির্জাভ জমি প্লট বরাদ্দ দেয়ার মতো বসতবাড়ি নির্মানের সুযোগ করে দেয়া ছাড়াও পান বরজ এবং সুপারী বাগান করার সুযোগ দেয়ার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বনের গাছ বিক্রি করে সাবাড় করছে বনাঞ্চল। আর সেখানে সেমি পাকা ও দালান বাড়ি নির্মাণ করছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজারছড়া বিট কর্মকর্তা আয়ুব আলী এ নিয়ে লেখালেখি না করার অনুরোধ জানান। অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে হেডম্যান ইসমাইল নিরব থাকেন।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পুরো বাহারছড়া ইউনিয়নে চলছে তুগলকি কান্ড। বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা স্থানীয় কিছু লোককে মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করে সুযোগ দিচ্ছে, আবার কিছু জনসাধারণকে বানোয়াট মামলা দিয়ে হয়রানিসহ প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্রের চরম ক্ষতি করে যাচ্ছেন। যুগ যগ ধরে বন বিভাগ জমি দখলদারকে উচ্ছেদ করতে পারছেননা। আর এসব দখলকৃত জায়গা বিক্রি করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের কাছে। দীর্ঘদিন এ দখল প্রক্রিয়া চলতে থাকলেও নীরব রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কয়েকটি পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের বিভিন্ন পাদ দেশে বন ভুমি দখল করা হয়েছে। ছোট ছোট পিলার দিয়ে যে যার মত করে জায়গা সনাক্ত করে রেখেছে। অনেকে আবার মাটি ভরাট করে ঘরও তৈরী করেছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বছরের পর বছর ধরে ওই এলাকায় চলছে অবৈধ দখল প্রক্রিয়া। স্থানীয় কিছু দখলবাজ প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকার দলের লোক দাবী করে পাহাড় কেটে এ অবৈধ দখল চালাচ্ছেন। তারা পাহাড়ের গাছ কেটে লাকড়ি হিসেবে পুড়ে ফেলে। আর ওই জায়গা দখল করে ছোট ছোট পিলার দিয়ে সনাক্ত করে রাখেন। পরে রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন লোকজনকে বন কর্মীদের যোগসাজসে বিক্রি করে। ক্রেতাদের তারা ভূয়া কাগজ-পত্রও দিচ্ছে। আর এসব বন ভুমি গন্ডাপ্রতি বিক্রি করছে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত।

এলাকাবাসী জানান, পাহাড় কাটা ও দখলের প্রক্রিয়া নেপথ্যে রয়েছেন বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, হেডম্যান ইসমাইল ও ভিলেজার। তাদের নেতৃত্বেই চলছে পাহাড় কাটা, দখল ও বিক্রি বাণিজ্য। টেকনাফ সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবিএম আবুল হোসেন রাজু বলেন ‘এ অবৈধ দখল প্রক্রিয়া বন্ধে একাধিকবার বাধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে কোন কাজ হয়নি। এসব অপকর্মের নেপথ্যে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, হেডম্যান ও ভিলেজারদের সংশ্লিষ্টতার অহরহ অভিযোগ শুনা যায়’।

শীলখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাহাড় নিধন করে বন ভূমি দখলসহ পরিবেশ ও প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্রের নষ্ট নিয়ে এখনো কোন মামলা হয়নি’।

নির্বিচারে ঝাউ বাগান কেটে গাছ দিয়ে বাড়ি ও ফিশিং ট্রলার তৈরী বিষয়ে উপকূলীয় বনবিভাগের রেঞ্চ কর্মকর্তা বলেন ‘বিষয়টি সম্পর্কে কেউ আমাকে অবহিত করেনি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে। আর কেউ যদি ঝাউ বন কেটে দখল করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।

বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হুমায়ুন কাদের বলেন ‘দিন দিন জমির মুল্য বাড়ছে। সেই সাথে জনসংখ্যা এবং চাহিদাও বাড়ছে। পুরো ইউনিয়ন জুড়েই বন ভুমির দখল-বেদখল নিয়ে চরম বিরোধ চলছে। এ নিয়ে মারামারি, সংঘর্ষ, মামলা, পাল্টা মামলা এবং স্থানীয়ভাবে সালিশ-বিচার শেষ হচ্ছেনা’।

পাঠকের মতামত