ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২০/০৪/২০২৫ ১২:২৮ পিএম

কক্সবাজার শহরের জেলগেইট এলাকা, উত্তরণ ও বাইপাস সড়ক বর্তমানে ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকেই এ এলাকায় চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ার পর কোনমতে প্রাণে বেঁচে ফেরা একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছিনতাইকারিদের অস্ত্রের মুখ থেকে ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছেন এক দম্পতি। তারা হলেন লুৎফুন্নেসা এবং তার স্বামী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ভুক্তভোগী লুৎফুন্নেসা বলেন, ‘আমি এবং আমার স্বামী রিকশায় ছিলাম। আমার স্বামীর কোলে আমার বাচ্চা ছিল তখন তেমন অন্ধকারও হয়নি। প্রায় সন্ধ্যা ছয়টা। এই সময় হঠাৎ করে মোটরসাইকেল আরোহী তিনজন যুবক রিক্সার পাশ দিয়ে যেতেই আমার ব্যাগটা জোরে টান দেয়। আমি হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। অস্ত্রের আঘাত করবে বলে, আমি রিকশা থেকে পড়ে যাওয়ার ভয়ে ব্যাগটা হাত থেকে ছেড়ে দিই। তারা কিছুদূর সামনে যেতেই উধাও হয়ে যায়। আশেপাশে নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নেই। এরকম জনসমাগম একটি রাস্তায় কিভাবে ছিনতাই হতে পারে। ছিনতাইকারীদের এত সাহস থাকবে আশা করিনি।

তিনি বলেন, ‘আমার বাচ্চাটা যদি পড়ে যেত রিক্সা থেকে তাহলে কি হত! আমার ব্যাগে আমার মোবাইল ছিল। এটিএম কার্ড ছিল এবং সাথে কিছু টাকা ছিল। আমার মনে হয় ওরা সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী। পরিকল্পনা করে উৎ পেতে থাকে ছিনতাই করার জন্য৷ এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর খুব বেশি অবনতি হয়েছে।’
লুৎফুন্নেসার স্বামী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ বাস টার্মিনাল এলাকায় সবসময় যানজট থাকে। তারা হয়তো আমাদেরকে অনেকক্ষণ ধরে ফলো করছিল। দুঃখজনক হলো আশেপাশে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। আমার স্ত্রী ব্যাগ ছেড়ে না দিলে হয়তো রিক্সাটা উল্টে পড়ে যেত। আমি মনে করি এরকম একটি পর্যটন শহরে বাস টার্মিনাল থেকে কলাতলী রোডটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়ক দিয়ে স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকরা ও চলাফেরা করে। কিন্তু এই রাস্তাটি সেই তখন থেকে দেখে আসছি অবহেলিত। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কে যদি এভাবে ছিনতাই হয় তাহলে আমরা কোথায় নিরাপদ?’

উত্তরণ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মামুনুল ইসলাম শাওন বলেন, ‘আমি সন্ধ্যায় বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ কয়েকজন ছিনতাইকারী পথরোধ করে। একজনের হাতে চাকু ছিল। প্রাণে বাঁচতেই মোবাইল আর টাকা দিয়ে দেই।’
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক ফারিয়া ইসলাম জানান, ‘পর্যটন শহরে এই ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম কোনোভাবেই শোভা পায় না। ছিনতাইকারীদের কারণে আতঙ্কিত হয়ে পর্যটক বিমুখ হয়ে পড়বে কক্সবাজার। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
স্থানীয় শিক্ষার্থী সালমান হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে কলেজে যাই। কিন্তু এখন আর সাহস হয় না। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরার সময় ভয় হয়, কোনো বিপদে পড়ে যাই কিনা ।’

স্থানীয়রা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই, নেই কোনো নিয়মিত পুলিশি টহলও। এতে ছিনতাইকারীরা সহজেই তাদের কার্যক্রম চালাতে পারছে। এ অবস্থায় দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

পাঠকের মতামত