ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৪/১১/২০২৫ ১২:৩৪ পিএম
হিসাব বিবরণী

কক্সবাজার জেলার উপ-সহকারী নিবন্ধক (সমবায়) কবির আহমদের বিরুদ্ধে এক সমবায় সমিতির নির্বাচনী ব্যয়ের নামে লক্ষাধিক টাকা অতিরিক্ত দেখিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সমিতির সংশ্লিষ্ট সদস্য ও দায়িত্বশীলরা বলছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা অজুহাতে অস্বাভাবিক খাত তৈরি করে বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জেলা সমবায় অফিসারের নামে উল্লেখ করা হয়েছে “সম্মানি ভাতা”, যা নিয়ে সমিতির সদস্যরা প্রশ্ন তুলেছেন। তারা দাবি করেছেন, তিনি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বে ছিলেন না, ফলে তাঁর নামে সম্মানি ভাতা আদায়ের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

ব্যালট পেপার ছাপার খরচ ৩–৪ হাজার টাকার বেশি নয় সত্ত্বেও অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। তাছাড়া দুই ব্যক্তির কক্সবাজার থেকে উখিয়া যাতায়াতে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হওয়ার সুযোগ নেই, অথচ ব্যয়ের খাতে দেখানো হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। তিনজন ব্যক্তির আপ্যায়ন খাতে ১৫ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। এছাড়া “বিবিধ” নামে আরও ১৫ হাজার টাকার ব্যয়ের খাতও দেখানো হয়েছে, যার কোনো সুনির্দিষ্ট বর্ণনা নেই। মনোনয়ন পত্র ছাপাতে ৩ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে, যা অভিযোগকারীদের ভাষায় অস্বাভাবিক এবং অতিরঞ্জিত।

নথি অনুযায়ী নির্বাচনী ব্যয়ের মোট খরচ দাঁড়িয়েছে ২,১০,০০০ টাকা। তবে সমিতির সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, এই খাতগুলোর বেশিরভাগই অযৌক্তিকভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। বিশেষ করে কয়েকজন ব্যক্তির আপ্যায়ন, যাচাই–বাছাই, সম্মানি ও ভাতা বাবদ বিপুল অঙ্কের টাকা দেখানো নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাদের দাবি, আপ্যায়ন, ব্যালট পেপার, যাতায়াত ব্যয়, মনোনয়ন ছাপা—এসব খাতে প্রকৃত ব্যয় মোটেও প্রদর্শিত পরিমাণের কাছাকাছি নয়।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, জেলা ও উপজেলা সমবায় অফিসের কিছু কর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে সমবায় নিবন্ধন, নির্বাচন ও অন্যান্য কার্যক্রমে বিভিন্ন অজুহাতে অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে টাকা আত্মসাত করছে। এতে সমবায় খাতের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু কর্মকর্তা সমবায়গুলোকে ঘুষ ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। সুযোগ পেলেই বিভিন্ন সমিতির নিবন্ধন ও নির্বাচনী কাজে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে, ফলে সাধারণ সমিতি সদস্য ও উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ভুক্তভোগীরা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জরুরি তদন্তের দাবি তুলেছেন। তাদের মতে, তদন্ত হলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। তারা সমবায় খাতের স্বচ্ছতা রক্ষায় গণমাধ্যমের আরও সক্রিয় ভূমিকারও আহ্বান করেছেন। এ বিষয়ে জেলা সমবায় দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্টদের মতে উখিয়া উপজেলার বাণিজ্যিক কেন্দ্র কোটবাজারের দোকান মালিক সমিতির নির্বাচনে ২ লাখ ১০ হাজার টাকার ব্যয় দেখানো একটি সাধারণ হিসাব নয়—এটি একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন। নির্বাচনের নামে যে বিল প্রকাশ্যে এসেছে, তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা স্বাভাবিক। কারণ ব্যয় তালিকার উপস্থাপনা শুধু অস্বাভাবিক নয়, বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও মনে হচ্ছে।

সব মিলিয়ে যে ব্যয় দেখানো হয়েছে, তা একধরনের কৃত্রিম হিসাবের ইঙ্গিত দেয়। এগুলোর কোনোটিই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অপরিহার্য নয় এবং স্বাভাবিক বাজারদরের সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

“বিগত কোনো নির্বাচনে এমন অস্বাভাবিক ব্যয় দেখা যায়নি”—সাবেক সভাপতি আবু ছিদ্দিকের কথায় মানুষের ক্ষোভের প্রতিফলন ফুটে উঠেছে। তার বক্তব্য স্পষ্ট করে যে এই ব্যয় শুধু অস্বাভাবিক নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে সদস্যদের উপর আর্থিক বোঝা চাপানোর একটি প্রক্রিয়া।

স্বচ্ছতা নিশ্চিতের একমাত্র পথ—নিরপেক্ষ তদন্ত একটি সমবায় সমিতি সদস্যদের অংশীদারিত্বে চলে। তাদের টাকায় গঠিত তহবিল কীভাবে ব্যবহার হবে তা জানার অধিকার তাদের রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক ব্যয় দেখানো শুধু দায়িত্বহীনতা নয়, বরং আর্থিক অনিয়মের সম্ভাবনাকে উস্কে দেয়।

সচেতন মহলের মতে, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সদস্যদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলা যায়—এ ঘটনায় দ্রুত তদন্ত হওয়া জরুরি।
যে টাকা ব্যয় হয়েছে তা কি সত্যিই ব্যয়, নাকি কাগজে–কলমে দেখানো?
কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে তার প্রমাণ কোথায়?কে অনুমোদন দিয়েছে?

পাঠকের মতামত

কুতুপালং বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনে জহির সভাপতি ও রুবেল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত

কুতুপালং বাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির লি.–এর নির্বাচন উৎসবের আমেজে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২২ নভেম্বর) ...