প্রকাশিত: ২৬/০৫/২০১৭ ৮:৪৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:৩৪ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
গ্রামে বিদ্যুৎ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। কোনো কোনো এলাকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। একদিকে প্রচ- গরম অন্যদিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির এমন অবনতিতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন কমে গেছে। পানি সংকটের পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবাও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ব্যক্তিজীবনে নেমে এসেছে চরম অশান্তি।

বিআরইবি সূত্রে জানা যায়, শহর এবং গ্রামের মানুষের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রাপ্তি নিয়ে চরম বৈষম্য রয়েছে। রাজধানী এবং আশপাশের শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হলেও গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহের অনেকটা উদাসীনতা লক্ষ করা গেছে। কোনো কোনো এলাকায় দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দু-তিন ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। এমন অবস্থায় সংযোগ থাকার পরও বিদ্যুৎসুবিধা ভোগ করতে না পারায় চরম ক্ষুব্ধ গ্রামের মানুষ। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ৮০টি সমিতির মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। দেশের মোট ২ কোটি ৪০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের গ্রাহক ১ কোটি ৮০ লাখ। সারা দেশে ৮০টি সমিতির মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, যশোর ও বরিশাল অঞ্চলের ৪১টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অবস্থা খুবই নাজুক। এসব এলাকায় লোডশেডিংয়ে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। মন্ত্রণালয়ে লেখা চিঠি থেকে জানা যায়, চলতি মাসের প্রথম দিক থেকে এ পর্যন্ত ৪১টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পিকআওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ২ হাজার ৩৪৪ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার ১৮৪ মেগাওয়াট। লোডশেডিং করা হয় ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ অর্ধেক লোডশেডিং করা হয়েছে। পিকআওয়ারে কোনো কোনো গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে সমিতিগুলোয় সরবরাহ করা হয়েছে চাহিদার ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) কর্তৃক প্রায়ই ৩৩ কেভি ফিডার স্ক্যাডা দ্বারা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হচ্ছে। ফলে ৪১টি সমিতির গ্রাহকরা চরম ক্ষুব্ধ। কোথা কোথাও সমিতির অফিস ভাঙচুরের চেষ্টা করেছে। একই সঙ্গে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায় করতে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাজেহাল হতে হচ্ছে। এ ছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর অফিসে হামলার আতঙ্কে সময় কাটছে অনেক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের। গ্রামের মানুষের ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটের চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন।

প্রচ- লোডশেডিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিদ্যুৎ বিভাগ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, শনিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। তবে এ বছর রমজানেও লোড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। অর্থাৎ এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে রমজানে সরবরাহ করা হবে বিদ্যুৎ।

এদিকে চরম লোডশেডিংয়ের মধ্যেও প্রতিমাসেই পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড নতুন নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে। গ্রামে কম বিদ্যুৎ সরবরাহের অভিযোগ পুরনো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আমাদের সময়কে বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন বিদ্যুৎ গ্রাহক বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত গুণগত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি। ওই কর্মকর্তারা বলেন, একদিকে বিদ্যমান গ্রাহকরা বিদ্যুৎ পাচ্ছে না, অন্যদিকে নতুন গ্রাহক যুক্ত হওয়ায় বিদ্যুৎ বিতরণ সঞ্চালন লাইন ও উপকেন্দ্রগুলো ওভারলোডেড হচ্ছে। ট্রান্সফরমার পুড়ে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সব পক্ষই।

ময়মনসিংহ জোনের জয়দেবপুর, কিশোরগঞ্জ; চট্টগ্রামের বারআউলিয়া; ঢাকা জোনের পলাশ, সাভার, ভুলতা, কবিরপুর; যশোরের চুয়াডাঙ্গা; সাতক্ষীরা ও ফরিদপুর গ্রিড ওভারলোডেড। এ ছাড়া খুলনার বাগেরহাট, রাজশাহী জোনের সিরাজগঞ্জ, রংপুর জোনের পূর্বসাদিপুর, সিলেটের আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমারগাঁও সিলেট গ্রিডও ওভারলোডেড। এ ছাড়া পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ পিজিসিবির দুটি সঞ্চালন লাইন ওভারলোডেড রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আশুগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ এবং ভেড়ামারা-যশোর-নোয়ারপাড়া-খুলনা পর্যন্ত ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন ওভারলোডেড।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএমদের রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় বিআরইবি কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে বিধায় লোডশেডিং বেড়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় প্রাপ্ত বিদ্যুৎ সমহারে বণ্টন করে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। লোডশেডিংয়ের কারণে যাতে অনাকাক্সিক্ষত কোনো ঘটনা ঘটতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোরও তাগিদ দেন তিনি। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দেন বাপবিবো চেয়ারম্যান।

