প্রকাশিত: ২১/০২/২০১৭ ১১:১০ পিএম
ফাইল ছবি

শ.ম. গফুর, উখিয়া ::

ফাইল ছবি

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের পাহাড়ে সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প ওঁকি দিচ্ছে পর্যটন সাধারণকে। ইতিমধ্যে দেশের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান ঘুমধুমের প্রত্যন্ত পাহাড়ী ঢালু ও সমতল ভূমি জোড়ে গড়ে তুলেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অবলোকনের পর্যটন স্পট। ইয়াহিয়া গ্র“প গড়ে তুলেছে আম্রকানন নামের পর্যটন গার্ডেন ও বাঙ্গালী সংস্কৃতির আদলে গড়ে তুলেছে (মাছাং ঘর) বিশ্রামাগার। অনুমোদন নিয়েছে একটি কুমির চাষ প্রকল্প স্থাপনের। দেশের শীর্ষ স্থানীয় ঔষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠান রেডিয়্যান্ট ফার্মার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রেডিয়্যান্ট বিজনেস কর্ণসোটিয়াম গার্ডেন।  আকিজ গ্র“প স্থাপিত আকিজ ওয়াইল্ড লাইভ ফার্ম তথা কুমির চাষে বিস্ময়কর সাফল্য এসেছে। প্রতিষ্টিত এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কুমির চাষ প্রকল্পে ৬শ’ বাচ্চা প্রজনন হওয়ায় এ সফলতা দেখে উদ্যোক্তারা মহা খুশি। ঘুমধুমের পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত কুমির চাষ প্রকল্পটি কেবল বাংলাদেশে নয় এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ব বৃহৎ কুমির চাষ প্রকল্প। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কুমির চাষ বিরাট ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছেন রপ্তানীকারকরা।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, উখিয়া উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা থেকে ৬০ কিলোমিটার দুরত্বে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের বালূখালী টেলিভিশন উপ-কেন্দ্র থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার ভিতরে ঘুমধুম পাহাড়ী এলাকায় ২৫ একর জায়গার উপর এ বৃহৎ কুমির চাষ প্রকল্পটি গড়ে তুলে দেশের বৃহত্তর বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্টান আকিজ গ্র“পের অপর একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্টান আকিজ ওর্য়াল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী সাংসদ শেখ আকিল উদ্দিন। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ও দর্শনার্থীদের সমাগম হচ্ছে কুমির চাষ দেখতে।

প্রকল্পের ফিল্ড অফিসার সুলতান আহমদ জানান, মালয়েশিয়া থেকে ৫০টি কুমিরের বাচ্ছা আমদানি করে ঘুমধুমের পাহাড়ে আধুনিক ও প্রযুক্তির মাধ্যমে কুমিরের চাষ করা হয়। গত কয়েক বছর পূর্বে গড়ে উঠা এ প্রকল্পের মধ্যে ৩টি কুমির মারা যায়। ৪৭টির মধ্যে লালিত-পালিত ৩১টি মাদি কুমির বাচ্চা দেওয়া শুরু করেছে। গত কয়েক মাসে প্রায় ৬শ’ কুমিরের বাচ্চার প্রজনন হয়েছে। নিবিড় পরিচর্যা, চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত খাবার প্রয়োগ করায় বর্তমানে সকল বাচ্চা সুস্থ অবস্থায় দিন দিন বড় হচ্ছে। প্রকল্প সংশিষ্টরা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে কুমিরের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আগামী ১বছরের মধ্যে এ প্রকল্পে উৎপাদিত কুমির এসব দেশে রপ্তানী করে হাজার কোটি টাকা আয় করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ব্যাপক অবদান রাখবে। উদ্যোক্তারা আরো আশা করছেন, কুমির চাষের পাশাপাশি এ প্রকল্পে প্রজাপতির চাষ, বার্ড পার্ক সহ কটেজ ও মিউজিয়াম হাউজ গড়ে তুলে প্রকল্পটিকে একটি পর্যটন স্পট হিসাবে গড়ে তোলা হবে। এতে দেশি-বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটলে সরকার পর্যটন খাতেও প্রচুর রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে।

