

কেউ ক্রিকেট খেলে করছেন সেঞ্চুরি, কেউ বিয়ে করে করছেন সেঞ্চুরি, আবার কেউ ধর্ষণের মত জঘন্য পাপ করেও যেখানে সেঞ্চুরি করেছেন, সেখানে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের উত্তর পুকুরিয়ার বাসিন্দা আব্দুল আলম কবর খননের মত মহৎ কাজে করেছেন সেঞ্চুরি।
গতকাল মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে রাজাপালংয়ের সাবেক ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন মুন্সির খবর খনন করতে কথা হয় আব্দুল আলমের সাথে।
আব্দুল আলম পেশায় একজন কৃষক। বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেই চলে তার সংসার। তার বয়স যখন ১৩ বছর, তখন থেকে এলাকার কেউ মারা গেলে, তার বাবার সাথে স্বেচ্ছায় কবর খুঁড়তে যেতেন তিনি। তবে একার পক্ষে যেহেতু সম্ভব হতো না। তাই এলাকার ১/২ জনকেও তার সাথে ডেকে নিতেন। শুধু এলাকায় নয়, এলাকার বাইরে গিয়েও একাধিক কবর খনন করেছেন আব্দুল আলম। এ পর্যন্ত ১২০টি মত কবর খনন করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
আব্দুল আলম কক্সবাজার বার্তাকে জানান, ১৩ বছর বয়স থেকে বাবার সাথে কবর খনন শুরু করেন তিনি। তার বাবা ছৈয়দুর রহমান পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। মৃত্যুর আগে ছৈয়দুর রহমান তাকে বলেছিলেন তার বাাবা মারা যাওয়ার পরেও যাতে আব্দুল আলম কবর খনন অব্যাহত রাখে। বাবার কথা রাখতে আজ পর্যন্ত কবর খুঁড়ে যাচ্ছেন আব্দুল আলম।
নিজ এলাকা উত্তর পুকুরিয়াসহ উখিয়ার বিভিন্ন এলাকার কবস্থানে এ পর্যন্ত ১২০ টি মত কবর খুঁড়েছেন তিনি। আব্দুল আলমের কবর খনন শুরু হয় তার পিতার হাত ধরে। তখন তার পিতা ছৈয়দুর রহমান ও একই এলাকার আব্দু শুক্কুর সহ তারা তিনজন মিলে কবর খনন করতো। তার পিতা ছৈয়দুর রহমান মারা যাওয়ার পর আব্দু শুক্কুরকে নিয়ে কবর খননের কাজ চালিয়ে গেছে। পরে আব্দু শুক্কুর মারা গেলে সহযোগী হারা হয়ে যায় আব্দুল আলম । পরবর্তীতে একই এলাকার মোহাম্মদ ইসমাইল ও মফিদুল হক সেচ্ছায় তার সাথে কবর খননের কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আব্দুল আলম তারা দুজনকে কবর খননের কাজে যুক্ত করেন এবং তাদেরকে শিখান কবর খননের কাজ।
মোহাম্মদ ইসমাইল ও মফিদুল হক জানান, আমরা দুজন দীর্ঘদিন ধরে আব্দুল আলমের সাথে কবর খননের কাজে সেচ্ছায় যুক্ত হয়েছি। এতে কোনো পারিশ্রমিক নাই জেনেও আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা দুজন আব্দুলের আলমের সাথে ১৫ টি কবর খনন করেছি। আল্লাহ চাইলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই কাজ করে যাব আমরা।
কবর খননে সাধারণত কোদাল, শাবল, কুড়াল, লম্বা দা, ফাওড়া/বেলচা, কম্পাস, ঝুড়ি( বাঁশ বেত বা প্লাস্টিকের), গাবলা, এসব সরঞ্জাম প্রয়োজন। এসব সরঞ্জাম তারা তিনজনের কাছে না থাকায় প্রতিবেশীদের কাছ থেকে নিয়ে কবর খনন করতে হয় বলে জানান আব্দুল আলম। উপজেলা কৃষি অফিস কর্তৃক এসব সরঞ্জাম তারা তিনজনকে দেয়া হলে, তারা এই কবর খননের কাজ আরও সহজ ভাবে করতে পারবে বলে জানান আব্দুল আলম।
পাঠকের মতামত