প্রকাশিত: ০৩/১১/২০১৬ ১০:২৯ পিএম

bmda20161103195502জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) ডকুমেন্ট জাল করে সাড়ে ১৭ কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিয়েছে নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এক প্রকল্পে জাল সনদপত্র দেখিয়ে এই কাজ বাগিয়ে নেয় তারা।

জানা গেছে, এনএসসির ‘পারিসা জেবি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ইস্যুকৃত সনদ নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং জাল করে নিজেদের নামে চালিয়ে দেয়। পরবর্তীতে বিএমডিএ’র যাচাই-বাছাইয়ের (ক্রস চেক) চিঠিও কৌশলে পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠানটি। নাভানার জালিয়াতির সব কাগজপত্র জাগো নিউজের কাছে রয়েছে।

আরো জানা যায়, ‘বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের একটি কম্পোনেন্টের দরপত্রে অভিজ্ঞতা সনদ দাখিলের বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু এ ধরনের কাজের কোনো অভিজ্ঞতাই নাভানার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছিল না। এ অবস্থায় নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং দরপত্রের জন্য জাল সার্টিফিকেট জমা দেয়। একই সঙ্গে কাজও পায় তারা।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে নাভানার পক্ষে কোনো প্রকার সনদ ইস্যু করা হয়নি। তারপরও টেন্ডারে এনএসসির অভিজ্ঞতা সনদ জমা দেয়ায় পর এর সত্যতা জানতে এনএসসিকে চিঠি দেয় বিএমডিএ। সঙ্গে সেই অভিজ্ঞতার সনদটিও সংযুক্ত করে দেয়া হয়। এনএসসি ২০ সেপ্টেম্বর এই চিঠির জবাবে জানায়, ‘সংযুক্ত সনদপত্র এখান থেকে ইস্যু করা হয়নি’।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, নাভানার পক্ষে আমরা কোনো সার্টিফিকেট ইস্যু করিনি। ইতোপূর্বে নাভানা এই ধরনের কোনো কাজই করেনি।

তিনি বলেন, বিএমডিএ’র পক্ষ থেকে পরবর্তীতে নাভানার দাখিলকৃত সনদ সঠিক কিনা জানতে চিঠি এসেছিল। আমরা এই সনদ ক্রীড়া পরিষদ থেকে ইস্যু করিনি বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলাম। তারপরও কীভাবে কি হয়েছে আমরা জানি না। তার ভাষায়, ‘আমরা চিঠি পাঠাই একটা, বিএমডিএতে জমা হয় আরেকটা’।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে বরেন্দ্র এলাকায় খালে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ করে সেচ সুবিধা বর্ধিতকরণের মাধ্যমে ৩৭৮০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় নেয়া হয়। ফলে বছরব্যাপী প্রায় ৩৭৮০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের আশা করছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে প্রকল্পের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং পরিবেশের ভারসাম্য উন্নয়নের নিমিত্তে ফলদ, বনজ এবং ঔষধি বৃক্ষরোপণ, প্রকল্প এলাকায় শ্রমিক এবং প্রান্তিক চাষিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা।

দুই বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ সম্পাদনে বিভিন্ন কম্পোনেন্টের টেন্ডারিং সম্পন্ন হচ্ছে। এই কম্পোনেন্টের মধ্যে একটি হচ্ছে ২৫০ মি.মি. ডায়া পাইপলাইন নির্মাণ এবং ৪০০ মি.মি. ডায়া পাইপলাইন নির্মাণকাজ। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত কাজের টেন্ডারিংয়েই অনিয়ম ও যোগসাজশ হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে বিএমডিএ’র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আবদুর রসিদ বলেন, আমাদের প্রক্রিয়ায় কোনো ভুল নেই। প্রথমবার এই টেন্ডারে নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাগজপত্রে সমস্যা ছিল। এজন্য দ্বিতীয়বার টেন্ডার ইস্যু করা হয়। এসময় তাদের কাগজপত্র সঠিক ছিল ও এটি ক্রস চেক করা হয়েছে। কিন্তু নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং এই বিষয়টিকে এড়িয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কর্পোরেট মার্কেটিংয়ের সমন্বয়ক জাহিদ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, আমরা ওয়াসার সার্টিফিকেট জমা দিয়েছি। কিন্তু ওয়াসার কাজের অভিজ্ঞতা বিএমডিএর টেন্ডারের সঙ্গে সামঞ্জস্য কিনা- এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি। অথচ এনএসসির সনদ জমা না দিলে বিএমডিএ যাচাইয়ের চিঠি কেন দেবে। এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।

পাঠকের মতামত

সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টির আভাস

আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী সপ্তাহজুড়ে সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। সেই সঙ্গে সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টির ...