সরেজমিন কুমির চাষ প্রকল্প ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,  ২০০৯ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটিকে ২০১০সালের শুরুতেই পরিক্ষামূলক ভাবে ৫০টি কুমির উম্মুক্ত জলাশয়ে ছাড়া হয়। তৎমধ্যে ৩টি কুমির মারা গেলেও বর্তমানে ৪৭টি কুমির সুস্থ রয়েছে। কুমির চাষ প্রকল্পের ম্যানেজার নুরুল ইসলাম জানান, সপ্তাহে এসব কুমিরদের খাবার হিসাবে ২‘শ কেজি মাছ, ৩শ কেজি মাংস সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি বাচ্চা কুমিরদের মাছ-মাংস কিমা বানিয়ে খাবাতে হয়। তিনি জানান, প্রতি মাসে এসব কুমিরদের জন্য ব্যয় হয় দেড় লাখ টাকা। এ প্রকল্পে থাকা ৩১টি মাদি কুমির গত ২ বছরে  ৮’শ বাচ্চা প্রসব করেছে। তৎমধ্যে বিভিন্ন কারনে ১১টি বাচ্চা মারা গেলেও বাকী বাচ্চাগুলো বর্তমানে সাড়ে ৪ ফুট থেকে সাড়ে ৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়েছে। ওজনেও বেশ ভাল। সব কুমিরই সুস্থ আছে। আগামী বছর এসব কুমির বিদেশে রপ্তানী করলে প্রায় হাজার কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এ হাতে সরকার ও রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সুন্দরবনে সরকারী অর্থায়ানে আরো একটি কুমির চাষ প্রকল্প রয়েছে। তবে ঘুমধুমের পাহাড়ে আধুনিক পদ্ধতিতে গড়ে ওঠা প্রকল্পটি দেশের সর্ববৃহত্তম ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কুমির চাষ প্রকল্প। কুমির চাষ প্রকল্পের এডভাইজার ঝুলন দাশ জানান, প্রকল্পে থাকা মাদি কুমির গুলো এক সাথে গড়ে ৫০-৫৫টি ডিম ছাড়ে। এসব ডিম সমূহ সঠিক রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য নজর রাখা হলে প্রতিটি ডিম থেকেই বাচ্চা ধারণ করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, আগামী বছরের শুরুতেই বিদেশে রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু হবে তৎ মধ্যে কোরিয়ায় রপ্তানি করা হবে  কুমিরের মাংস, জাপানে রপ্তানি করা হবে চামড়া ও হাটু। অন্যান্য সামগ্রী যাবে চীনে। ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, অবহেলিত একটি ইউনিয়নে কুমির চাষ প্রকল্পে মত একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। পাশাপাশি আকিজ গ্র“পের বদন্যতায় এখানে একটি পর্যটন স্পট গড়ে তোলার ও তাদের পরিকল্পনা রয়েছে। তা যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে ঘুমধুম একটি বাণিজ্যিক নগরীতে পরিনত হবে।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদার বিষয়ক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদার করণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিশেষ ...

নাফ নদের ৩৩ কি.মি. ও সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ২০ কিমিতে বসেছে ৬ রাডারসীমান্ত ও সমুদ্রে নজরদারিতে রাডার ড্রোন থার্মাল ক্যামেরা

এবার দেশের সীমান্ত ও সমুদ্র সুরক্ষায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নজরদারি রাডার, ড্রোন ও থার্মাল ক্যামেরা যুক্ত ...

তদন্তের নির্দেশ চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজিকেটেকনাফে হত্যা মামলার এজাহার পাল্টে দিল পুলিশ

কক্সবাজারের টেকনাফে একটি হত্যা মামলার এজাহার পুলিশ কর্মকর্তারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন- এমন অভিযোগে আদালতে মামলা ...

ইউএনএইচসিআর ’এর প্রতিবেদনবাংলাদেশে নতুন অনুপ্রবেশকারি রোহিঙ্গা দেড় লাখের বেশি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাত পুনরায় শুরু হওয়ার ফলে ২০২৩ সালের ...

ব্র্যাক আয়োজিত সংলাপে নারীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ৫ দফা সুপারিশ

সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দেশে ‘আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক’ কর্ম ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আশাব্যঞ্জক নয়। সম্প্রতি ব্র্যাকের ...