
করোনার কারণে সারাদেশে তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদপন্থী ওসাদবিরোধীদের সব ধরনেরর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশে দাওয়াতি কাজে এসে আটকা পড়েছে চার শতাধিক বিদেশি মুসল্লি। এর মধ্যে সাদপন্থী তিন শতাধিক এবং সাদবিরোধী ৯৫ জন মুসল্লিকে রাখা হয়েছে কাকরাইল মসজিদ ও যাত্রাবাড়ির মদিনা মসজিদে। এছাড়া শুরা সদস্য, মুরব্বিসহ উভয় গ্রুপের প্রায় ৬ লাখ সদস্য নিজ-নিজ ঘর-বাড়িতে রয়েছেন। তাবলিগের সব ধরনের মুসল্লির গতিবিধি প্রশাসনের নজরদারিতে রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনার আগে উভয় গ্রুপের সদস্যদের কেউ এক চিল্লা, কেউ তিন চিল্লা দিতে গিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে সঙ্গে সব কার্যক্রম গুটিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন তারা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাবলিগের কার্যক্রমে তারা সক্রিয় হবেন বলেও জানা গেছে।
পুলিশি নজরদারিতে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রেখে এসব বিদেশিকে ঢাকায় আলাদাভাবে রাখা হয়েছে। কাঁচাবাজার, রান্নাবান্না, খাওয়া-দাওয়া চলছে নিজস্ব অর্থায়নে।
জানতে চাইলে সাদপন্থী শীর্ষ মুরব্বি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, ‘দেশব্যাপী মসজিদভিত্তিক কোনো কার্যক্রম নেই। এজতেমা নেই, চিল্লাও নেই। করোনার কারণে সবকিছুই বন্ধ।’
তাবলিগের সদস্যরা এখন কোথায় আছেন—জানতে চাইলে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, ‘সব সদস্য এখন বাড়িতে।’ তিনি বলেন, ‘তিন শতাধিক মুসল্লি দিল্লি গিয়েছিলেন, সেখান থেকে মাত্র ৫জন দেশে ফিরেছেন। তবে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। সবাই সুস্থ আছেন।’
সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘কাকরাইল মারকাজে আমাদের যে তিন শতাধিক বিদেশি রয়েছেন, তারা কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে। সরকারি নির্দেশনা মেনে নামাজ দোয়া আমল করছেন।’ বিদেশি মুসল্লিরা পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের প্রশাসনের জিম্মায় দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তারা রাজি হননি।’
পরিস্থিতির কারণে সাদবিরোধী দেওবন্দ-সমর্থিত গ্রুপটিরও কোনো কার্যক্রম নেই বাংলাদেশে। তাদেরও প্রায় তিন লাখ সদস্য বাসা-বাড়িতে রয়েছেন। এই গ্রুপের ৯৫ জন বিদেশি মুসল্লিকে রাখা হয়েছে যাত্রবাড়ি মদিনা মসজিদের মারকাজে। তাদের রান্নাবান্না ও দেখাশোনার জন্য রয়েছেন আরও ৭/৮ জন। খাওয়া-দাওয়ার ব্যয়ভারও বিদেশিদের। তাদের স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন মাঝে মাঝে এসে দেখে যায়।
বিদেশি মুসল্লিরা কেমন আছেন জানতে চাইলে এই গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় নেতা মুরব্বি মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ বলেন, ‘তারা সুস্থ আছেন। তবে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারছেন না বলে তারা উদ্বিগ্ন।’
তাদের বাজার, রান্নাবান্না কিভাবে হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার মাহমুদ বলেন, ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই সবকিছু করা হচ্ছে। তারা নিজেরা কী খাবেন, সেই মেন্যু নিজেরাই ঠিক করেন। সেই অনুযায়ী বাইরে থেকে বাজার করে নিয়ে আসা হয়।’
লকডাউন দীর্ঘমেয়াদি হলে কী হবে—জানতে চাইলে সাদপন্থী শীর্ষ চাইলে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম এবং সাদবিরোধী শীর্ষ নেতা শাহরিয়ার মাহমুদ প্রায় একই ধরনের কথা বলেন। তারা বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই বিদেশিদের এখানে থাকতে হবে। আর্থিক সমস্যা দেখা দিলে নিজেরাই অনুদান দিয়ে চালিয়ে নেবেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এটা নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সিদ্ধান্ত। আর তাবলিগের বাংলাদেশি সদস্যরাও নিজ নিজ বাড়িতে সতর্কতার সঙ্গে থাকবেন বলেও তারা জানান।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্মসচিব মো. নুরুল ইসলাম জানান, করোনা পরিস্থিতিতে তাবলিগ জামাতের কাউকে কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হচ্ছে না। এই বিষয়ে মাঠপর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। বিদেশি মুসল্লিসহ তাদের ওপর নজরদারি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পাঠকের মতামত