

উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বাইরে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের অবৈধ ভাড়া বাসার এক বিশাল নেটওয়ার্ক। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও জমির মালিকদের সরাসরি সহযোগিতায় শত শত রোহিঙ্গা পরিবার এখন কুতুপালং, বালুখালী, তেলখোলা থেকে বাইলাখালী পর্যন্ত বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। অর্থের বিনিময়ে ক্যাম্পের বাইরে এই অবৈধ বসতি স্থাপনের ফলে এলাকায় মাদক কারবার, অপহরণ এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছাড়া অন্য কোথাও থাকার অনুমতি নেই। ভাড়া দেয়া বা নেয়া- দুটোই সম্পূর্ণ বেআইনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগেই নির্দেশ দেয়া আছে রোহিঙ্গাদের বাসা ভাড়া পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নিতে। তথ্যানুযায়ী, বাসার আকার ও অবস্থানভেদে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ৫০ থেকে এক লাখ টাকার একটি মোটা অঙ্কের জামানত। উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গা ভাড়া বাসার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এখানে মেম্বার হেলাল উদ্দিন প্রায় ২০০ পরিবারের কাছে বাসা ভাড়া দিয়েছেন। তার বোনজামাই কবির আহমদ দিয়েছেন আরও শতাধিক পরিবারকে। এ ছাড়াও ইকবাল ৩০ পরিবারকে, জানে আলম ৮ পরিবারকে, আবদুর রহিম ২ পরিবারকে, নুরুল হাকিম ৩ পরিবারকে এবং রুবেল সওদাগর ৫ পরিবারকে বাসা ভাড়া দিয়েছেন। এসব টিনশেড ও আধা-পাকা ঘরের ভাড়া ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
বালুখালী বাজার এলাকা, মরা গাছতলা এবং আশপাশের অঞ্চলেও দুই শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার অবৈধভাবে বসবাস করছে। বাজারপাড়ায় দিদার, বেদার উদ্দিন ও আজিজুল হক জুলু ২০টির বেশি রোহিঙ্গা পরিবারকে ভাড়া দেন। মরা গাছতলায় মনিয়ারের বাড়িতে ২০টি, আনোয়ারের বসতভিটায় ৩০টি, ছগির আহমদের বাড়িতে ১৫টি, আবদুর রহমান ও লুৎফুর নাহারের বাড়িতে যথাক্রমে ২০ ও ৪৫টি পরিবার বাস করে। এ ছাড়া, ফরিদ আলমের বসতভিটায় ৩৪টি, ছৈয়দ আলম, সামশুল আলম, নুরুল আমিনসহ আরও অনেকের ভাড়া ঘরে রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে। পাহাড়ি মোছারখোলা, তেলখোলা, গর্জনখোলা ও বাইলাখালী পর্যন্তও রোহিঙ্গা বসতি ছড়িয়ে পড়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, তেলখোলা, বাইলাখালী এলাকায় কমপক্ষে ১৫টি রোহিঙ্গা পরিবার নিজেদের ঘরও তৈরি করে ফেলেছে। জামতলী, থাইংখালী ও পশ্চিম বালুখালীতেও একই চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয়দের দাবি, এসব ভাড়া বাসা এখন রোহিঙ্গা অপরাধী চক্র, ইয়াবা ব্যবসায়ী ও অপহরণকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গারা ভাড়া বাসায় থাকে। এতে এলাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি ভয়াবহভাবে বাড়ছে। স্থানীয়রা সব সময় আতঙ্কে থাকছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হোসেন চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। কোথায় রোহিঙ্গারা ভাড়া থাকে তার তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কঠোর তদারকির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আরআরআরসি’র সঙ্গে সমন্বয় করে খুব দ্রুত যৌথ অভিযান শুরু করা হবে।

পাঠকের মতামত