কক্সবাজার মহকুমা থেকে জেলায় পরিণত হয় ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ। এরশাদ সরকারের প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের আওতায় কক্সবাজারকে চট্টগ্রাম জেলার আওতাধীন একটি মহকুমা থেকে জেলায় রূপান্তর করা করা হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে কক্সবাজার সে সময় ‘বি’ শ্রেণির জেলা হলেও পেকুয়া পৃথক একটি উপজেলা হওয়ার পর কক্সবাজার ‘এ’ শ্রেণির জেলায় রূপান্তর হয়।
কক্সবাজার জেলা হওয়ার পর থেকে জেলার সর্বোচ্চ নির্বাহী কর্মকর্তার এই পদে এখন পর্যন্ত ২৪ জন জেলা প্রশাসক কক্সবাজারে দায়িত্ব পালন করেছেন। কক্সবাজারের ২৫ তম জেলা প্রশাসক হিসাবে গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) যোগদান করেছেন মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন। ২৪ জন সাবেক জেলা প্রশাসকের মধ্যে ২ জন মন্ত্রীপরিষদ সচিব, তাঁদের একজন বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা এবং একজন জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন।
১৯৮৪ সালের ১ মার্চ কক্সবাজারের প্রথম জেলা প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ পান কে. এইচ ফজলুর রহমান। তিনি ১৯৮৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে কে. এইচ ফজলুর রহমান সরকারের যুগ্মসচিব হিসাবে শরনার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) পদেও কক্সবাজারে দায়িত্ব পালন করেছেন।
দ্বিতীয় ডিসি হিসাবে মোশাররফ হোসাইন ১৯৮৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারী থেকে ১৯৮৭ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃতীয় ডিসি হিসাবে এম.এ কামাল ১৯৮৭ সালের ৯ এপ্রিল থেকে ১৯৯০ সালের ৭ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। চতুর্থ ডিসি হিসাবে এম.সি বর্ম্মন ১৯৯০ সালের ৭ জুলাই থেকে ১৯৯১ সালের ১৮ মে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। পঞ্চম ডিসি হিসাবে দাউদ উজ জামান ১৯৯১ সালের ১৮ মে থেকে ১৯৯২ সালের ১৩ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ষষ্ঠ ডিসি হিসাবে মোঃ এনামুল কবির ১৯৯২ সালের ১৩ আগস্ট থেকে ১৯৯৫ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। সপ্তম ডিসি হিসাবে শেখ মোহাব্বত উল্লাহ ১৯৯৫ সালের ১৫ মার্চ থেকে ১৯৯৬ সালের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। অষ্টম ডিসি হিসাবে আলী ইমাম মজুমদার ১৯৯৬ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে ১৯৯৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। আলী ইমাম মজুমদার সরকারের সর্বোচ্চ আমলার পদ ১৮তম মন্ত্রীপরিষদ সচিব ছিলেন এবং বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
কক্সবাজারের নবম ডিসি হিসাবে মোঃ নুর হোসাইন ১৯৯৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৯ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। দশম ডিসি হিসাবে পুলিন বিহারী দেব ১৯৯৯ সালের ৫ অক্টোবর থেকে ২০০১ সালের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ১১তম ডিসি হিসাবে মোশারফ হোসাইন ভূঁইয়া ২০০১ সালের ১৬ আগস্ট থেকে ২০০১ সালের ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। মোশারফ হোসাইন ভূঁইয়া সরকারের ২০তম মন্ত্রীপরিষদ সচিব ছিলেন।
কক্সবাজারের ১২তম ডিসি হিসাবে মোঃ মতিয়ার রহমান ২০০১ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০০৩ সালের ২৪ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৩তম ডিসি হিসাবে সাইফুদ্দিন আহমদ ২০০৩ সালের ৩ আগস্ট থেকে ২০০৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৪তম ডিসি হিসাবে মোঃ হাবিবুর রহমান ২০০৪ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০০৬ সালের ২ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৫তম ডিসি হিসাবে মোঃ আমিনুল ইসলাম ২০০৬ সালের ২ আগস্ট থেকে ২০০৭ সালের ১৩ মে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৬তম ডিসি হিসাবে সাজ্জাদুল হাসান ২০০৭ সালের ১৩ মে থেকে ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। সাজ্জাদুল হাসান সরকারের সচিব এবং নেত্রকোনার জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন।
১৭তম ডিসি হিসাবে মোঃ মনজুর আলম ভূইয়া ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট থেকে ২০০৯ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৮তম ডিসি হিসাবে মোঃ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ ২০০৯ সালের ২০ এপ্রিল থেকে ২০১১ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯তম ডিসি হিসাবে মোহাম্মদ জয়নুল বারী ২০১১ সালের ১৪ জুলাই ২০১২ সালের ১ অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০তম ডিসি হিসাবে মোঃ রুহুল আমিন ২০১২ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ২১তম ডিসি হিসাবে মোঃ আলী হোসেন ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী থেকে ২০১৮ সালের ৬ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সরকারের সচিব ছিলেন।
কক্সবাজারের ২২তম ডিসি হিসাবে মোঃ কামাল হোসেন ২০১৮ সালের ৪ মার্চ যোগদান করে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারী পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন। কক্সবাজারের ২৩ তম ডিসি হিসাবে মো: মামুনুর রশীদ ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারী দায়িত্ব নিয়ে ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। কক্সবাজারের ২৪ তম ডিসি হিসাবে মুহাম্মদ শাহীন ইমরান ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর দায়িত্ব নিয়ে ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ২২ আগস্ট থেকে নতুন ডিসি মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন গত বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর যোগদান করা পর্যন্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ছিলেন।
কক্সবাজারের ২৫ তম ডিসি মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বিসিএস (প্রশাসন) ২৪ তম ব্যাচের একজন মেধাবী কর্মকর্তা। এর আগে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব ছিলেন।
কক্সবাজারে ডিসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করা ২৪ জন কর্মকর্তার মধ্যে তৃতীয় ডিসি এম. এ কামাল সর্বোচ্চ সময় ৩ বছর ২ মাস ২৮ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যদিকে, সর্বনিম্ম সময় হিসাবে ১১তম ডিসি মোশারফ হোসাইন ভূঁইয়া মাত্র ৩ মাস ৮ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৯ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার উপসচিব হোসনা আফরোজ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে কক্সবাজারের নতুন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন (১৫৫২১) সহ একই পদমর্যাদার ২৫ জন বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তাকে দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। অপরদিকে, সদ্য বদলী হওয়া জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানকে জয়ীতা ফাউন্ডেশনের পরিচালক হিসাবে পদায়ন করা হয়েছে
পাঠকের মতামত