
আনছার হোসেন, কক্সবাজার
আর ক’দিন বাদেই খুশির ঈদ। এবারের ঈদের ছুটিটাও যেন ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ছুটি মিলেছে টানা ৯ দিন। আশা করা হচ্ছে, এই ছুটির ফাঁদে দেশে যখন সবকিছু বন্ধ হয়ে থাকবে, ঠিক ওই সময়ে জমজমাট হয়ে উঠবে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার। ঈদের ছুটি কাটাতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে আসবেন মানুষ। তবে বাধ সেধেছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা (এসএসসি)। খুশির পাশাপাশি শঙ্কাও কাছ পর্যটন ব্যবসায়ীদের মাঝে, এসএসসি পরীক্ষার জন্য যদি পর্যটক সমাগম যদি কম হয়, তাহলে তো সব প্রস্তুতিই বৃথা যাবে।
আনন্দ আর শংকার মাঝেই কক্সবাজারে চলছে পর্যটকদের বরণ করার প্রস্তুতি। হোটেল-মোটেল, রেস্তোঁরাগুলোতে চলছে সংস্কার কাজ। বিপণী বিতানগুলোতে চলছে পর্যটকদের পছন্দনীয় পণ্য তোলার কাজ। এ যেন এক জমজমাট প্রস্তুতি। ঈদের আগেই কক্সবাজার শহরের তারকা মানের হোটেলগুলোতে শতভাগ অগ্রিম বুকিং হয়ে আছে। তবে এই আগাম বুকিং মাত্র প্রথম দুইদিনের জন্য। পরের দিনগুলোর জন্য তেমন কোন সাড়া নেই।
অন্যদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ সমুদ্রস্নানের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে সমুদ্র সৈকতে দায়িত্বরত লাইফ গার্ড সদস্যরাও।
যে কোনো ছুটিতে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় প্রথমেই থাকে কক্সবাজার। এবারও তার নিশ্চয় ব্যতিক্রম হচ্ছে না। একদিকে বিশাল সমুদ্র, লোনাজল, অবারিত ঊর্মিমালা আর অন্যদিকে পাহাড়ের সৌন্দর্য কক্সবাজারকে করে তুলেছে অপরূপ এক সৌন্দর্যের নগরীতে। তার সাথে আছে দীর্ঘ এক মেরিন ড্রাইভ, যার একপাশে পাহাড় আর অন্যপাশে সাগর। পর্যটকদের জন্য চোখ জুড়ানো এক সৌন্দর্য্য। এছাড়াও আছে মহেশখালীর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান আদিনাথ মন্দির, যেখানে আছে শিবলিঙ্গ, আছে ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক। মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ তো আছেই। আর পুরো জেলাজুড়ে রয়েছে পরিবেশবান্ধব ইকো-রিসোর্ট।
এসবের টানে সারাদেশ থেকে ঈদের ছুটিতে প্রতিবছরই লাখ লাখ মানুষ ছুটে আসেন কক্সবাজারে। ছুটির দিনগুলোতে লাখো পর্যটককে ভরপুর থাকে জেলা শহরসহ প্রতিটা পর্যটন স্পট।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, পর্যটকদের বরণে কক্সবাজার প্রস্তুত। তাদের কথা ভেবেই সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। শেষ সময়ে সাজসজ্জার কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে, পর্যটকদের আগমনে কক্সবাজারের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
যদিও পুরো রমজানজুড়ে কক্সবাজারের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউস গুলো প্রায় পর্যটক শূন্য। কিছু অমুসলিম পর্যটকদের এই সময়ে দেখা গেলেও তাদের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, আবাসিক হোটেল কোন সমস্যা নয়, সমস্যা শুধু একটি জায়গায়, রমজানে কক্সবাজার শহরের প্রায় প্রতিটি রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় পর্যটকরা ইচ্ছা থাকলেও কক্সবাজারে আসেন না। রেস্টুরেন্ট খোলা থাকলে এই সময়েও পর্যটকদের সরব উপস্থিতি থাকতো।
তারকা হোটেল সী-গালের ব্যবস্থাপক এনায়েত উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, ঈদের পরের দুইদিন পর্যন্ত তাদের হোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোর জন্য বুকিং আসছে।
হোটেল কক্স-টুডে’র ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, রমজান মাসে পর্যটক কম থাকায় হোটেল সংস্কারের কাজ চলছে। যাতে ঈদে পর্যটকদের সুন্দর পরিবেশে বরণ করা যায়। তিনি জানান, তাদের হোটেলেও অগ্রিম বুকিং চলছে।
অন্যদিকে লাখ লাখ পর্যটক যখন কক্সবাজারে গিজগিজ করে তখন অধিকাংশ পর্যটকই সমুদ্রের লোনাজলে গোসলে নামেন। প্রায় সময়ই গোসলে নেমে দুর্ঘটনা ঘটে। কখনও কখনও সাগরের ঢেউয়ে পর্যটকরা ভেসে যান।
এবার সেই দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে সমুদ্র সৈকতে দায়িত্বরত ‘সী সেফ লাইফ গার্ড’। এই সংস্থাটির সিনিয়র লাইফ গার্ড জয়নাল আবেদীন ভূট্টো সাংবাদিকদের জানান, এবারও ঈদের ছুটিতে প্রচুর পর্যটক আসবেন কক্সবাজারে। পর্যটকরা যদি সমুদ্রে নামেন তার আগে তাদের লাইফ গার্ডের নির্দেশনা মেনে চলা উচিত।
তিনি মনে করেন, লাইফ গার্ডের নির্দেশনা মেনে সমুদ্রে নামলে দুর্ঘটনা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এবারের ঈদে কক্সবাজার শহর ছাড়াও জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক, মেরিন ড্রাইভ, রামুর বৌদ্ধ বিহারগুলোতে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তারাও পর্যটকদের সাদর সম্ভাষণ জানাতে প্রস্তুত হয়ে আছে।
পাঠকের মতামত