হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া নিউজ ডটকম
প্রকাশিত: ২৮/০৪/২০২৫ ৬:০২ পিএম

কক্সবাজারের উখিয়ায় গত এক মাসে ছয়টি নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একের পর এক সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। গত ৬ এপ্রিল (রোববার) সকালে উখিয়ার কুতুপালং ৯নং ওয়ার্ডের পশ্চিমপাড়ায় জমি সংক্রান্ত পুরনো বিরোধের জেরে দুপক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় উভয় পক্ষ। মুহূর্তেই রক্তাক্ত সংঘর্ষে প্রাণ হারান স্থানীয় মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে আব্দুল মান্নান (৩৭) ও মান্নানের বোন শাহিনা বেগম (৪০)। গুরুতর আহত হন আরেক বোন রওশন আরা বেগম, যিনি ৮ এপ্রিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহত চারজনই ছিলেন আপন চাচাতো ও জেঠাতো ভাই-বোন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর শনিবার (২৬ এপ্রিল) ভোররাতে র‍্যাব-১৫ অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—কুতুপালং এলাকার নাজির হোসেনের ছেলে আবুল ফজল বাবুল (৩৭) ও তার দুই ভাই মাহমুদুল হক (৩০) ও রায়হান (১৯)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‍্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক (ল অ্যান্ড মিডিয়া) আ. আমিন ফারুক।
রক্তাক্ত সংঘর্ষের রেশ না কাটতেই, ২০ এপ্রিল উখিয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মোহাম্মদ ইকবাল দোকানের ভাড়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে শরিফ নামের এক ব্যক্তির হামলায় তিনি নিহত হন। পুলিশ এই ঘটনায় অভিযুক্ত শরিফকে গ্রেপ্তার করেছে এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে, গত ২৭ এপ্রিল (রবিবার) উখিয়ার আরও একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে বিয়ে করা স্ত্রী শোভা আক্তার সাদিয়াকে (২৫) হত্যা করে তার স্বামী আকবর হোসেন শান্ত পালিয়ে যান। আকবর, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ও উখিয়ায় একটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রীকে আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে কন্যা সন্তানসহ সেখান থেকে পালিয়ে যান আকবর। পরে চিকিৎসক সাদিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সাদিয়ার পিতা শফিক অভিযোগ করেছেন, আকবর পরকীয়ায় জড়িয়ে সাদিয়াকে নির্যাতন করতেন এবং হত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ জানান, আকবর এলাকায় উগ্রপ্রকৃতির মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং পরকীয়ার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ আকবরের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেছে এবং তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, সম্পদ কখনোই সম্পর্কের চেয়ে বড় হতে পারে না। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সংঘর্ষের পথ না বেছে আইনগত ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রতি জোর দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহনশীলতা বাড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাধারণ মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে। রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর সাহেদুল ইসলাম চৌধুরী রোমান বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে যে নির্মম ঘটনা ঘটেছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। এলাকার শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্বশীল ভূমিকা অপরিহার্য। উখিয়ার একের পর এক খুনের ঘটনায় পুরো জনপদজুড়ে নেমে এসেছে আতঙ্ক ও শোকের ছায়া। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামাজিক বন্ধন, নৈতিকতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে গেলে সমাজে এমন ভয়াবহ পরিণতি এড়ানো সম্ভব নয়। এখনই প্রয়োজন সম্মিলিত সচেতনতা, সহনশীলতা এবং আইনের প্রতি আস্থা।

পাঠকের মতামত

বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে চড়ে গিয়েছিলেন কক্সবাজারে, ফেরার পথে ট্রাকচাপায় মৃ,ত্যু

বন্ধুদের সঙ্গে জয়পুরহাট থেকে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন মো. মাছুম (৪৫)। ভ্রমণ শেষে চার বন্ধু মিলে দুটি ...