
দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্মী বর্বরতার মামলা শুনানির পর এবার রোহিঙ্গাসহ বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সংকট নিয়ে জেনেভায় ৩ দিনের আলোচনায় বসেছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর উদ্যোগে ওই আলোচনায় ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাড়তি বোঝা বহনকারী বাংলাদেশও অংশ নিচ্ছে। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রায় ২০০০ অতিথির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনা শেষ হচ্ছে আজ। ঢাকার প্রত্যাশা- আলোচনায় বাংলাদেশের বড় সংকট রোহিঙ্গা ইস্যুর টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারের পাশাপাশি সঙ্কটের উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের ওপর বৈশ্বিক চাপ আরও বাড়বে। বিচার আদালতে গাম্বিয়ার দায়ের করা রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলার শুনানির পর শরনার্থী ফোরামের আলোচনার প্রেক্ষাপটে পূর্ণ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে নিজের বসত ভিটায় ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠছেন কক্সবাজার ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তারা এমনটাই জানিয়েছেন। আয়োজকদের তরফে বলা হয়েছে- রোহিঙ্গা সঙ্কট দিনে দিনে এতটাই জটিল রূপ ধারণ করেছে যে এর উত্তরণ মনে হচ্ছে সুদূর পরাহত।
কিন্তু বিশ্বকে হাল ছাড়লে হবে না। এজন্য প্রয়োজন সার্বিক অংশগ্রহণ ও সহায়তা বজায় রাখা। যেন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নারী ও শিশু ও পুরুষদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম নির্বাসিত জীবন কাটাতে ন হয়। জেনেভার আয়োজনকে সামনে রেখে দেয়া বিবৃতিতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, আমরা দাঁড়িয়ে আছি উদ্বাস্তু সমস্যার চূড়ান্তে থাকা একটি দশকে, যেখানে শরণার্থী সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। প্রথমবারের মত আয়োজিত গ্লোবাল রিফিউজি ফোরামে, আমাদের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে সামনের দশকে আমরা কি করতে পারি তা চিন্তা করছি। একই সঙ্গে শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের জন্য আমরা কি করতে পারি তা-ও ভাবতে হচ্ছে। এই ফোরাম গ্লোবাল কম্প্যাক্ট অন রিফিউজিস-এর প্রতি আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকারের প্রতিফলন এবং সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি)’র অবিচল আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। গ্লোবাল কম্প্যাক্ট অন রিফিউজিস সরকারি-বেসরকারি, উন্নয়ন সংস্থা, অর্থনৈতিক সংগঠন, সুশীল সমাজ, ধর্মীয় সংস্থা এমনকি শরণার্থী পর্যন্ত সকলের জন্য সেই প্লাটফর্ম যেখানে প্রত্যেকের দায় দায়িত্বের দিক-নির্দেশনা পাওয়া যাবে। আয়োজকরা বলছেন, এটি সেই ফোরাম যেখানে রোহিঙ্গাসহ বিশ্বব্যাপী শরানার্থী সংকট মোকাবিলার প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন আইডিয়া সংযোজিত হবে।
জাতিসংঘের সদর দপ্তরের তথ্য মতে, প্রথমবারের মত গ্লোবাল রিফিউজি ফোরাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেনেভাস্থ জাতিসংঘ দপ্তর প্যালেই ডেস ন্যাশনস-এ; যেখানে শরণার্থী, রাষ্ট্র প্রধান, জাতিসংঘের নেতৃত্বস্থানীয় কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন সংস্থা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অনেকে মিলিত হয়েছেন বৈশ্বিক ওই সঙ্কটের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ খুঁজতে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ফোরামটির আয়োজন করলেও সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে সুইজারল্যান্ড। সহায়ক হিসাবে আছে কোস্টারিকা, ইথিওপিয়া, জার্মানি, পাকিস্তান ও তুরস্ক। আয়োজকদের ভাষ্য মতে, ফোরামটির মূল ফোকাস হচ্ছে বিশ্বের শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সাহায্যের জন্য নতুন উপায় খুঁজে বের করা ও বিভিন্ন পক্ষের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকার আদায় করা। বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ, সংঘাত ও নির্যাতনের কারণে ৭ কোটিরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত।
এর মধ্যে আড়াই কোটি হচ্ছে শরণার্থী; যারা আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করেছে এবং নিজ দেশে ফিরে যেতে অক্ষম। এশিয়া মহাদেশে ৪২ লাখ শরণার্থী রয়েছে যার ২৭ লাখ অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু। ২২ লাখ মানুষ রাষ্ট্রহীন। যাদের জন্য সংহতি, সকল পক্ষের সম্মিলিত দায়িত্ব গ্রহণ ও সমস্যা সমাধানকল্পে বাস্তব প্রতিশ্রুতি অতীব প্রয়োজন, আর এগুলো অর্জনই এই ফোরামের লক্ষ্য। আফগান শরণার্থীদের সংখ্যা এই মহাদেশে সবচেয়ে বেশি আর তারা বাস্তুচ্যুত হয়ে আছে দীর্ঘতম সময় ধরে। নিজ ভূমি থেকে প্রথমবার উৎখাত হওয়ার চার দশক পর আজ ২৭ লাখেরও বেশি আফগান শরণার্থী নিবন্ধিত আছেন বিভিন্ন দেশে। আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের উপর চাপ কমাতে ও দীর্ঘকালীন এই শরণার্থী সংকটের সমাধান খুঁজে বের করতে এখন আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের ভূমিকা আরও জোরদার করা প্রয়োজন বলে মনে করে গ্লোবাল ফোরাম।
পাঠকের মতামত