বরিশাল প্রতিনিধি আল মামুন জানান, বিদ্যুতের সংকটে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সাড়ে ৩ কোটি মানুষ চরম দুর্ভোগে দিনযাপন করছেন। চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে পশ্চিম জোনের ২১টি জেলার প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ ভোগান্তির শিকার। পশ্চিম জোনে সান্ধ্য পিকআওয়ারে সাড়ে ১২শ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ৭শ মেগাওয়াট।

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় দেড়শ মেগাওয়াট চাহিদার স্থলে গত বৃহস্পতিবার থেকে ৭০-৭৫ মেগাওয়াটে হ্রাস করা হয়। এ বিদ্যুৎ শহর এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলে বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা নাজুক আকার ধারণ করেছে। চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে বরিশাল মহানগরীতে অন্তত ৩০টি ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে। গত বছরও প্রায় ২শ বিতরণ ট্রান্সফরমার পুড়ে গিয়েছিল।

বরিশালের একাধিক চেম্বার নেতার মতে, বিদ্যুতের অভাবে পশ্চিম জোনের ২১ জেলার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোয় এখন প্রতিদিন উৎপাদন ঘাটতি হচ্ছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার। চিকিৎসা পরিসেবার অবস্থা খুবই করুণ। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে রোগীদের জীবন অনেকটাই বিপন্ন। অনেক সময় জরুরি অস্ত্রোপচার পর্যন্ত ব্যাহত হচ্ছে। মহানগরগুলোয় পানি সরবরাহ পর্যন্ত বন্ধ থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

এ বিষয়ে ওজোপাডিকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বরিশাল) মো. ইখতিয়ার উদ্দিন জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ সঠিকভাবে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিছু কিছু এলাকায় সমস্যা হচ্ছে। অচিরেই সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি জানান। ওজোপাডিকোর প্রধান প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (কারিগরি) মো. হাসান আলী তালুকদার (খুলনা) মুঠোফোনে আমাদের সময়কে জানান, বরিশাল মহানগরীসহ পশ্চিম জোনের বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

রংপুর প্রতিনিধি নজরুল মৃধা জানান, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের বরাদ্দ তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসায় উত্তরাঞ্চলের ১৯টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৩০ লাখ গ্রাহক সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের দাবিতে চলছে বিক্ষোভ। দুসপ্তাহ আগে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ১৩২ কেভি বিদ্যুতের টাওয়ার বিধ্বস্ত হওয়া এবং বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ না পাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের।

রংপুরের পাগলাপীর ও শঠিবাড়িসহ বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের ১৯টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রয়েছে। প্রতিটি সমিতিতে বিদ্যুতের গড় চাহিদা ৫৫ থেকে ৬০ মেগাওয়াট। কিন্তু তারা সরবরাহ পাচ্ছে ১৮ থেকে ২০ মেগাওয়াট। ফলে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি সমিতির অধীনে দেড় হাজারের ওপর শিল্প-কারখানা রয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

রংপুর ও রাজশাহী বিসিক সূত্রে জানা যায়, লোডশেডিংয়ের কারণে প্রায় ২৫ হাজার শিল্প-কারখানায় উৎপাদন কমে গেছে।

পাঠকের মতামত

তারেকের পক্ষে নিহত তানজিমের বাড়ি যাচ্ছেন ৭ সাবেক সেনা কর্মকর্তা

কক্সবাজারে ছুরিকাঘাতে নিহত লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক ...

বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীরর সদস্যকে আটক করল বিজিবি

অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দিনাজপুরের বিরল সীমান্ত থেকে উপল কুমার দাস নামের ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ...