প্রকাশিত: ০২/১১/২০১৭ ৮:০৮ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১১:৩৭ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::

রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফরের পথে পথে ব্যাপক জনসমাগম হওয়ায় দলটির নেতারা এখন বেশ চাঙ্গা। গত ১৮ অক্টোবর লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার ঢাকায় ফেরার দিনও বিমানবন্দরে ব্যাপক শোডাউন করে বিএনপি।
দুটি ঘটনার মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।

বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনপূর্ব ও পরবর্তী সহিংস অনেক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক ধরপাকড় ও মামলার কারণে দলটির সর্বস্তরে এক ধরনের স্থবিরতা চলছিল। বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেওয়ার ব্যাপারেও সরকারের তরফ থেকে দৃশ্যমান বাধা ছিল। সম্প্রতি লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার ঢাকায় ফেরার দিন বিএনপি নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে জমায়েত হয়ে নির্বিঘ্নে শোডাউন করে। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে গুলশানের বাসায় পৌঁছতে খালেদা জিয়ার সময় লাগে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। বিএনপি নেতাদের মতে, বিমানবন্দর সড়কে জমায়েত এবং সর্বশেষ দলীয় নেত্রীর কক্সবাজার সফরে সাড়া ফেলার মধ্য দিয়ে এত দিনের স্থবিরতা কেটে গেছে। পাশাপাশি এ দুটি ঘটনায় নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে শঙ্কাও অনেকটা দূর হয়ে গেছে, যা আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে কাজে লাগবে।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের জন্য গত ২৮ অক্টোবর শনিবার ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে রাতে চট্টগ্রামে পৌঁছেন খালেদা জিয়া। তিনি রবিবার কক্সবাজারে পৌঁছেন এবং পরদিন উখিয়া ও টেকনাফ গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেন।
৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার সড়কপথেই তিনি ঢাকায় ফেরেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মতে, রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও চেয়ারপারসনের কক্সবাজার সফরে যেভাবে লাখ লাখ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে এসেছে তাতে বিএনপির চাঙ্গা হওয়া স্বাভাবিক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, যাত্রাপথের পুরো জনপদে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, সাধারণ জনগণের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

একইভাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রতিবেদককে বলেন, এ সফর বিএনপির নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করেছে। কারণ চেয়ারপারসনের যাত্রাপথে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে জনগণ বিএনপির সঙ্গে আছে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মতে, কক্সবাজার সফরের পর বিএনপি এখন থেকে চাঙ্গা হতেই থাকবে। কারণ জনগণ যে দলের সঙ্গে থাকে সেই দলই চাঙ্গা হয়। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে এ সরকারের ওপর দেশের মানুষের যে ক্ষোভ রয়েছে এ সফরের মধ্য দিয়ে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে মনে হয়।

কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান মনে করেন, কক্সবাজার সফরের মধ্য দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা উৎসাহিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অনেকের ধারণা ছিল, ওয়ান-ইলেভেন বোধ হয় বিএনপিকে খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু দেখা গেল, খালেদা জিয়ার সফরে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমেছে। ’ তাঁর মতে, গাড়িবহরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের পরও বিএনপির নেতাকর্মীরা ভয় পায়নি। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তারা সামনে এগিয়ে গেছে। ‘সাহসী দলনেত্রী থাকলে এমনই হয়’ বলেও মন্তব্য করেন চট্টগ্রামের অধিবাসী বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা।

জানা গেছে, প্রথম দিন ফেনীতে গাড়িবহরে হামলার ঘটনার সময় খালেদা জিয়া চালকের পেছনের আসনে বসা ছিলেন। কিন্তু হামলার ঘটনার পর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি চালকের পাশের আসনে অর্থাৎ সামনে বসেন। ঢাকায় ফেরা পর্যন্ত তিনি সামনেই বসে ছিলেন। বিএনপি শীর্ষ পর্যায়ের অন্তত তিনজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, মূলত নেতাকর্মীদের সাহস দেওয়ার পাশাপাশি নিজের নির্ভীক মানসিকতা স্পষ্ট করতেই খালেদা জিয়া সফরের বাদবাকি সময় সামনে বসেছেন। বিষয়টি সফরসঙ্গী সব নেতাকর্মীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেওয়া উপলক্ষে চার দিনের এ সফরের ইতিবাচক প্রভাব হয়েছে বহুমুখী। প্রথমত, খালেদা জিয়া প্রমাণ করেছেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে তিনি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। কারণ অনেকে মনে করত যে শারীরিকভাবে খালেদা জিয়া কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন; আন্দোলন-সংগ্রামে আগের মতো তিনি অবদান রাখতে পারছেন না। দ্বিতীয়ত, গত বেশ কয়েক বছরে বিএনপির বেশির ভাগ কর্মসূচিই পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এবারও বাধা দেওয়া হতে পারে—এমন শঙ্কা নিয়েও বিএনপি কক্সবাজারে যাওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং এতে সফলও হয়েছে। ফলে সামনের সরকারবিরোধী আন্দোলন হলে এই বিশ্বাস ও সাহস কাজে লাগবে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। তৃতীয়ত, মানবিক কর্মসূচি থাকার কারণে যাত্রাপথে কোনো তোরণ নির্মাণ এবং বাদ্য-বাজনা না নিয়ে আসার নির্দেশনা ছিল কেন্দ্রীয় বিএনপির। এর পরও পথে পথে নেতাকর্মীদের ঢলের সঙ্গে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সম্পৃক্ততা ছিল বলে মনে করে বিএনপি। চতুর্থত, যাওয়ার সময় প্রায় সাড়ে তিন শ কিলোমিটার পথে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা দেখেও বিএনপির শঙ্কা অনেকটা দূর হয়েছে। দলের কেউ কেউ একে সরকারের নমনীয় মনোভাব বলেও মনে করে।

চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে ঢাকায় বিএনপির সর্বশেষ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত বছরের ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনে। এর আগে ২০১৪ সালে এবং পরে চলতি বছরের ১ মে দলটির উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তবে রাজধানীতে প্রায় দেড় বছর ধরে দলটি বড় ধরনের জনসভা করার অনুমতি পায়নি। বিশেষ করে ৭ নভেম্বর (বিএনপি এই দিনটিকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করে) উপলক্ষে জনসভা করার অনুমতি বিএনপিকে বেশ কয়েক বছর ধরেই দেওয়া হচ্ছে না। গত বছর ৭ নভেম্বর উপলক্ষে বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা করার অনুমতি চাইলে শেষ দিন সকালে পুলিশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ওই সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। কিন্তু সেখানেও দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে ওই সমাবেশ শেষ করার নির্দেশনা থাকায় শেষ পর্যন্ত বিএনপি ওই সমাবেশ করেনি। এ বছর আবারও ৭ নভেম্বর উপলক্ষে জনসভা করার অনুমতি চাইবে বিএনপি। তবে শেষ পর্যন্ত ওই অনুমতি মিলবে কি না, তা নিয়ে দলটির মধ্যে সংশয় রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ৭ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি জনসভা করতে চায়। শিগগিরই এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতির জন্য আবেদন করা হবে। তিনি বলেন, ‘আশা করি, এবার অনুমতি পাওয়া যাবে। ’

পাঠকের মতামত

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কিত প্রস্তাব গৃহীত

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মালয়েশিয়া ও ফিনল্যান্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে ...

৯০ দিনের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে স্টারলিংক চালুর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চালুর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ...

জুলাই আন্দোলনে আহতদের পাশে থাকবে সেনাবাহিনী : সেনাপ্রধান

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-ছাত্রীদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার ও নৈশভোজ অনুষ্ঠানে কথা বলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ...