ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৫/০২/২০২৪ ৯:২৯ এএম

আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা (সিইও) মো. রাসেলকে কক্সবাজারের এক গ্রাহকের মামলায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন। তবে মামলার রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি গ্রেপ্তার হননি। বরং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে প্রকাশ্যে ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

ঘটনাটি এতদিন আড়ালে ছিল। এক বছর আগে সাজা হওয়ার ঘটনাটি ঠিক কী কারণে আড়ালে ছিল, এ নিয়ে নানা মহলে গুঞ্জন উঠেছে। বিস্মিত মামলার বাদী, আইনজীবীরা। এরই মধ্যে কারাগার থেকে বেরিয়ে পুনরায় ইভ্যালির কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দিয়েছেন রাসেল। তিনি ঢাকা সাভারের কান্দি কালিয়াপুর এলাকার আলি আহমদের সন্তান।

মামলার নথি বিশ্লেষণে দেখা যায়, চকরিয়া পৌরসভার নিজপানখালী এলাকার এম সোহেল মাহমুদ ২০২১ সালের ১৩ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি পাঁচটি মোটরসাইকেল কিনতে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা রাসেলকে অগ্রিম অর্ডার বাবদ ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেন। চুক্তিমতে, ৭ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে সোহেল মাহমুদের মোটরসাইকেলগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। তবে নির্ধারিত সময়ে মোটরসাইকেল বুঝিয়ে দিতে পারেনি ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে গ্রাহক সোহেল মাহমুদ ওই বছরের ২৯ আগস্ট রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নগদ টাকার পরিবর্তে সিটি ব্যাংক, ধানমন্ডি শাখার হিসাব নং-১৪৫২৮৮১০২৬০০১ এবং চেক নং- ২২৫২৮৭৪ মূলে ৬ লাখ ১০ হাজার টাকার একটি চেক দেন। ২৮ সেপ্টেম্বর বাকি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার আরও একটি চেক দেওয়া হয় রাসেলের পক্ষ থেকে।

চেক দুটি ইসলামী ব্যাংক চকরিয়া শাখায় জমা দিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই উল্লেখ করে ২০২১ সালের ১৯ ও ২৫ অক্টোবর প্রত্যাখ্যান করে ডিজঅনার স্লিপসহ ফেরত দেয়। এরপর ২৮ অক্টোবর সোহেল আইনজীবীর মাধ্যমে ইভ্যালির রাসেল বরাবরে লিগ্যাল নোটিস পাঠায়। নোটিসটি রাসেল গ্রহণ না করায় ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর ফেরত আসে। পরবর্তীতে সোহেল মাহমুদ ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, কক্সবাজারের আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন।

মামলাটি বিচারের জন্য কক্সবাজার জেলা দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হলে এসটি ১৯০৫/২০২২নং মামলা হিসেবে বালামভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি আসামি রাসেলের বিরুদ্ধে দি নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যাক্ট ১৮৮১-এর ১৩৮ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়। এরপর পাঁচজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যুগ্ম দায়রা জজ ১ম আদালত কক্সবাজারের বিচারক মাহমুদুল হাসান ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি রায় প্রদান করেন।

মামলার রায়ে বলা হয়েছে, আসামি মো. রাসেল দি নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যাক্ট ১৮৮১-এর ১৩৮ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। জরিমানা আদায় হলে চেকে উল্লিখিত টাকা বাদী পাবেন। বাদী তার টাকা আদায়সংক্রান্তে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ ধারায় আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

আদেশে আসামি রাসেলের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করতে বলা হয়। এ ছাড়া আসামি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ কিংবা পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হলে আটকের দিন থেকে সাজার মেয়াদ শুরু হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মামলার রায়ের অনুলিপি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কক্সবাজার এবং কক্সবাজারের পুলিশ সুপার বরাবর পাঠাতে বলা হয়।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী গোলাম ছরওয়ার বলেন, রায়-পরবর্তী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আসামির সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত এ মামলায় আসামি গ্রেপ্তার বা মামলায় জমিনও নেননি। কিন্তু আসামি প্রকাশ্যে ঘুরছে। বিষয়টি রহস্যজনক।

মামলার বাদী সোহেল মাহমুদ বলেন, মামলার পর রায়ও হলো। কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত আসামি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এদিকে টাকাও পাওয়া যাচ্ছে না।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহাফুজুল ইসলাম বলেন, রায়ের পর গ্রেপ্তারের পরোয়ানা নিয়মমতো অবশ্যই আদালত সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়েছে। সেখানে একজন পুলিশ কর্মকর্তার অধীনে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকবে। তিনি সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

ইভ্যালির রাসেলের বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার ওসি (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, রাসেল জামিনের পর আরও বেশ কয়েকটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানার নথি আসে। যেগুলো পর্যালোচনা করে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সারা দেশে প্রায় তিনশরও বেশি মামলা আছে তার বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

একাধিক সূত্র বলছে, রাসেলের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গ্রাহকের দায়েরকৃত ২ হাজার ৬১টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাবাসও করেছেন। সম্প্রতি ২৮ মাস জেলখেটে জামিনে বেরিয়ে পুনরায় ইভ্যালির কার্যক্রম চালু করেছেন। এরই মধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ভোক্তা অধিকারের মাধ্যমে ১৫০ জনের ১৫ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন।

২০২৩ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ইভ্যালির বিরুদ্ধে ১১ হাজার ৯১টি অভিযোগ পড়ে। এসব অভিযোগের মধ্যে নিষ্পপ্তি হয়েছে ৪ হাজার ৪৯৫টি। এখনও ৬ হাজার ৫৯৬টি অভিযোগ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। সুত্র. প্রবা

পাঠকের মতামত

রামুর ফতেখাঁরকুলে উপ-নির্বাচনে প্রতীক পেয়ে প্রচারনায় ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী

রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের উপ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধি ৩ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্ধ দেয়া ...

টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর মনিরুজ্জামানের সম্পদ জব্দ দুদকের মামলা

টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মো. মনিরুজ্জামানের সম্পদ জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ স্পেশাল ...