
উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। এ রায়কে কেন্দ্র করে পর্যটন শহর কক্সবাজারে যাতে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকান্ড না ঘটে, সেজন্য পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে মেস,আবাসিক হোটেল-মোটেল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক।
আর ৮ ফেব্রুয়ারির রায়কে কেন্দ্র করে কক্সবাজার বিএনপিতে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। রায়কে সামনে রেখে বেশিরভাগ নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেছেন।তবে বিএনপি নেতৃবৃন্দের দাবী পুলিশ বিএনপি কার্যালয় ঘিরে রাখায় গ্রেপ্তার আতংকে অফিসে যাচ্ছেন না নেতাকর্মীরা। এদিকে ৮ ফেব্রুয়ারির রায়কে সামনে রেখে জেলায় এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্তন ৫০ জনকে। শুধু রবিবার দিবাগত রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ২০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে রায়ের দিন বিএনপি নেতারা কোথায় থাকবেন সে ব্যাপারে কোন তথ্য জানা না গেলেও জানিয়েছেন রাজপথেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপি’র এক নেতা। তবে রায়ের দিন এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে কি-না এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যানবাহন মালিকরা।
অপরদিকে মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান বলেন,যদি ৮ ফেব্রুয়ারী কেউ কোন জায়গায় বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে কক্সবাজারের স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিনষ্ট করতে চাইলে তাদের আওয়ামী লীগ রাজপথে থেকে জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিহত করবে। তিনি আরও বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারী জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় দুর্নীতির দায়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে বা বিপক্ষে যেতে পারে। তাই ৮ ফেব্রুয়ারী জেলা সদর, পৌরসভা, সকল উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে সর্তক ভাবে বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে সবসময় শান্তিপূর্ণ দেখতে চাই।
এদিকে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়,খালেদা জিয়ার রায়ের তারিখ ঘোষণার দিন (২৫ জানুয়ারি) থেকেই শহরের শিবিরের মেসগুলোতে নজরদারি শুরু হয়েছে। এছাড়াও ফেইসবুকে বিভিন্ন পেইজে এবং গ্রুপে ৮ ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে কোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা হচ্ছে কি-না সেগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়,এছাড়া জামাত-শিবিরের নেতাকর্মীরা মেসগুলোতে জড়ো হয়ে সহিংসতা তৈরির চেষ্টা করতে পারেন এমন আভাসে থানা ভিত্তিক অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। থানা পুলিশ স্ব স্ব এলাকার মেসগুলোতে গিয়ে ভাড়াটিয়া ছাড়া অন্য কেউ থাকছেন কি-না তা নজরদারি করছে। এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে বিএনপি নেতাদের।
নজরদারির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে শহরের হোটেল-মোটেলগুলোতে অতিথির নাম-ঠিকানা লেখা, ছবি তোলা, এনআইডি, পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি, ফোন নম্বর রাখা ও ফোন দিয়ে নম্বর যাচাই করাসহ ৮টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হোটেলগুলো নির্দেশনা মাফিক কাজ করছে কি-না তা নজরদারি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভাড়াটিয়ার তথ্য অনুযায়ী বাড়িগুলোতে ভাড়াটিয়ারা থাকছেন কি-না সেটিও খেয়াল রাখা হচ্ছে।
এদিকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সুপার থানার ওসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- যেসব স্থানে আগে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, সেসব স্থান চিহ্নিত করা করে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা। থানাসহ পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়ানো, পুলিশের সব সিসি টিভি ক্যামেরা সচল রাখা, টহল বা অভিযানে পুলিশ সদস্যরা একা না গিয়ে একসঙ্গে টহল দেয়া। নির্দেশনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে ক্যামেরা রাখতে বলা হয়েছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তারা ছবি তুলে রাখতে পারেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহম্মদ আলী হোসেন জানান, ‘শুধু ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করেই নয়, যেকোনও সময় জেলায় কোনও ধরনের নাশকতা বরদাশত করা হবে না। এর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। পর্যটনের কারণে কক্সবাজার জেলা এমনিতেই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুটি যুক্ত হয়েছে। প্রতিদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে দেশি-বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ বাক্তিরা কক্সবাজার আসছেন। তাই এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় জেলা প্রশাসনসহ ও সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুত রেখেছি।
কক্সবাজার সদর-মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: ফরিদ বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর অবস্থা মোকাবেলার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। এছাড়াও পুলিশ সুপার মহোদয় আমাদের সার্বক্ষনিক দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।আমরা সেলক্ষ্যেই প্রস্তুত রয়েছি।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার ড. এইস এম ইকবাল হোসেন বলেন, পুলিশের প্রধান দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া। পুলিশ দৃঢ়তার সঙ্গে এ কাজ করে যাচ্ছে। যাতে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা থাকে সে জন্য কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ। তিনি আরও বলেন,৮ ফেব্রুয়ারি কোনো সহিংসতার আশঙ্কা করছি না, তবে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এদিন যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা রোধে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে কোনোভাবেই অবনতি না হয় সেজন্য পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে নির্দেশনা দেয়া আছে।
পাঠকের মতামত