উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩/০৮/২০২৫ ৮:২৮ এএম

আগামী ঈদে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে উৎসব পালন করবেন-এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও যে কোনো মূল্যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফেরাতে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ। এরই ধারাবাহিকতায় ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের আগে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ৩ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট-৩ দিন অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা নিজেও উপস্থিত থাকবেন।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাখাইনের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে। এর পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষের পথে। ফলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে তোড়জোড় থাকলেও এই উদ্যোগ কতটা আলোর মুখ দেখবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

গত রমজানে (১৪ মার্চ) রোহিঙ্গাদের এক সমাবেশে ড. ইউনূস বলেছিলেন, এই ঈদ না হোক, আগামী ঈদে রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশে ঈদ করতে পারবেন। উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে তার প্রত্যাশার কথায় স্বস্তি আসে অনেকের মাঝে। রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়া করি, সাম্মার বার যেন তোমরা নিজের বাড়িতে ঈদ করতে পারো।’

ড. ইউনূস আরও বলেছিলেন, ঈদে মানুষ আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করে। রোহিঙ্গাদের সেই সুযোগ নেই। তাই তাদের দেশে ফেরাতে হলে প্রয়োজনে সারা বিশ্বের সঙ্গেই লড়তে হবে। লাখো রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে আয়োজিত ওই ইফতার মাহফিলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, সেনাপ্রধানসহ দেশি-বিদেশি সংস্থার প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।

যে কোনো মূল্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে মরিয়া সরকার : সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল ও বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের মানুষের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ড. ইউনূস আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এজন্য তিনি নির্বাচনের সমান গুরুত্ব দিয়ে যে কোনো মূল্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে চান। এ উদ্দেশ্যেই কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য বর্তমান সরকার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার আশাবাদী, শিগগিরই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে সক্ষম হবে। মূলত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতেই কক্সবাজারে তিন দিনব্যাপী এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সম্মেলনের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে এ দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের বোঝা নামিয়ে দিতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ এককভাবে চাইলে প্রত্যাবাসন শুরু করতে পারবে না। তবে প্রধান উপদেষ্টা গত বছর জাতিসংঘ মহাসচিবসহ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন পরের ঈদে তারা ঘরে বা দেশে গিয়ে ঈদ করবেন।

সেটা বাস্তবায়নের জন্যই সরকার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি হিসাবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা বিষয়ে ৩ দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধির পাশাপাশি ২৫ আগস্ট সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টাও। কক্সবাজারের এই সম্মেলনকে তারা জাতিসংঘ অধিবেশনের ফলোআপ আয়োজন হিসাবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রত্যাবাস আরও কঠিন হচ্ছে : নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস যতই চেষ্টা করুন না কেন, আমি মনে করি তিনি পাঁচজন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবাসন করাতে পারবেন না। এরই মধ্যে সরকারের মেয়াদও শেষের দিকে। এছাড়া গত বছরই উলটো আরও এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, অন্যদিকে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য সাময়িকভাবে দখল করলেও বর্তমানে জান্তা সরকারের সেনাবাহিনী নিজেদের গোষ্ঠীগুলো সামলে আবারও আরাকান আর্মির ওপর আক্রমণ শুরু করেছে। এই পরিস্থিতি আরাকান আর্মি টিকিয়ে রাখতে পারবে না।

তিনি বলেন, ড. ইউনূস যদি জাতিসংঘ মহাসচিবকে বাংলাদেশে আনার পরিবর্তে মিয়ানমারে পাঠাতে পারতেন, তাহলে অন্তত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে রাজি করানোর চেষ্টা হতো। কিন্তু সেটাও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ গাজায় গণহত্যা চলছে, সেখানে জাতিসংঘের ভূমিকাই বিশ্ববাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। জাতিসংঘ কথায় আজ আর কেউ আস্থা রাখে না।

৩ দিনব্যাপী রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন : কক্সবাজারে রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ২৫ আগস্ট যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইউনূস। প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আমরা আশা করছি, ৪০টি দেশের প্রতিনিধি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের প্রতিনিধি অংশ নেবেন। রোহিঙ্গাদের কথাও তারা সরাসরি বলবে। তিনি জানান, ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে সবচেয়ে বড় সম্মেলন হবে, যেখানে ১৭০টি দেশ অংশ নেবে। এরপর কাতারের দোহাতেও আরেকটি বড় সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। ড. ইউনূসের এই পদক্ষেপে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন বিষয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ফেরানো এবং তাদের মানবিক অধিকার নিশ্চিত করা লক্ষ্য করা হয়েছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের আগস্টের মধ্যে দেড় বছরে নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা। এর ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত সাড়ে ১৩ লাখ। রোহিঙ্গা চাপের সঙ্গে নতুন করে আরও সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ।

পাঠকের মতামত

জাতিসংঘ রিপোর্টে শেখ হাসিনা গণহত্যাকারী প্রমাণিত – সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার ...

কক্সবাজার জেলার বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের  প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস আগামী ২৪-২৬ আগস্ট ২০২৫ তারিখে কক্সবাজার ...

সমীকরণে ‘লক্ষ্মী আসন’ উখিয়া-টেকনাফ, মূল লড়াইয়ে বিএনপি-জামায়াত

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা উখিয়া-টেকনাফের সংসদীয় আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইতে ...

সাধারণ মানুষ জানেই না পিআর কী, তারা শুধু ভোট দিতে চায় – উখিয়ায় বিএনপির সম্মেলনে শামীম

কক্সবাজারের উখিয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) উপজেলা শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশন উৎসবমুখর পরিবেশে ...