ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার
প্রকাশিত: ২৫/০৪/২০২৫ ১০:৫০ এএম

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৮৮১ সালে ২২ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৮৮১ সালে ২২ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল। এরপর বিভিন্ন সময় আরো ৭৮ শয্যা যুক্ত করা হয়। ১৯৯৭ সালে হাসপাতালটিকে ১০০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। অন্যান্য রোগের চিকিৎসা হলেও হাসপাতালটিতে নেই কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট। জেলার একটি মাত্র বেসরকারি হাসপাতালে ছয় শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এ কারণে আক্রান্তদের চিকিৎসা নিতে হলে যেতে হচ্ছে চট্টগ্রাম ও ঢাকায়।

স্থানীয়রা বলছেন, পর্যটন শহর কক্সবাজারে প্রায় ২৮ লাখ মানুষের বাস। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। জেলায় একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটিতে সাধারণ রোগের চিকিৎসা মিললেও ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে ছুটতে হয় কিডনি রোগীদের। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি বাড়তি খরচের বোঝা বইতে হচ্ছে। বিগত সময় সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতালে নেফ্রোলজি ও ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

রোগী ও স্বজনরা জানান, কক্সবাজারে বেসরকারি পর্যায়ে একটি মাত্র হাসপাতালে ছয় শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট থাকলেও সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এ কারণে চিকিৎসা নিতে হলে রোগীদের যেতে হয় অন্য জেলায়। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি বাড়ে খরচ।

এ বিষয়ে কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের সাবেক কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘জটিল এ রোগের চিকিৎসা জেলা শহরে নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়া দরকার। সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নিলে আক্রান্তদের দুর্ভোগ কম হবে।’

বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে টেকনাফ থেকে রোগী নিয়ে কক্সবাজারে এসেছেন নূর আহমদ। তিনি জানান, কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। রোগীর প্রতি সপ্তাহে দুইদিন ডায়ালাইসিস করতে হয়। ডায়ালাইসিস করতে প্রতিবার ৪ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ডায়ালাইসিস ব্যবস্থা সদর হাসপাতালে থাকলে চার ভাগের এক ভাগ খরচ লাগত।’

জেলার কিছু সচেতন নাগরিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। ২৬ এপ্রিল কক্সবাজার পৌরসভার হলরুমে সমাজ প্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, আইনজীবী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভায় কক্সবাজারে দ্রুত ডায়ালাইসিস সেন্টার বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন জাকির হোসেন। তিনি জানান, প্রতিদিন হাসপাতালে কিডনি সমস্যায় অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। এখানে একজন স্থায়ী কিডনি চিকিৎসক নেই, ডায়ালাইসিস সেন্টারও নেই।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক বলেন, ‘কিডনি রোগীদের ইউনিটটি চালু হলে ভালো হবে। এটি চালুর জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনেক কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছি। এখন ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের জন্য কাজ চলছে আশা করছি, দ্রুতই এটি চালু হবে।’

কিডনি রোগীদের উন্নত সেবা দিতে ২০২০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২৫৫ কোটি ২২ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে কিডনি ডায়ালাইসিস এবং নেফ্রোলজি ইউনিট স্থাপনের প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় অন্তত ২২টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট এবং ৪৪টি জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যার নেফ্রোলজি ও ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন করার কথা রয়েছে। ওই সময় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শেষ সময় ধরা হয় ২০২২ সাল। তবে চার বছর পেরিয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোগীদের বেঁচে থাকার স্থায়ী সমাধান কিডনি প্রতিস্থাপনে বারবার তাগিদ দিলেও সরকারি পর্যায়ে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। উন্নত দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনে ক্যাডাভেরিক পদ্ধতি প্রধান হলেও বাংলাদেশে লিভিং ডোনার (জীবিত মানুষ থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন) প্রক্রিয়ায় আগ্রহ বেশি। এতে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ রোগী প্রতিস্থাপনের সুযোগ পাচ্ছেন। ৯৮ শতাংশ রোগীর ভরসা ডায়ালাইসিস। তবে এ সেবা সরকারি হাসপাতালে ৬০০ টাকায় পাওয়া গেলও বেসরকারিতে ব্যয় হয় ৩-৪ হাজার টাকা। খরচ মেটাতে না পেরে অধিকাংশ রোগী থাকছেন চিকিৎসার বাইরে।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিংঞো বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সদর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেন্টার চালুর জন্য গণপূর্ত থেকে আমরা প্রক্রিয়া শেষ করেছি। এখন কাজ চলছে স্থাপনের। এটা চালু হলে কিডনি চিকিৎসক ও ডায়ালাইসিস সেন্টারের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী পদায়ন করা হবে।

পাঠকের মতামত

বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে চড়ে গিয়েছিলেন কক্সবাজারে, ফেরার পথে ট্রাকচাপায় মৃ,ত্যু

বন্ধুদের সঙ্গে জয়পুরহাট থেকে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন মো. মাছুম (৪৫)। ভ্রমণ শেষে চার বন্ধু মিলে দুটি ...